ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বীর ফায়ার ফাইটার সোহেল রানাকে অশ্রু সজল চিরবিদায়

প্রকাশিত: ১১:১৬, ১০ এপ্রিল ২০১৯

বীর ফায়ার ফাইটার সোহেল রানাকে অশ্রু সজল চিরবিদায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিজের জীবন বিপন্ন করে অন্যের জীবন বাঁচানো সেই মহৎপ্রাণ ফায়ার ফাইটার সোহেল রানাকে অশ্রুসজল নয়নে চিরবিদায় জানালেন সহকর্মীরা। কিশোরগঞ্জের নিজ গ্রামের বাড়ির আঙ্গিনায় চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন বীর অগ্নিনির্বাপক সোহেল রানা। তার জানাজায় মানুষের ঢল নেমেছিল। সোহেলের লাশ গ্রামের বাড়িতে নেয়ার পর মানুষের গগনবিদারী আর্তনাদে সেখানকার বাতাস ভারি হয়ে পড়ে। দরিদ্র সোহেল রানার পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে সরকার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সোহেলের পরিবারের উপযুক্ত সদস্যকে চাকরি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। সোমবার রাত পৌনে এগারোটায় সোহেল রানার লাশ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসে। ফায়ার সার্ভিসের উর্ধতন কর্মকর্তারা লাশ গ্রহণ করেন। বিমানবন্দরেই রানার কফিনে বাহিনীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে লাশ রাখা হয় সিএমএইচে। মঙ্গলবার সকাল দশটার দিকে মরদেহ ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরে নেয়া হয়। তখন এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। ফায়ার সার্ভিসের কমলা রঙের পতাকায় মোড়া সোহেল রানার কফিনের সামনে সহকর্মীরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। জানাজার আনুষ্ঠানিকতায় স্বজনদের পক্ষ থেকে বক্তব্য দিতে এসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন রানার ছোট ভাই উজ্জ্বল। তিনি পরিবারটির প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করে বলেন, ভাইয়ের মৃত্যুতে আমরা পথে বসে গেলাম। ভাই ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার মৃত্যুতে আমরা একেবারেই দিশেহারা। বেলা এগারোটায় ঢাকায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদর দফতরে সোহেল রানার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযায় অংশ নেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি, ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হুসাইন, ফায়ার সার্ভিসের সদ্য সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আলী আহমেদ খান, লালবাগ বিভাগের পুলিশের উপকমিশনার মোহাম্মদ ইব্রাহিম খানসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারী। সোহেল রানার চাচাত ভাই শহীদুল ইসলাম সোহেল রানার বাড়িতে থেকে জনকণ্ঠকে জানান, ঢাকার জানাজা শেষে ফায়ার সার্ভিসের সার্বিক তত্ত্বাবধানে মরদেহ আনা হয় কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার চৌগাঙ্গা গ্রামে। সোহেলের লাশ বাড়িতে আসার খবরে আশপাশের সব গ্রামের মানুষ জড়ো হয়। মানুষের গগনবিদারী আর্তনাদে সেখানকার আকাশ বাতাস ভারি হয়ে যায়। শত শত মানুষ ভিড় করেন বাড়িতে। কোথাও তিল ধারণের জায়গা ছিল না। আছরের নামাজের পর পরই দ্বিতীয় জানাজা করার প্রস্তুতি শুরু হয়। বাড়ির পাশেই চৌগাঙ্গা পুরান বাজার ফাজিল মাদ্রাসার মাঠে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর লাশ বাড়ির আঙ্গিনায় রাস্তার পাশে দাফন করা হয়। সন্ধ্যা ছয়টায় দাফনকালে প্রচ- ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়। এ সময় ত্রিপল টাঙ্গিয়ে দাফন সম্পন্ন করা হয়। সবাই বলছিলেন, সোহেল রানার মৃত্যুতে আকাশ বাতাসও কাঁদছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামাম খান কামাল বলেন, সোহেল পরিবারের একজন উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিল। ফায়ার সার্ভিসসহ আমরা সবাই তার পরিবারের প্রতি লক্ষ্য রাখব। তার পরিবারে যদি উপযুক্ত কেউ থাকে তাকে একটি চাকরি দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। সোহেল রানার চাচাত ভাই শহীদুল ইসলাম শহীদ জানান, কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলার চৌগাঙ্গা ইউনিয়নের কেরুয়ালা গ্রামে জন্ম সোহেল রানার। পিতা গ্রামের দরিদ্র কৃষক নুরুল ইসলাম। মা মোছাঃ হালিমা খাতুন। অটোরিক্সা চালিয়ে আর টিউশনি করে করিমগঞ্জ কলেজ থেকে ২০১৪ সালে এইচএসসি পাস করে। পরের বছরই ২০১৫ সালে ফায়ার সার্ভিসের ফায়ারম্যান হিসেবে চাকরি হয়। প্রসঙ্গত, গত ২৮ মার্চ রাজধানীর বনানীর এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। আগুনে আগেই ২৬ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন অর্ধশত। সোহেল রানা উদ্ধার কাজ চালানোর সময় মারাত্মক আহত হন। তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় গত ৫ এপ্রিল সোহেল রানাকে এয়ার এ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেয়া হয়। ভর্তি করা হয় সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৭ এপ্রিল রাত সোয়া দুইটার দিকে সোহেল রানার মৃত্যু হয়।
×