ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক এবং শ্যাম বেনেগাল

প্রকাশিত: ১২:৪৮, ১১ এপ্রিল ২০১৯

বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক এবং শ্যাম বেনেগাল

আসছে বছরটি একাধিক কারণে আমাদের কাছে অন্যরকম তাৎপর্যপূর্ণ। এরমধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বের, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন। তার মানে বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে এখন তাঁর বয়স হতো নিরানব্বই। পৃথিবীর মানচিত্রে যত দেশে স্বাধীনতা এসেছে এর বেশিরভাগ অর্জন সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা সত্যই মহানয়কের। বলা যায় তাঁর নাম এবং আমাদের দেশ একে অপরের পরিপূরক। এমন পর্বতসম মানুষটির জন্মশতবার্ষিকী বলে কথা। এই বাংলার জলবায়ু থেকে শুরু করে মনুষ্য- সকলেরই আন্তরিক দায়বদ্ধতা বলে কথা। সেই দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে এই মহীরুহের জীবনী নিয়ে নির্মিত হতে যাচ্ছে বায়োপিক চলচ্চিত্র। গেল বছরের মাঝামাঝি সময়ে জানা যায় এই খবর। চলচ্চিত্রের মূল আকর্ষণ দুটো, এক পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম অবিসংবাদিত রাজনৈতিক নেতার জীবনী, দুই চলচ্চিত্রের পরিচালক! তখনই নিশ্চিত হওয়া গেছে বলিউডের কিংবদন্তি পরিচালক শ্যাম বেনেগাল জাতির জনকের বায়োপিক নির্মাণ করবেন। বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি জানান রোগা চেহারার একজন বাংলাদেশী অভিনেতাকে তিনি খুঁজছেন। এই খবর ছিল ৭ অক্টোবর ২০১৮ সালের কথা। এর মধ্যে সময় পেরিয়েছে প্রায় অর্ধ বছর। তাহলে ঘোষণার পর এই ছয় মাস তিনি কি করলেন? তার হাতে তো অন্য কাজও ছিল না? শেষ ২০১১ সালে ৫৪তম ন্যাশনাল ফিল্ম ফেয়ার এ্যাওয়ার্ড জয়ী সিনেমা ‘ওয়েল ডান আব্বা’ করার পর ক্যামেরার লেন্সের পেছনে চোখ রাখেননি, কেন রাখেননি? কি করেছেন এই দীর্ঘ সময়, তবে কি বয়সের ভারে ক্যামেরা ধরতে ভুলে গিয়েছিলেন? এমন একাধিক প্রশ্ন- তার সম্পর্কে এখন এক রকম ‘বার্নিং ইস্যু’-ই বলা যেতে পারে। বছর খানেক আগে আনন্দবাজার পত্রিকার সঙ্গে এক আলাপচারিতায় তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, অদূর ভবিষ্যতে কোন প্রজেক্টে কি হাত দেবেন তিনি? উত্তরে তিনি বলেছিলেনÑ ‘করতে তো চাই। কথাগুলো স্ক্রিপ্টও আমার কাছে রয়েছে। কিন্তু প্রযোজক কই? যারা প্রযোজনা করতে আসেন, তাঁরাই আমার ছবিতে কাজ করতে চান। আর যাদের কাছে আমি দরবার করতে যাই, তারা বলেন, আপনার বিষয়টা খুব ভাল। কিন্তু আপনি বরং অমুক বিষয়টা নিয়ে বানান...’ হাসিমুখেই বললেন শ্যাম বেনেগাল। এ কথাতেই স্পষ্ট চলচ্চিত্র নিয়ে তিনি কতটা স্বকীয়। কাজ তাঁকে করতেই হবে বিষয়টা এমন নয়! এই বর্ষীয়ানের কাছে। নিজের সৃজনশীল চিন্তার কাছে কারও কারও চমকপ্রদ প্রস্তাব যর্থাথই তার কাছে অবিবেচ্য। হবেনই বা না কেন! তিনি যে শ্যাম বেনেগাল। যার প্রথম সিনেমা ‘অঙ্কুর’ দিয়েই নিজের জাত চিনিয়েছেন। অনন্ত নাগ, শাবানা আজমী অভিনীত এই সিনেমা মুক্তিপায় ১৯৭৪ সালে। মনে রাখার বিষয় হলে এই সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে এই দুই শক্তিশালী অভিনয় শিল্পীর। প্রথম সিনেমায় শ্যাম বাজিমাত করেন। জিতে নেন সে বছর সেরা ফিচার ফিল্ম এ্যাওয়ার্ড। এরপর একে একে নির্মাণ করেন ‘নিশান্থ’ ‘মন্থন’ ‘ভূমিকা; দ্য রোল’ ‘জুনুন’ ‘আরোহন’ ‘নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস; দ্য ফরগটেন হিরো’ ‘ওয়েল ডান আব্বার’ মতো সিনেমা। সবগুলোই এ্যাকাডেমিক এ্যাওয়ার্ড জয়ী চলচ্চিত্র। এছাড়া তাঁর ‘চরণদাশ চোর’ ‘কন্দুরা’ ‘কলিযুগ’ ‘মান্দি’ ‘ত্রিকাল’ সুস্মমান’ ওয়েলকাম টু সাজনপুর’ প্রভৃতি সিনেমা। প্রায় সব সিনেমায় নিজস্ব মুন্সিয়ানার ছাপ বলিউড তথা চলচ্চিত্র দুনিয়ায় আলাদাভাবে নির্ণিত। পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ, দাদাসাহেব ফালকে, এএনআর ন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ডসহ আরও উল্লেখযোগ্য পুরস্কার স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন। এমন একজন বর্ষীয়ান নির্মাতা আমাদের জাতির পিতার বায়োপিক নির্মাণের দায়িত্ব নিয়েছেন আপাত বিবেচনায় এটা নিঃসন্দেহে গৌরবের। আসছে বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বায়োপিকের কাজ শেষ হবে। সময় যে খুব বেশি নেই, এটা শ্যাম বেনেগাল নিজেও অনুভব করেন। যে কারণে গত ২ এপ্রিল ঢাকায় এসেছেন এখানকার চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলতে এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করতে। প্রধানমন্ত্রীকে তিনি জানিয়েছেন ‘এটা আমার জীবনের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং কাজ।’ তাঁর এই ভ্রমণে মূলবার্তা ছিল, চলচ্চিত্রটি নির্মাণ হবে বাংলা ভাষায় এবং ভারত বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনায়। বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে একজন রোগা ধরনের কোন বাংলাদেশী অভিনেতাকে তিনি কাস্ট করবেন। কারণ জীবনের বেশিরভাগ সময় বঙ্গবন্ধু রোগা পাতলা গড়নের মানুষ ছিলেন। তবে কে বা কাকে নেয়া হবে তা এখনও ঠিক হয়নি। তিনি আরও বলেছেন, যেহেতু এটা বিশাল ক্যানভাসের কাজ, তাই সবকিছু গুছিয়ে একটানা কাজ করব। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমাদের দেশে একাধিক গান, কবিতা, মঞ্চ নাকট, সিনেমা নির্মিত হয়েছে। এগুলো দেশের গ-ি পেরিয়ে বাইরের দেশে কখনও আলোচনায় আসেনি। যেমনটা বলিউডের অনেক বায়োপিক বিশ্বব্যাপী আলোড়িত হয়। এক্ষেত্রে আমরা মানে বাঙালীরা এবার আশায় বুক বাঁধতেই পারি বঙ্গবন্ধুর জীবনী সারা বিশ্বের ক্যানভাসে তুলে ধরতে। তিনি তো কেবল বাঙালীর মুক্তিকামী মানুষের নেতা ছিলেন না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা বিশ্বের আজ এবং আগামীর মুক্তিকামী মানুষের নেতা।
×