ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মডেল শহর ॥ বনেদি পুরান ঢাকাকে বানানো হচ্ছে

প্রকাশিত: ১১:১৬, ১১ এপ্রিল ২০১৯

মডেল শহর ॥ বনেদি পুরান ঢাকাকে বানানো হচ্ছে

মশিউর রহমান খান ॥ পুরান ঢাকাকে সাত সেক্টরে ভাগ করে নতুন শহরে রূপান্তর করতে চায় সরকার। নির্ধারিত সাত স্থানকে মডেল ধরে নগর পুনঃউন্নয়নের (আরবান রি-ডেভেলপমেন্ট) মাধ্যমে পুরান সব ভবন ভেঙ্গে নতুন ভবন নির্মাণ করে দেবে সরকার। স্থানীয়দের নির্ধারিত জমিতে সার্বিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে পুরান ঢাকাবাসীকে উন্নত জীবন যাপনের নিশ্চয়তা দিতে চায় সরকার। এলাকাগুলো হচ্ছে পুরান ঢাকার ইসলামবাগ, চকবাজার, মৌলভীবাজার, বংশাল, হাজারীবাগ, কামরাঙ্গীরচর ও লালবাগ। এসব এলাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করে মডেল টাউন গড়ে তোলা হবে। পর্যায়ক্রমে পুরান ঢাকাকেই এর আওতাভুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) মাধ্যমে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করে উন্নত বিশ্বের আদলে শত শত বছরের বনেদি পুরান ঢাকাকে নতুন মডেল শহর বানাতে চাইছে সরকার। পুনঃউন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে রাজউক ইতোমধ্যে একটি খসড়া নীতিমালাও তৈরি করেছে। সার্বিক দিক বিবেচনায় এনে এলাকাবাসীর সঙ্গে আলোচনা ও সভা সমাবেশ করে চূড়ান্ত যাচাই বাছাই শেষে খসড়া নীতিমালা চূড়ান্ত করা হবে। প্রকল্প এলাকায় নির্দিষ্ট জমিতে প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে এসব এলাকাকে মডেল হিসেবে তৈরি করা হবে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করে সফলতা পেলে এর আদলেই গোটা পুরান ঢাকার সকল পুরান ও ছোটবড় ভবন ভেঙ্গে আধুনিক সুযোগ-সুবিধার শহর করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। রাজউক সূত্র জানায়, সম্প্রতি চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকা-ের পর ২৫ ফেব্রুয়ারি রাজউক বংশাল ও হাজারীবাগের ট্যানারি এলাকাসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় নগর পুনঃউন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের জন্য একটি অফিস আদেশ জারি করে। আদেশে আরবান রি-ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প গ্রহণের জন্য সম্ভাব্য স্থান নির্ধারণের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সব সদস্য ও সংশ্লিষ্ট অন্যদের সমন্বয়ে একটি টিম পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করে। কমিটি সরেজমিনে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত, স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণ, ডিটেইল্ডস এরিয়া প্ল্যান (২০১৬-২০৩৫) প্রকল্পের সার্ভে ডাটাবেজের ভিত্তিতে কমিটি সম্ভাব্য সাতটি প্রকল্প এলাকা চিহ্নিত করে। এর মধ্যে প্রথম এলাকা ইসলামবাগের প্রায় ১৪ দশমিক ৯৪ একর জমি, দ্বিতীয় এলাকা চকবাজারে প্রায় এক দশমিক ৪৭৪ একর জমি, তৃতীয় এলাকা মৌলভীবাজারে শূন্য দশমিক ৬০ একর জমি, চতুর্থ এলাকা বংশালে প্রায় ১২ দশমিক ৭১ একর জমি, পঞ্চম এলাকা হাজারীবাগে প্রায় ১১১ শূন্য দশমিক তিন একর জমি, ৬ষ্ঠ এলাকা কামরাঙ্গীরচরে প্রায় ৩৩ দশমিক ৭৬৩ একর জমি ও সপ্তম এলাকা হিসেবে লালবাগে প্রায় ৩২ দশমিক ৭২ একর জমিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা যেতে পারে বলে সুপারিশ করে। রাজউক সূত্র জানায়, এসব সম্ভাব্য স্থান নির্ধারণ করতে ও প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কমিটি দশটি সুপারিশ করেছে। এগুলো হচ্ছে- ১. সম্ভাব্য সাতটি প্রকল্প এলাকার সীমানা চূড়ান্তকরণের জন্য এবং উক্ত এলাকাসমূহে নগর পুনঃউন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের জন্য বিস্তারিতভাবে ভৌত ও আর্থ-সামাজিক জরিপ, পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা, পরিবহনগত