ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হাসিবুল

প্রকাশিত: ১২:৩২, ৯ এপ্রিল ২০১৯

ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হাসিবুল

ডি-প্রজন্ম : আপনার নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন। হাসিবুল হাসান : বড় হয়েছি ঢাকাতেই। এখন পড়াশোনা করছি সঙ্গে রিসার্চ। কাজ থেকে একটু দূরে আছি, কারণ আমাকে রিসার্চে অনেক সময় দিতে হয়। বর্তমানে ক্লাউড কম্পিউটিং এবং বিগ ডাটা নিয়ে কাজ করছি। এ ছাড়া সবার জন্য অনলাইনে ফ্রিতে ক্লাউড কম্পিউটিং শেখার প্লাটফর্ম ‘লেটস্ লারন ক্লাউড- খবঃ’ং খবধৎহ ঈষড়ঁফ (যঃঃঢ়ং://ষবঃংষবধৎহপষড়ঁফ.পড়স)’ নিয়ে কাজ করছি। যারা প্রোগ্রামিংয়ে ভয় পায়, তারা যেন খুব সহজে প্রোগ্রামিং শিখতে পারে তাদের জন্যও কাজ করছি। এক কথায় বলতে গেলে কমিউনিটির জন্য কাজ করছি, দেশের মানুষের জন্য কাজ করছি। কারণ, এভাবে সবাই এগিয়ে আসলেই দেশ এগিয়ে যাবে। ডি-প্রজন্ম : ফ্রিল্যান্সিং কী? হাসিবুল হাসান : বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে তরুণদের কাছে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়ের একটি হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং। এরই মধ্যে অনেকে ফ্রিল্যান্সিং করে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছে। পড়ালেখার পাশাপাশি অথবা পড়ালেখা শেষে যে কেউ গড়ে নিতে পারে তার ক্যারিয়ার। ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে মাল্টি বিলিয়ন ডলারের বিশাল বাজার। গতানুগতিক চাকরির বাইরে নিজের ইচ্ছামতো কাজ করার স্বাধীনতা হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং। এখানে একদিকে যেমন রয়েছে যখন ইচ্ছা তখন কাজ করার স্বাধীনতা, তেমনি রয়েছে বিভিন্ন ধরনের কাজ বাছাই করার স্বাধীনতা। আয়ের দিক থেকে রয়েছে অভাবনীয় সম্ভাবনা। প্রতি মুহূর্তে নতুন নতুন কাজ পোস্ট হচ্ছে। ওয়েবসাইট ডিজাইন, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, প্রোগ্রামিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, এ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, ডাটা এট্রি ইত্যাদি- এর যে কোন এক বা একাধিক ক্ষেত্রে আপনি দক্ষ হয়ে নিজেকে একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে তৈরি করে নিতে পারেন। ডি-প্রজন্ম : এক মাসে সর্বোচ্চ কত আয় করেছেন? হাসিবুল হাসান : আল্লাহর রহমতে ভালই করেছি। তবে আয় করা কখনই মূল লক্ষ্য ছিল না আমার। আমার টার্গেট ছিল আমি এই লাইনে কাজ করব, এভাবে আগাতে থাকি। এভাবেই আজকে এই পজিশনে এসেছি। ডি-প্রজন্ম : কবে থেকে এই কাজে যুক্ত হয়েছেন? হাসিবুল হাসান : ফ্রিল্যান্সিংয়ে যাত্রা শুরু মূলত ২০১৫ সালে। তখন থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি সাইবার ক্যাফে গিয়ে কাজ করতাম। তবে পুরোদমে শুরু করি ২০১৬ সালের জুন মাসে। ২০১৫ সালে শুধু গ্রাফিক্স ডিজাইন রিলেটেড কাজ করতাম। এটার মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে ভাল আইডিয়া ছিল। তাই ২০১৬তে পুরোদমে কাজ শুরুর আগে ওয়েবসাইট ডিজাইন, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, প্রোগ্রামিংসহ অনেক সেক্টরে স্কিল ডেভেলপ করি। আর এভাবেই যাএা শুরু। আপওয়ার্ক, ফাইবার, ফ্রিল্যান্সার- এই ৩টা মার্কেটপ্লেস দিয়েই কাজ শুরু করি। প্রথম কাজ পেয়েছিলাম ফাইবারে, ২০ ডলার এর। যেহেতু প্রথম কাজ তাই নিজের বেস্ট ইফোর্টটাই দিয়েছিলাম, আর ক্লায়েন্টও খুব খুশি হয়ে আরও ২০ ডলার টিপস্ দিয়েছিল। এরপর আর বসে থাকতে হয়নি। একের পর এক কাজ পেতাম। আমার প্রথম ক্লায়েন্টের সঙ্গেই প্রায় ১.