ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গর্ভাবস্থায় রক্তক্ষরণ

প্রকাশিত: ১২:৩৪, ৯ এপ্রিল ২০১৯

গর্ভাবস্থায় রক্তক্ষরণ

গর্ভাবস্থায় রক্তক্ষরণ যে কোন গর্ভবতী মায়ের জন্য বেশ ভয়ের ব্যাপার। মাসিক বন্ধ হওয়ার পর একজন মা ভাবেন তিনি গর্ভবতী হয়েছেন এবং তার আর রক্ত যাবে না এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নানা কারণে গর্ভাবস্থায় মাসিকের রাস্তায় রক্তক্ষরণ হতে পারে। পুরো গর্ভাবস্থাকে তিন ভাগে ভাগ করলে প্রথম তিন মাস, মাঝের তিন মাস ও শেষের তিন মাসের যে কোন সময় রক্তক্ষরণ হতে পারে। প্রথম তিন মাসের রক্তক্ষরণের কারণ হ নানা কারণে গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে রক্তক্ষরণ হতে পারে। শতকরা ২০-৩০ ভাগ গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসে রক্তক্ষরণ হতে পারে। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি বাচ্চার কোন সমস্যা হয় না, পুরো গর্ভাবস্থা কাটিয়ে পূর্ণ সন্তান প্রসব করা হয়। হ বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই প্রথম তিন মাসে রক্তক্ষরণের প্রধান কারণ। অনেক সময় অল্প অল্প রক্তক্ষরণ হয় কিন্তু ঠিকমতো চিকিৎসা ও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী থাকলে শেষ পর্যন্ত সন্তান প্রসব সম্ভব। হ একটোপিক প্রেগনেন্সি : জরায়ু ছাড়া পেটের ভেতরে অন্য কোন জায়গায় যেমন টিউব, ডিম্বাশয় যদি ভ্রƒণ স্থাপিত হয় তবে তাকে একটোপিক প্রেগনেন্সি বলে। মাসিক বন্ধ হওয়ার পর পেটে ব্যথার সঙ্গে সঙ্গে হালকা রক্তপাত-এর প্রধান লক্ষণ। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে একটোপিক প্রেগনেন্সি কিনা তা জানা যায়। হ ইমপ্লেনটেশন রক্তপাত : বাচ্চা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা ছাড়াই কোন কোন রোগীর ক্ষেত্রে জরায়ুতে ভ্রƒণ স্থাপিত বা ইমপ্লেনটেশনের সময় রক্তপাত হতে পারে। সাধারণত কনসেপশনের ছয় থেকে ১২ দিন পর এ রকম হতে পারে। অনেকে এটাকে মাসিক মনে করতে পারেন কিন্তু পরবর্তীতে কিছুদিন পর পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে কনসেপশন হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়। হ আর কিছু কারণে প্রথম তিন মাসে মাসিকের রাস্তায় রক্তক্ষরণ হতে পারে। তা হলো- মোলার প্রেগনেন্সি যেখানে জরায়ুতে ভ্রƒণের পরিবর্তে টিউমার জাতীয় সমস্যা হয় এবং এ অবস্থায় রক্তক্ষরণের সঙ্গে সঙ্গে আঙ্গুরের থোকার মতো বের হয়। তবে একটা ব্যাপার জেনে রাখা ভাল যে, যেসব ভ্রƒণের জন্মগত কোন ত্রুটি থাকে সাধারণত সেসব বাচ্চাই নষ্ট হয়ে যায়। গর্ভাবস্থায় শেষের দিকে রক্তক্ষরণের কারণ হ এ সময়ে রক্তক্ষরণের প্রধান দুটি কারণের একটি হলো গর্ভফুল নিচে জরায়ুর মুখের কাছাকাছি থাকা, যাকে বলা হয় প্লাসেন্টা প্রিভিয়া, যাদের আগে জরায়ুতে কোন ধরনের অপারেশন বা যাদের জমজ বাচ্চা হয় তাদের হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। হ অন্যটি হলো গর্ভফুল জরায়ুর স্বাভাবিক অবস্থা থেকে একটু আগলা হয়ে যাওয়া। বিভিন্ন কারণে এ রকম হতে পারে যেমন- প্রেসার বেশি থাকা বা পেটে কোন কারণে আঘাত পেলে এ রকম হতে পারে। হ আর ও একটা যে কারণে শেষের দিকে রক্তপাত হতে পারে তা হলো সময়ের আগেই যদি ডেলিভারির ব্যথা উঠে যায়। হ অনেক সময় জরায়ুর মুখের কোন সমস্যার জন্য গর্ভাবস্থায় রক্ত যেতে পারে। এ সময় করণীয় প্রথম দিকে অল্পরক্ত গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বিশ্রাম ও চিকিৎসা নিলে ভ্রƒণের অনেক সময় কোন ক্ষতি হয় না আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে রক্ত যাবার সঙ্গে বেশি পেট ব্যথা থাকলে বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভাবনা তাকে। রক্ত বেশি গেলে সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। এ অবস্থায় যে কোন সময় রোগীর রক্তের প্রয়োজন হতে পারে। এ জন্য গর্ভবতী মাকে নিজের রক্তের গ্রুপ জানা থাকতে হবে এবং তাকে রক্ত দিতে পারে এমন একজন রক্তদাতার ঠিকানা ও ফোন নম্বর কাছে রাখতে হবে। উল্লেখ্য, রক্তদাতার অবশ্যই স্ক্রিনিং করাতে হবে। গর্ভাবস্থায় রক্তপাত মারাত্মক ঝুঁকি বলে বিবেচিত হয়। এ সময়ে পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে এবং ভারি কাজ করা, ভ্রমণ ও সহবাস থেকে বিরত থাকতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হয়। অধ্যাপক, গাইনি বিভাগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
×