ও সামাজিক প্রভাব সমীক্ষার সমন্বয়ে পূর্ণাঙ্গ ফিজিবিলিটি স্টাডি সম্পাদন করতে হবে। এলাকার বাসিন্দা বা জীবিকা নির্বাহকারী জনসাধারণসহ সব স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা (পিআরএ সেশন) আয়োজন করে সেই মোতাবেক প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করতে হবে। ২. নগর পুনঃউন্নয়ন (আরবান রি-ডেভেলপমেন্ট) প্রকল্প গ্রহণ বিষয়ক একটি খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করে চূড়ান্তকরণ করা, ৩. প্রকল্পভুক্ত এলাকাসমূহে ঐতিহ্যগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাদি সংরক্ষণ করতে হবে এবং স্থানীয় বৈশিষ্ট্যাবলী বজায় রেখে নগর পুনঃউন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে, ৪. নগর পুনঃউন্নয়ন (আরবান রি-ডেভেলপমেন্ট) প্রকল্পে প্রকল্প এলাকাভুক্ত সাধারণ জনগণ যেন মূল সুবিধাভোগী হন তা সর্বাগ্রে নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া প্রকল্পভুক্ত এলাকায় প্রস্তাবিত নাগরিক সুবিধাদি উক্ত এলাকায় বসবাসকারী জনসাধারণের চাহিদার নিরিখে এবং নগর পরিকল্পনার যথাযথ মানদ-ের ভিত্তিতে সংস্থান করতে হবে, ৫. ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, ওয়াসা, তিতাস, ডেসকোসহ সকল সরকারী দফতর বা সংস্থা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয়পূর্বক রাজউক কর্তৃক নগর পুনঃউন্নয়ন (আরবান রি-ডেভেলপমেন্ট) প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নিতে হবে, ৬. নগর পুনঃউন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বিদ্যমান প্রধান সড়কের সঙ্গে প্রকল্প এলাকার সুষ্ঠু যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ৭. পুরান ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, যানজট নিরসন এবং ভবিষ্যত নগর পুনঃউন্নয়ন প্রকল্পসমূহকে কার্যকর করার লক্ষ্যে গোটা পুরান ঢাকার প্রধান প্রধান সড়ক চিহ্নিত করে ট্রাফিক প্রভাব সমীক্ষা সম্পাদনপূর্বক বিদ্যমান সড়ক সম্প্রসারণ, নতুন সড়ক নির্মাণ ও ট্রাফিক চাহিদা ব্যবস্থাপনা ( ট্রাফিক ডিমান্ড ম্যানেজমেন্ট) ইত্যাদি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে, ৮. নাজিমউদ্দীন রোড ও বকশীবাজার-চকবাজার রোড পুরান ঢাকার অন্যতম দুটি প্রবেশদ্বার। রাস্তা দুটিকে ৬০ ফুট প্রশস্ত করার প্রস্তাবনা আছে। নগর পুনঃউন্নয়ন (আরবান রি-ডেভেলপমেন্ট) প্রকল্প ফলপ্রসূকরণের স্বার্থে ড্যাপের প্রস্তাব অনুযায়ী রাস্তা দুটিকে জরুরী ভিত্তিতে প্রশস্ত করার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে, ৯. প্রকল্পভুক্ত এলাকায় যে সব ভবন অপেক্ষাকৃত নতুন নির্মিত ও কাঠামোগতভাবে ঝুঁকিমুক্ত, সেসব ভবন যথাযথভাবে যাচাই সাপেক্ষে প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে আনুপাতিকহারে ওসব ভবন মালিককে বেটারমেন্ট ফি দিতে হবে। এ সংক্রান্ত বিস্তারিত বিধি-বিধান নগর পুনঃউন্নয়ন বিধিমালা বা নীতিমালায় সংযোজন করা, ১০. নগর পুনঃউন্নয়ন প্রকল্প চলাকালীন প্রকল্পভুক্ত জনগণের অন্তর্বর্তীকালীন আবাসন সুবিধা প্রদানকল্পে প্রকল্প এলাকার সন্নিকটে সুবিধাজনক স্থান চিহ্নিত করে অন্তর্বর্তীকালীন আবাসন ব্যবস্থা প্রকল্পের আওতায়ই নিশ্চিত করা। এ বিষয়ে রাজউকের নগর পরিকল্পনাবিদ ও ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) প্রকল্পের পরিচালক আশরাফুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, পুরান ঢাকাকে পুনঃনগর উন্নয়নের জন্য আমরা নাগরিকদের সঙ্গে আলোচনা ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে যাচাই-বাছাই করতে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করছি। একমাত্র এই পদ্ধতি অবলম্বন করে সিঙ্গাপুর, উত্তর কোরিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের অল্প জমিতে নগর উন্নয়ন