ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্পের ঘোষণায় মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সেনাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ ॥ ইরানের পাল্টা ব্যবস্থা

বিপ্লবী গার্ড সন্ত্রাসী সংগঠন!

প্রকাশিত: ০৯:২৮, ১০ এপ্রিল ২০১৯

বিপ্লবী গার্ড সন্ত্রাসী সংগঠন!

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের এলিট রেভলুশনারি গার্ড কোরকে (আইআরজিসি) বিদেশী সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এই প্রথম অন্য দেশের সেনাবাহিনীকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করল দেশটি। সঙ্গে সঙ্গেই এর জবাব দিয়েছে ইরান। তারা যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে। তবে আইআরজিসিকে বিদেশী সন্ত্রাসী সংগঠনের তকমা দেয়ার বিরোধিতা করেছিলেন ট্রাম্প প্রশাসনের অনেকেই। কারণ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে মার্কিন সেনা রয়েছে। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের ফলে তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। সেনাদের নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেয়ায় এটি মোকাবেলায় প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। -খবর সিএনএন ও বিবিসির। এদিকে আইআরজিসিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করাকে স্বাগত জানিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তিনি এজন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানান এবং এর জন্য তাঁর কিছুটা কৃতিত্ব রয়েছে বলে দাবি করেন। সোমবার ট্রাম্প বলেছেন, আইআরজিসিকে শীঘ্রই আনুষ্ঠানিকভাবে বিদেশী সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করা হবে। সোমবার মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও সাংবাদিকদের বলেন, ১৫ এপ্রিল থেকে এটা কার্যকর হবে। ইরানের সঙ্গে ছয় বিশ্বশক্তির করা ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি যুক্তরাষ্ট্র পরিহার করার পর থেকেই ওয়াশিংটন-তেহরান উত্তেজনা বেড়েছে। সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, ‘পররাষ্ট্র দফতরের উদ্যোগে নজিরবিহীন এই পদক্ষেপের মধ্যদিয়ে এ বাস্তবতাকেই স্বীকার করে নেয়া হয়েছে যে, ইরান কেবল সন্ত্রাসে মদদদাতা রাষ্ট্রই নয়, বরং আইআরজিসি সক্রিয়ভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা ব্যবস্থার হাতিয়ার হিসেবে সন্ত্রাসে অর্থায়ন করা এবং সন্ত্রাসী কর্মকা-কে উৎসাহিত করে থাকে।’ ইরানের আইআরজিসিকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণার ফলে যুক্তরাষ্ট্র তেহরানের ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবে। বিশেষ করে ইরানের ব্যবসা খাতে এ নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়বে। আইআরজিসি এবং এ বাহিনী সংশ্লিষ্ট বহু প্রতিষ্ঠানই সন্ত্রাসে সমর্থন দেয়া এবং মানবাধিকারের অপব্যবহারের অভিযোগে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার শিকার হয়েছে। এখন নতুন পদক্ষেপের ফলে ইরানকে আরও চাপে ফেলার সুযোগ এবং পরিধি অনেকটাই বাড়ল বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘আইআরজিসির সঙ্গে কেউ ব্যবসা করা মানেই সে সন্ত্রাসে অর্থায়ন করছে বলে ধরে নেয়া হবে।’ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনই মূলত এ সিদ্ধান্ত নেন। পম্পেও সোমবার সাংবাদিকদের বলেছেন, ইরান যাতে একটি স্বাভাবিক জাতির মতো আচরণ করে সেজন্য যুক্তরাষ্ট্র দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং চাপ অব্যাহত রাখবে। যুক্তরাষ্ট্রের অন্য মিত্রদেশগুলোকেও ইরানের বিরুদ্ধে একই ব্যবস্থান নেয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন পম্পেও। আইআরজিসিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করায় মার্কিন সরকারের মধ্যেও মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে। তাদের মিত্রদের মধ্যেও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে ইরাকে যেখানে মিলিশিয়া এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে আইআরজিসির দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়া লেবাননে সরকারের অংশ হিজবুল্লাহকে তারা সমর্থন করে। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম ইরনা জানায়, ইরানের সুপ্রীম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল সোমবার ঘোষণা করেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক দেশ। এবং এ অঞ্চলে মার্কিন সেনারা ‘সন্ত্রাসী গ্রুপে’র মতো কাজ করছে। ইরানের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল এক বিবৃতিতে জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের অবৈধ ও অযৌক্তিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নিচ্ছে ইরান। তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষক সরকার এবং দেশটির সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) ও এর সঙ্গে যুক্ত বাহিনীকে সন্ত্রাসী গ্রুপ হিসেবে বিবেচনা করছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এই পদক্ষেপের ফলে যে বিপজ্জনক পরিস্থিতি হবে, অবশ্যই তার দায় মার্কিন সরকারকে নিতে হবে। এদিকে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বলেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে থাকা মার্কিন সৈন্যদের নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেয়ায় ট্রাম্প প্রশাসনের ভেতর থেকেই বাধা আসছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সিএনএনকে বলেন, মার্কিন সেনারা সিরিয়া ও ইরাকে প্রায়ই আইআরজিসির সদস্যদের কাছাকাছি গিয়ে কাজ করেন। ইরাকে প্রায় পাঁচ হাজার এবং সিরিয়ায় প্রায় দুই হাজার মার্কিন সেনা রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ করে ইরাকে মার্কিন সেনাদের ঝুঁকির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ব্রায়ান বলেন, ‘এই প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে আমরা সকল প্রকার সঠিক ও সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছি।’ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী সমন্বয়ক নাথান সেলস সোমবার বলেন, মার্কিন সেনাদের নিরাপত্তার বিষয়ে নেয়া পদক্ষেপ তারা বিস্তারিত প্রকাশ করবে না। তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে আশ্বস্ত করছি যে, বাহিনীর নিরাপত্তার বিষয়ে খুব গুরুত্ব দিয়ে পদক্ষেপ নিয়েছি।
×