ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বিপিএল ফুটবলে সবার ওপরে বসুন্ধরা

প্রকাশিত: ১২:০০, ১০ এপ্রিল ২০১৯

বিপিএল ফুটবলে সবার ওপরে বসুন্ধরা

রুমেল খান ॥ দেখতে দেখতে ১১ রাউন্ড এবং ৬৬ ম্যাচ হয়ে গেল, অথচ এখনও একাদশ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবলের টাইটেল স্পন্সরই জোগাড় করতে পারলো না বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)! প্রায় এক মাসের বিরতি শেষে গত ৬ এপ্রিল শুরু হয় লীগের খেলা। গত ৫ মার্চ রহমতগঞ্জ বনাম আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের ম্যাচ দিয়ে শেষ হয় লীগের দশম রাউন্ড। এর মাঝে বাংলাদেশ জাতীয় দল বনাম কম্বোডিয়ার প্রীতি ম্যাচ, অনুর্ধ-২৩ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাই আর ঢাকা আবাহনীর এএফসি কাপের ম্যাচের জন্য লীগের খেলায় ছেদ পড়ে। এবারের লীগের শিরোপা জিতবে নতুন একটি দল, এমনটাই ধারণা অনেকের। আর সেই দলটি হচ্ছে ‘দ্য কিংস’ খ্যাত বসুন্ধরা কিংস। চলতি লীগে তারাই আছে পয়েন্ট টেবিলের এক নম্বরে। ১০ খেলার ৯টিতেই জিতে (১টিতে ড্র) তাদের পয়েন্ট ২৮। ২৭ পয়েন্ট নিয়ে তাদের ঘাড়ে উত্তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলছে ‘দ্য স্কাই ব্লু ব্রিগেড’ খ্যাত ঢাকা আবাহনী। তারা অবশ্য খেলেছে এক ম্যাচ বেশি। হেরেছেও ২টিতে। একবার বসুন্ধরার কাছে, আরেকবার শেখ রাসেলের কাছে। প্রতিবারই হারে ২-০ গোলে। ১০ খেলায় ৬ জয় ও ৩ ড্রতে ২১ পয়েন্ট সংগ্রহ করে তৃতীয় স্থানে আছে ‘বেঙ্গল ব্লুজ’ খ্যাত শেখ রাসেল। তাদের সঙ্গে লড়াই চলছে সমান ম্যাচে ২০ পয়েন্ট পাওয়া (৬ জয় ও ২ ড্র) সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব। তারা আছে চারে। ১১ খেলায় ৬ জয় ও ১ ড্রতে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের পাঁচ নম্বরে আছে ‘রাইজিং স্ট্রেংথ’ খ্যাত আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ। ১০ খেলায় ৪ জয় ও ২ ড্রতে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে আছে ‘দ্য রেডস্’ খ্যাত বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র। যদিও শুরুতে তারা ভাল করেছিল। কিন্তু পরে ছন্দ হারিয়ে ফেলে দু’বারের লীগ শিরোপাধারীরা। অবনতি হয়েছে ‘বেঙ্গল ইয়োলোস’ খ্যাত শেখ জামাল ধানম-ির। ১০ খেলায় ১৩ পয়েন্ট নিয়ে সপ্তম স্থানে তিনবারের লীগ শিরোপাধারীরা। অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে আট নম্বরে থাকা ‘বন্দরনগরীর দল’ এবং ‘ব্লু পাইরেটস্’ খ্যাত চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেড। ১০ খেলায় তাদের সংগ্রহ ১১ পয়েন্ট। ‘জায়ান্ট কিলার’, ‘আইলো’ এবং ‘ডাইলপট্টি’ খ্যাত পুরনো ঢাকার ক্লাব এবং ১৯৭৭ সালের লীগ রানার্সআপ রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটির তেমন কোন উন্নতি নেই। আছে তাদের মতোই নবম স্থানে (১০ খেলায় ৯ পয়েন্ট)। মাসখানেক আগেও যারা ছিল জয়হীন এবং পয়েন্ট টেবিলের একেবারে তলানিতে, সেই নোফেল স্পোর্টিং এখন ‘কিঞ্চিৎ’ উন্নতি করেছে। ত্রয়োদশ থেকে তারা উঠে এসেছে দশম স্থানে। ১০ খেলায় ২ জয় ও ২ ড্রতে ৮ পয়েন্ট তাদের। নোয়াখালী-ফেনী-লক্ষ্মীপুর জেলা নিয়ে গঠিত নবাগত দল নোফেল শেষ পর্যন্ত কি করে সেটাই হচ্ছে দেখার। প্রতিষ্ঠিত দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শোচনীয় অবস্থায় আছে ‘ব্ল্যাক এ্যান্ড হোয়াইট’ খ্যাত এবং ১৯ বারের লীগ শিরোপাধারী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। ১০ খেলায় তাদের জয় মাত্র ১টিতে। হেরেছে ৭টিতেই। এছাড়া ২ ড্রতে তাদের সংগ্রহ মাত্র ৫ পয়েন্ট, আছে আগের মতোই একাদশ স্থানে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এবার না তারা আবার অবনমিত হয়ে যায়। তাহলে তাদেরও পরিণতি হবে ঐতিহ্যবাহী ওয়ারী, ভিক্টোরিয়া, আজাদ এবং ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের মতো। ১০ খেলায় ৪ পয়েন্ট নিয়ে দ্বাদশ স্থানের মতো নাজুক অবস্থায় আছে দু’বারের লীগ চ্যাম্পিয়ন ‘দ্য অরেঞ্জ বিগেড’ খ্যাত ব্রাদার্স। অথচ শুরুতে প্রতিটি ম্যাচেই তাদের খেলা ছিল চমৎকার। কিন্তু ভাল দল গড়েও কেন যে তারা আশানুরূপ ফল পাচ্ছে না সেটা এক রহস্য! পাঁচবারের লীগ চ্যাম্পিয়ন এবং ‘সোনালি আঁশের দল’ খ্যাত টিম বিজেএমসির অবস্থা সবচেয়ে করুণ। ১০ খেলায় তাদের সংগ্রহ মাত্র ৩ পয়েন্ট। লীগের একমাত্র দল হিসেবে এখনও জয়হীন তারা। পয়েন্ট টেবিলে তাদের অবস্থান তলানিতে (ত্রয়োদশ)। চলতি লীগে সবচেয়ে কম গোল হজম করেছে বসুন্ধরা কিংস ও শেখ রাসেল, ৪টি করে। সবচেয়ে বেশি গোল করেছে ঢাকা আবাহনী, ২৪টি। গত ২ ফেব্রুয়ারি আবাহনী-রহমতগঞ্জ ম্যাচে সবচেয়ে বেশি ৬ গোল হয়েছে। যাতে ৫-১ গোলে জয়ী হয় ১৭ বারের লীগ চ্যাম্পিয়ন আবাহনী। চলতি লীগে যে কোন ম্যাচে সবচেয়ে বেশি গোল ব্যবধানে জয়ের এটাই রেকর্ড। সবচেয়ে বেশি ২০ গোল করে হজম করেছে ব্রাদার্স ও মোহামডোন। আর মোহামেডান হচ্ছে সেই দল যারা টানা চার ম্যাচেই হেরেছে। শুরুতে পিছিয়ে থাকলেও ঢাকা আবাহনীর নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড সানডে চিজোবা ৮ গোল করে এখন সর্বোচ্চ গোলদাতার শীর্ষস্থানে আছেন। তার পেছনেই আছেন যুগ্মভাবে দু’জন। একজন তার ক্লাব সতীর্থ এবং স্ট্রাইকিং পার্টনার নাবিব নেওয়াজ জীবন। অন্যজন মুক্তিযোদ্ধার আইভরি কোস্টের ফরোয়ার্ড বাল্লো ফামৌসা। দুজনেই করেছেন ৭টি করে গোল। জীবন-ফামৌসা এই দুজন একটি করে হ্যাটট্রিকও করেছেন। এছাড়া আরামবাগের জাহিদ হোসেনও করেছেন ১টি করে হ্যাটট্রিক। সবচেয়ে বেশি ৫টি করে হলুদ কার্ড পেয়েছেন রহমতগঞ্জের নাইজিরিয়ান ডিফেন্ডার মানডে ওসাজাই। আর সবচেয়ে বেশি ১টি করে লাল কার্ড পেয়েছেন সাত দলের সাত ফুটবলার। এরা হলেন- বিজেএমসির নাইজিরিয়ান ডিফেন্ডার বাইবেক এসাজাই, সাইফের ডিফেন্ডার আসাদুজ্জামান বাবুল, আরামবাগের মিডফিল্ডার আরাফাত হোসেন, রহমতগঞ্জের মিডফিল্ডার সোহেল রানা, রাসেলের ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড এ্যালেক্স রাফায়েল, বসুন্ধরা কিংসের ডিফেন্ডার নাসিরউদ্দিন চৌধুরী এবং মুক্তিযোদ্ধার জাপানী ফরোয়ার্ড ইউসুকে কাতো। এছাড়া সবচেয়ে বেশি ৬টি গোল এ্যাসিস্ট করেছেন আরামবাগের নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড ম্যাথিউ চিনেদু।
×