পরিকল্পনা কাজে লাগিয়ে আজ সুন্দর নগরী গড়তে সফল হয়েছে। তাই দেশে প্রথমবারের মতো এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য রাজউক কাজ করছে। এজন্য স্থানীয়দের সঙ্গে এ সংক্রান্ত নিয়মিত সভা সমাবেশ সেমিনার করা হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে রাজউকের কমিটি পুরান ঢাকার সাতটি স্থানে কিছু সমস্যা চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে পুরান ও জরাজীর্ণ ভবন, ফুটপাথবিহীন ও সংকীর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থা, অপরিকল্পিত আবাসন সমস্যা, অপর্যাপ্ত আলো বাতাস ও অতি ঘিঞ্জি পরিবেশ। প্রয়োজন অনুযায়ী পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা। এছাড়া পুরান ঢাকার বিদ্যুত ব্যবস্থা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এসব এলাকায় অস্বাস্থ্যকর পানি সরবরাহ ব্যবস্থা অপর্যাপ্ত ও অস্বাস্থ্যকর। অনেক কম খোলা স্থান ও গাছপালাবিহীন পরিবেশ বিরাজ করছে। ভূমিকম্প ও অগ্নিদুর্ঘটনার জন্য অতিমাত্রায় ঝুঁকিযুক্ত। উচ্চ ঘনবসতিপূর্ণ, দুর্যোগপ্রবণ এসব দূষণযুক্ত পরিবেশ ও নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে চায় সরকার। প্রকল্প সূত্র জানায়, প্রকল্প এলাকায় পুরান, জরাজীর্ণ ভবনসমূহ অপসারণ করে তাতে নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে। যার ফলে ভূমির উন্নয়নের মাধ্যমে পর্যাপ্ত খোলা জায়গা তৈরি করে সেখানে পার্ক, খেলার মাঠ, প্রশস্ত রাস্তাসহ অন্যান্য আবশ্যিক নাগরিক সুবিধাদি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। তবে এর মাধ্যমে পুরান ঢাকার হেরিটেজ ভবনগুলো সংরক্ষণ করার সুপারিশ করেছে কমিটি। রাজউক সূত্র জানায়, পুরান ঢাকার জন্য গৃহীত কমিটির মতে পুনঃনগর উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে ভারতের মুম্বাই, গুজরাট, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানসহ সিঙ্গাপুর হচ্ছে অন্যতম মডেল। এ প্রকল্পের মাধ্যমে জনবসতি ও ঘিঞ্জিপূর্ণ এলাকার পুনঃউন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে। তাই এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা গেলে পুরো পুরান ঢাকার চেহারাই পাল্টে দেয়া সম্ভব। প্রকল্পের মাধ্যমে একাধিক ভূমি মালিকের জমি একত্রিত করে বহুতল ভবন করে আনুপাতিকভাবে বণ্টন করা হবে। এর ফলে ওই এলাকার সড়ক প্রশস্ত করা, পর্যাপ্ত অগ্নি নিরাপত্তা তৈরি করা, ভবনের উন্মুক্ত জায়গাসহ আধুনিক আবাসিক এলাকার সকল নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, নগর পুনঃউন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে পুরান ঢাকার অপরিকল্পিত, ঘনবসতিপূর্ণ, অপ্রতুল নাগরিক সুবিধাদি সম্পন্ন এলাকাকে বসবাসকারীদের চাহিদা ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে সকল নাগরিক সুবিধা সম্পন্ন ও একটি পরিকল্পিত এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এর মাধ্যমে মোট ভূমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করবে রাজউক। সূত্র জানায়, পুরান ঢাকার স্থানীয় ভূমি মালিক ও হাজারীবাগের পুরান ট্যানারি মালিকরা রাজউকের এই প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগের সঙ্গে ঐকমত্য প্রকাশ করে রাজউককে চিঠি দিয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এসব প্রকল্পের ভূমি মালিকদের উদ্বুদ্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে। স্থানীয়দের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করছে রাজউক। একইসঙ্গে প্রকল্পের সঠিক বাস্তবায়নে নগর বিশেষজ্ঞদের মতামতকে বিশেষ গুরুত্ব দেবে রাজউক। মূলত পুরান ঢাকার বর্তমান চেহারা সম্পূর্ণ বদলে দিতেই এই সেক্টরভিত্তিক উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণে মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, পুরান