ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জাহাজ রফতানি

প্রকাশিত: ০৯:২০, ১১ এপ্রিল ২০১৯

জাহাজ রফতানি

জাহাজ নির্মাণ ও রফতানিতে বাংলাদেশের বিপুল আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ কারখানাগুলো সর্বোচ্চ দশ হাজার টন পণ্য ধারণক্ষমতার জাহাজ নির্মাণে সক্ষম। তবে বৈশ্বিক বাজারে এই ধারণক্ষমতার জাহাজগুলোকে সাধারণত ছোট আকারের জাহাজ হিসেবে ধরা হয়। ছোট আকারের উচ্চ প্রযুক্তির বিশেষায়িত জাহাজের রফতানি মূল্য অনেক বেশি। তাই বিশেষায়িত জাহাজ রফতানির বাজারে নিজেদের অংশীদায়িত্ব বাড়াতে চায় বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাতারা। এসব জাহাজ রফতানিতে মূল্য সংযোজন বেশি। অন্তত দশটি জাহাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান যদি রফতানিতে যুক্ত হয় তাহলে বছরে এই খাতে দুই থেকে চার বিলিয়ন ডলার বা দুই শ’ থেকে চার শ’ কোটি ডলার রফতানি আয় সম্ভব। প্রায় এগারো বছর আগে সাধারণ পণ্যবাহী জাহাজ নির্মাণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে জাহাজ রফতানি খাতের যাত্রা শুরু হয়েছিল। ২০১২ সালে বৈশ্বিক মন্দার পর এ খাতে উত্থান-পতনের কারণে দেশীয় জাহাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সাধারণ পণ্যবাহী জাহাজ রফতানির উত্থান-পতনের বাজারে ঝুঁকি নিতে চায় না এ দেশীয় নির্মাতারা। তাই তারা সম্ভাবনাময় স্থিতিশীল রফতানির বাজার ধরতেই বেশি আগ্রহী বলে বিশেষায়িত জাহাজ নির্মাণে ঝুঁকেছে। এমনিতেই সমুদ্রকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকা-ে জোর দিচ্ছে বিশ্বের উপকূলীয় দেশগুলো। সমুদ্র থেকে মৎস্য ও খনিজ সম্পদ আহরণ, সামুদ্রিক নবায়নযোগ্য শক্তি, সামুদ্রিক পর্যটন, সমুদ্র নিরাপত্তা ও গবেষণা ঘিরে বাড়ছে এসব কর্মকা-। এ জন্য দরকার উচ্চ প্রযুক্তির বিশেষায়িত ছোট-বড় জাহাজ। তাই বাংলাদেশ জাহাজ নির্মাণে বিশেষ মনোযোগী হয়ে উঠেছে। জাহাজ রফতানির যাত্রা শুরুর এক দশকের মাথায় ২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো কেনিয়ায় একটি উচ্চ প্রযুক্তির বিশেষায়িত জাহাজ রফতানি করে বাংলাদেশের একটি ‘শিপইয়ার্ড’। অবশ্য গত এক বছরের বেশি সময়ে জাহাজ নির্মাণ শিল্পে নতুন যেসব রফতানি আদেশ আসছে সেগুলোর বেশির ভাগই বিশেষায়িত জাহাজের। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে জাহাজ রফতানি থেকে আয়ের সিংহভাগই আসবে উচ্চ প্রযুক্তির বিশেষায়িত জাহাজ নির্মাণের কার্যাদেশ থেকে। রফতানিমুখী জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশের রফতানিমুখী জাহাজ নির্মাণ কারখানা সমিতির তথ্যে দেখা যায়, বর্তমানে দেশীয় জাহাজ নির্মাতাদের হাতে তিনটি উচ্চ প্রযুক্তির ট্রলার অর্থাৎ গভীর সাগরে মাছ আহরণের জাহাজ, দুটি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি পরিবহনকারী জাহাজ, একটি অফশোর পেট্রোল ভেসেল ও দুটি বিশেষায়িত ট্যাঙ্কার নির্মাণের কার্যাদেশ রয়েছে। বিশেষায়িত এসব জাহাজের দশটির রফতানি মূল্য প্রায় ৯৮০ কোটি টাকা। রফতানি ছাড়াও দেশের ভেতরে সাগরে ও নদীপথে ব্যবহারের জন্য বিশেষায়িত জাহাজ নির্মাণ শুরু করেছেন দেশীয় নির্মাতারা। দেশে বর্তমানে জাহাজ রফতানির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠান। তবে রফতানিতে সক্ষম এমন কারখানা রয়েছে দশটি। এসব কারখানায় দেশে ব্যবহারের জন্য কয়েকটি বিশেষায়িত জাহাজ নির্মাণ করেছে, যা আন্তর্জাতিক মানের। এই কারখানাগুলো প্রথমে দেশের জন্য জাহাজ নির্মাণ করে পরে রফতানিতে নিয়োজিত হয়েছে। চারটি কারখানা খননকারী জাহাজ বা ড্রেজারও নির্মাণ করেছে। বর্তমানে একসঙ্গে কুড়িটি ড্রেজার নির্মাণের কাজ চলছে। বেসরকারী খাত ছাড়াও নৌবাহিনী পরিচালিত তিনটি ইয়ার্ডও নিজেদের ব্যবহারের জন্য যুদ্ধজাহাজসহ বিশেষায়িত জাহাজ নির্মাণে সক্ষমতা দেখিয়েছে। আগে যেসব জাহাজ ও ট্রলার বিদেশ থেকে আমদানি করা হতো, এখন তা দেশেই নির্মাণ হচ্ছে। শেখ হাসিনার সরকার গত দশ বছর ধরে এই খাতে প্রণোদনা প্রদান করে আসছে। ফলে দেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা বাইরে যাচ্ছে না। বরং এই খাতে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় যেমন হচ্ছে, তেমনি বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রাও আয় হচ্ছে। রফতানি বাজারেও বাংলাদেশ তার অবস্থান ক্রমশ সুদৃঢ় করছে। বাংলাদেশের সক্ষমতা বাড়ানোর দিন এসে গেছে। চীন, কোরিয়া ও জাপানের মতো বড় আকারের পণ্যবাহী জাহাজও নির্মাণে সক্ষমতা বাড়ানো জরুরী। জাহাজ নির্মাণে নেতৃত্ব দেয়া দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে শ্রমমূল্য কম থাকায় নির্মাণ ব্যয়ও কম হয়। অন্য দেশের তুলনায় দশ শতাংশ কমে প্রতিযোগিতামূলক দর দিতে পারে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। তাই এই খাতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা দিন দিন বাড়ছে। এখন প্রয়োজন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।
×