ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যানেল সংস্কারের নামে লুটপাট

প্রকাশিত: ১২:৩৬, ১১ এপ্রিল ২০১৯

ক্যানেল সংস্কারের নামে লুটপাট

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ কেপিআই-১ এর আওতায় দেশের সর্ব বৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের সেচ প্রদানের কমান্ড এলাকা কিশোরীগঞ্জ উপজেলায় ক্যানেল সংস্কারের নামে লাখ লাখ টাকা হরিলুটের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে ক্যানেল সংস্কার না করে সেচ প্রদান করায় পানির চাপে এস সেভেন্টি ক্যানেলের বাঁধ (পাড়) বিধস্ত হওয়ায় উপজেলার নিতাই ইউনিয়নের মুশরত পানিয়ালপুকুর গ্রামের ৫০ কৃষক বোরো, ভুট্টা ও গম আবাদে সেচ হতে বঞ্চিত হয়। এতে ৫০ কৃষকের প্রায় ২০ লাখ টাকা ক্ষতিসাধিত হয় যা কৃষকদের হয়রানি করা হয়। এ জন্য কৃষককরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সৈয়দপুর ডিভিশনের কিশোরীগঞ্জ উপজেলার দায়িত্বরত উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমানকে দায়ী করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তার বিচার দাবি করে। জানা যায়, চলতি খরিপ-১ মৌসুমে তিস্তা ব্যারাজ থেকে নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলায় ২৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সেচ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে সেচ কার্যক্রম চালু করা হয়। এর মধ্যে কিশোরীগঞ্জ উপজেলায় ৫ হাজার হেক্টর, ডিমলা উপজেলা ৫ হাজার হেক্টর, জলঢাকা উপজেলায় ৮ হাজার হেক্টর ও সদরে ৭ হাজার হেক্টর, সৈয়দপুর উপজেলায় ২ হাজার হেক্টর, রংপুর জেলার গঙ্গাচরা উপজেলায় ৩ হাজার হেক্টর ও দিনাজপুর জেলার খানসামা এবং চিরিরবন্দর উপজেলায় ১ হাজার ৫০০ হেক্টর। বুধবার কিশোরীগঞ্জ এলাকার কৃষকদের অভিযোগে জানা যায়, চলতি রবি ও খরিপ-১ মৌসুমে দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প সেচ কার্যক্রম গত ২৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হলেও কিশোরীগঞ্জ উপজেলার কৃষকরা বিভিন্ন ক্যানেলের মাধ্যমে সেচ পায় ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ হতে। কিশোরীগঞ্জ উপজেলার কৃষকরা জানায় সেচ প্রদানের জন্য প্রতি বছর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সৈয়দপুর ডিবিশনের পক্ষে সেচ ক্যানেলগুলো লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে সংস্কার করে থাকে। কিন্তু চলতি বছর তারা কোন সেচ ক্যানেল সংস্কার করেছে এমন চিত্র কৃষকরা দেখতে পায়নি। অভিযোগ মতে কিশোরীগঞ্জ উপজেলায় গত বছর এস সেভেন্টি সেচ ক্যানেলটি ২৩ লাখ ও চলতি বছর সাড়ে চার লাখ টাকা ও এস ওয়ান বি সেচ ক্যানেল এবং টি ওয়ান বি ক্যানেল দুইটি দুই লাখ করে চার লাখ টাকায় এবার সংস্কার দেখানো হয়। এ অবস্থায় গত ১৪ মার্চ এস সেভেন্টি ক্যানেলের নিতাই ইউনিয়নের মুশরত পানিয়াল পুকুর গ্রামের পানির চাপে ক্যনেলের ২০ ফুট বিধ্বস্ত হয়। এসে ওই ক্যানেলে সেচ প্রদান বন্ধ করে দেয়া হয়। ওই এলাকার কৃষক আবুল হোসেন, সিরাজুল ইসলাম জহির উদ্দিন মোশাররফ হোসেন ও রুহুল আমিনসহ একাধিক কৃষক জানায়, আমরা বিধ্বস্ত ক্যানেলটি দ্রুত মেরামত করে সেচ কার্যক্রম চালু করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের সৈয়দপুর ডিভিশনের কিশোরীগঞ্জ উপজেলায় দায়িত্বরত উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমানকে বার বার তাগাদা প্রদান করি। কিন্তু তিনি তার ইচ্ছেমতো গত ৭ দিন আগে ওই বিধ্বস্ত ক্যানেলটি কোন রকমে মাটি দিয়ে মেরামত করে। এতে সময় মতো সেচ না পেয়ে এলাকার ৫০ কৃষকের জমির ২০ লাখ টাকা ক্ষতিসাধিত হয়। কৃষকরা জানায় তারা এ ঘটনায় রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে। এদিকে উপজেলার এলাকাবাসীর অভিযোগ সরকারের পক্ষে এই উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে ধাইজান নদীর ২৮ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার পুনঃখনন করা হচ্ছে। সেখানে অনিয়ম করা হচ্ছে বলে। এলাকাবাসীর অভিযোগ নদী পুনঃখননের ওই কাজের তদারকিতে রয়েছে উক্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান। নিতাই ইউনিয়নের বেলতলি গ্রামের কৃষক আখতারুজ্জামান দুলু মিয়া অভিযোগ করে জানায় এস সেভেন্টি সেচ ক্যানেলের পাড়সহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি অবৈধভাবে দখল করে সেখানে কিছু প্রভাবশালী ২৫টি বসতঘর ও স্কুল তৈরি করেছে। বিষয়টি আমি উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমানকে অবগত করি। কিন্তু পড়ে জানতে পারি এ ঘটনার সঙ্গেও তার আঁতাত রয়েছে। ফলে উল্টো মিথ্যে মামলায় পুলিশ দিয়ে আমাকে জেলে পাঠায় ৩ মার্চ। আমি ৭ দিন পর জামিনে ছাড়া পাই। তিনি এই অনিয়ম ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিচার দাবি করে সুষ্ঠু তদন্ত চেয়েছে। এ বিষয়ে উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমানের সঙ্গে কথা বলা হলে তিনি জনকণ্ঠের এই প্রতিনিধিকে বলেন তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সঠিক নয়। এস সেভেন্টি ক্যানেলটি প্রতি বছরের মতো এবারও সংস্কার করা হয়েছে। রাতের আঁধারে কে বা কারা ক্যানেলের পাড় ছিদ্র করে পানি নেয়ার চেষ্টার সময় ওই বাঁধটি বিধ্বস্ত হয়, যা ঘটনার তিন মধ্যে মেরামত করে দেয়া হয়।
×