ঢাকাবাসী বর্তমানে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় জীবনযাপন করছেন। এ অবস্থা থেকে অবশ্যই উত্তরণ জরুরী। তবে উন্নয়ন করতে গেলে প্রথমেই এসব এলাকায় বসবাসকারীদের জন্য নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থাও করতে হবে। অন্যথায় তারা কোথায় থাকবে এই অনিশ্চয়তার কারণে নাগরিকরা পুনঃনগর উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বাধার সৃষ্টি করতে পারে। তাই সবার সঙ্গে আলোচনা করে ও তাদের সরিয়ে অন্যত্র থাকার ব্যবস্থা করেই এই প্রকল্প বাস্তবায়নে মনোযোগ দিতে হবে। তবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাস করা পুরান ঢাকাবাসীর সার্বিক দিক বিবেচনা করে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা অতি জরুরী। রাজউক চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারী পুরান ঢাকাবাসীকে আমরা ঝুঁকিমুক্ত বসবাসের সুযোগ দিতে চাই। এজন্য সরকারের নির্দেশে আমরা আরবান রি-ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের মাধ্যমে পুরান ঢাকার সাতটি সম্ভাব্য স্থানে আমরা প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ঘিঞ্জি ও অপরিসর রাস্তার এসব এলাকায় আধুনিক সুবিধাযুক্ত সকল নাগরিক সেবা প্রদানে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এজন্য চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকা-ের পর আমরা গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের নির্দেশে রাজউক ও নগর বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে পুনঃনগর উন্নয়ন সমীক্ষা করতে ৫ সদস্যের একটি কমিটি করে দিয়েছি। নির্দিষ্ট নীতিমালার আলোকে কমিটির সব সুপারিশ বাস্তবায়ন করে পুরান ঢাকাকে বসবাসের উপযোগী করে এসব স্থানে ভবন নির্মাণ করা হবে। তিনি এ জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন। এ বিষয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, পুরান ঢাকাকে নগর পুনঃউন্নয়ন করে নাগরিকদের সুন্দর জীবনের স্বাদ দিতে চাই। এ জন্য সরকার পুরান ঢাকার সম্ভাব্য সাতটি স্থানকে সাত সেক্টরে ভাগ করে জাপান, সিঙ্গাপুর, কোরিয়া ও ভারতের মুম্বাই ও গুজরাটের আদলে কম জমিতে অধিক নাগরিক সেবা প্রদানের জন্য পুনঃনগর উন্নয়নে কাজ করবে। এলাকাগুলো হচ্ছে ইসলামবাগ, চকবাজার, মৌলভীবাজার, বংশাল, হাজারীবাগ, কামরাঙ্গীরচর ও লালাবাগ। এসব প্রকল্পে পার্ক, খেলার মাঠ, জলাধার, খোলা স্থান, আধুনিক ও নাগরিকদের জন্য সকল প্রকার সুবিধা থাকবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে রাজউক অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করছে। চুড়িহাট্টার ভয়াবহ আগুনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুরান ঢাকাবাসীর জীবনমান উন্নয়নে কাজ করতে বিশেষ নির্দেশ দিয়েছেন। তাই আমরা এই নির্দেশ বাস্তবায়নে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছি। কমিটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে রি-ডেভেলপমেন্টের লক্ষ্যে একটি খসড়া নীতিমালাও তৈরি করেছে। এছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কমিটি সরেজমিনে এলাকা পরিদর্শন করে প্রকল্প বাস্তবায়নে কমিটি ১০ দফা সুপারিশ করেছে। এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে যাচাই-বাছাই শেষে নগর বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে ও স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনার পর প্রকল্পের চূড়ান্ত কাজ শুরু করা হবে। পুরান ঢাকাবাসীর জীবনমান উন্নয়ন করতেই প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করা অতি জরুরী হয়ে পড়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে তিনি এলাকাবাসীর সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেন।
×