ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রাফাতের ‘পার্কিং কই’

প্রকাশিত: ১২:৩৩, ৯ এপ্রিল ২০১৯

রাফাতের ‘পার্কিং কই’

ঢাকা। দেশের রাজধানী এই শহরটির সড়কে অন্যতম সমস্যা যানজট। যার প্রধান কারণগুলোর একটি যত্রতত্র পার্কিং। নগরীর ব্যস্ততম সড়কগুলোর পাশে গাড়ি পার্ক করে অনেকেই অফিসে প্রবেশ করেন কারণ অফিস ভবনে নেই পার্কিং সুবিধা। ফলে বাড়ে ভোগান্তি। সমস্যার সমাধানে এগিয়ে এসেছেন তরুণ মোঃ রাফাত রহমান। ইউনিভার্সিটি পড়াশোনা শেষ করে কর্মজীবন শুরু করেন ডিজনিতে কনফিগারেশন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে এবং গত ১২ বছর তিনি ফরচুন ৫০০ কোম্পানিসহ ৮-১০টি কোম্পানিতে কাজ করেন। যেমন-ইন্টেল, এইচপি, জেপিমর্গান ও ব্যাংক অফ আমেরিকা উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে কাজ করছেন আমেরিকার সবচেয়ে বড় কার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি গাইকোতে সেই সঙ্গে সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন পার্কিং প্ল্যাটফর্ম ‘পার্কিং কই’তে। ‘পার্কিং কই’-এর মতো সৃজনশীল উদ্যোগ কবে প্রথম মাথায় আসলÑ এই প্রশ্নের জবাবে রাফাত জানান, ‘পার্কিং কই’-এর শুরুটা খুব ইন্টারেস্টিং। গত ২ বছর ধরেই আমি বাংলাদেশে স্কুল-কলেজের কিছু শিক্ষার্থীদের নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রোজেক্টে ও এ্যাপ নিয়ে কাজ করছিলাম। পৃথিবীতে যে সমস্যাগুলো মানুষ প্রতিনিয়ত মোকাবেলা করে সেগুলোর সমাধান এবং বিভিন্ন এপ্লিকেশন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছিলাম। মাঝে আমি একদিন নিউইয়র্কে একটা কাজে যাই এবং নিউইয়র্কের বাঙালী এলাকায় পার্কিং নিয়ে প্রচ- সমস্যা হয়। তখনই আমি প্রথম রিয়েলাইজ করি যে, পার্কিং সমস্যাটা কেবল উন্নত বিশ্বের শহরগুলো নয় বরং বাংলাদেশেও এটি বিদ্যমান। যখন আমি বাংলাদেশে ট্যুরে যাই ২০১৭ সালের মাঝে তখনও আমি একই সমস্যায় পড়ি, তখনই আসলে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে আমরা সিদ্ধান্ত নেই যে ‘পার্কিং কই’ প্রোজেক্টটি নিয়ে কাজ করব। বর্তমানে পার্কিং কইয়ের অপারেশন্স চলছে গণমানুষের সমর্থন নিয়েই। তিনি যুক্ত করলেন, ‘সবাই আমাদের বলেছিল যে, এটা খুব ভাল একটি উদ্যোগ। আমরা আমাদের মোবাইল এপ্লিকেশন এবং ওয়েবসাইটের কাজ শুরু করি। মার্চ ২৩, ২০১৮ সালে এ্যাপটির লঞ্চিং করি এবং প্রথম সপ্তাহেই ৫ হাজার ডাউনলোড নিয়ে বাংলাদেশের ট্রাভেল এবং ট্রান্সপোর্টেশন বিভাগের টপ ওয়ানে চলে আসে। এরপরে আমরা জিপিও প্রি এক্সেলেটরে ট্রাই করি এবং জিপি তথা গ্রামীণফোন এক্সেলেটরে টপ ফাইভে যাই। সেখানে তিন মাস অতিবাহিত করি এবং আমরা আমাদের বিজনেস প্ল্যান, ভিশন, যেভাবে কাজ করবে ‘পার্কিং কই’ তা নিয়ে ট্রেনিং পাই এবং কিছুটা সিট ফান্ডিংও পাই। এই সিট ফান্ডিং এবং ট্রেনিং নিয়েই আসলে এগিয়ে যেতে থাকি। তিন মাসে পরে সেপ্টেম্বরে আমরা গ্রাজুয়েট হয়ে বের হই। এরপর আমাদের পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ‘পার্কিং কই’ খুব ভালই সাড়া ফেলেছে। এক বছর আমরা অতিবাহিত করেছি। এ্যান্ড্রয়েড এ্যাপে আমরা অলরেডি ৫০ হাজার ডাউনলোড পেয়েছি এবং প্রায় ১৭ হাজার একটিভ কাস্টমার আছেন। ঢাকাতে ১০টির মতো হাবিং এবং চট্টগ্রামে ৫টির ওপর হাবিং পার্কিং হয়ে থাকে। এখন আমরা ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং সিলেটে ‘পার্কিং কই’ করে আসছি। ভিন্নধর্মী উদ্যোগটির সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সিটিও সাব্বির আহসান বললেন, ‘পার্কিং কই’ হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পার্কিং শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে একজন হোস্ট যার পার্কিং জায়গা খালি আছে তিনি তার অব্যবহৃত জায়গাটি আমাদের এ্যাপের মাধ্যমে ভাড়া দিতে পারবেন এবং পার্কিং জায়গাটি যার প্রয়োজন তিনি আমাদের এ্যাপের মাধ্যমে এটি দেখে তারপর জায়গাটি ভাড়া নিতে পারবেন। এ বছরই ঢাকা ট্রাফিক সমস্যায় পৃথিবীর প্রথম স্থানে রয়েছে এবং এই সমস্যার ৩০%-৩৫% হয়ে থাকে অপরিকল্পিতভাবে যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে। আপনি রাস্তায় গেলে দেখবেন প্রতিটি রাস্তা জুড়েই অপরিকল্পিত পার্কিং করে আছে। এই সমস্যা সমাধানেই আমরা কাজ করছি। আমরা চাইলেই পার্কিং স্পেস বাড়াতে পারব না, যেটা করতে পারব আমরা অব্যবহৃত পার্কিংগুলো ব্যবহার করতে পারব এবং সেই উদ্দেশ্যে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশে ‘পার্কিং কই’। আরও জানালেন, ‘প্রতি মাসে প্রায় ১০% থেকে ১৫% হারে আমাদের গ্রোথ এখন চলছে। ট্রায়াল বেসিসে আগামী সেপ্টেম্বরে নেপালেও আমাদের কার্যক্রম শুরু করব। যদি নেপালের কার্যক্রম ভাল হয় তাহলে পর্যায়ক্রমে আমরা সাউথ এশিয়ার প্রায় প্রতিটি দেশের শহরে কার্যক্রম বিস্তারের ইচ্ছা রাখি। অলরেডি আমাদের ২৫ হাজারের বেশি ভেরিফাই পার্কিং স্পেস আছে। এটাকে ১ লাখ পার্কিং স্পেসে নিয়ে যেতে চাই। আমরা চাই ২০২১ সালের মধ্যে ঢাকার পার্কিং সমস্যা ৭০% কমিয়ে আনতে যাতে ট্রাফিক সমস্যার ২৫% কমে আসে।’
×