৫ বছর কাজ করেছি। ডি-প্রজন্ম : অনেকেই তো পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করতে চায়, আপনি এই পেশায় যুক্ত হওয়ার কারণ কী? হাসিবুল হাসান : আমাদের ছোটবেলা থেকে এমনভাবে শিক্ষা দেয়া হয় যে আমরা এর বাইরে চিন্তা করতে পারি না। পড়াশোনা শেষ করে অবশ্যই চাকরি করতে হবে অথবা জীবন শেষ এই কথায় অটল আমরা। আমাদের চাকরির বাজারের এখন কী অবস্থা বিষয়টা সবারই জানা। প্রতিবছরই শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে কিন্তু সে পরিমাণে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না। আমি যখন কলেজে পড়তাম তখন আমার বড় ভাইদের দেখতাম কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েও কোন চাকরি পাচ্ছে না, আবার চাকরি পেলেও আশানুরূপ বেতন পাচ্ছে না। তখন থেকেই স্বপ্ন দেখতাম উদ্যোক্তা হওয়ার। ডি-প্রজন্ম : কীভাবে এই পেশাটা নির্ধারণ করলেন? হাসিবুল হাসান : ছোটবেলা থেকে কম্পিউটারের সঙ্গেই বেশিরভাগ সময় কাটাতাম। যখন কোন গেম খেলতাম তখন মনে হতো এই গেমটা যদি আমি বানাতে পারতাম তবে তো খুব ভাল হতো। যখন ওয়েবসাইট ভিজিট করতাম, তখন নিজেকে প্রশ্ন করতাম কিভাবে এই ওয়েবসাইট বানায়, সারা পৃথিবী থেকে মানুষজন ভিজিট করতে পারে। এভাবেই ছোটবেলা থেকে কম্পিউটার আমার কাছে নেশার মতো হয়ে যায়। ডি-প্রজন্ম : আমাদের দেশে ফ্রিল্যান্সারদের কেমন ক্ষেত্র আছে? হাসিবুল হাসান : বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় অর্ধলক্ষাধিক তথ্যপ্রযুক্তি প্রকৌশলী অনলাইনে বিশ্বের হাজার হাজার প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। এ ছাড়া দেশের প্রায় দুই লাখ তরুণ-তরুণী ফ্রিল্যান্সিংয়ে জড়িত। আর এই সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। আমাদের দেশের তরুণ-তরুণীরা সবচেয়ে বেশি কাজ করছে ওয়েব ডিজাইন, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, কনটেন্ট রাইটিং, ইত্যাদি সেক্টরে। মার্কেটপ্লেসে এই কাজগুলোর অনেক চাহিদা এবং অনেক কাজ পাওয়া যায়। ডি-প্রজন্ম : একজন নতুন ফ্রিল্যান্সার কীভাবে সফল হতে পারে? হাসিবুল হাসান : কমপক্ষে এক একটা সেক্টরে তিন মাস সময় দিয়ে ভালভাবে স্কিল ডেভেলপ করতে হবে। ধরুন, কেউ ওয়েব ডিজাইন শিখবে। এর জন্য তাকে আইটিএমএল, সিএসএস, জাভাস্ক্রিপ্ট, জেকুয়েরি, বুটস্ট্রাপ ইত্যাদি শিখতে হবে। শুধু শিখাই নয়, এগুলো ব্যবহার করে অনলাইনএ নিজের পোর্টফোলিও বানাতে হবে। পরের তিন মাসে কাজ শেখার পাশাপাশি মার্কেটপ্লেসগুলোতে এ্যাকাউন্ট করে বিড করতে হবে। অবশ্যই কিভাবে বিড করতে, কিভাবে ক্লায়েন্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয় সবকিছু আগে থেকে ধারণা নিয়ে রাখতে হবে। শুরুতে ফাইবার দিয়ে শুরু করা যেতে পারে, কারণ ফাইবারটা তুলনামূলক নতুনদের জন্য কাজ পাওয়া সহজ। এভাবে কেউ যদি ৬ মাসের টার্গেট নিয়ে শুরু করে অবশ্যই সফল হবে বলে বিশ্বাস করি। এ ছাড়াও কিছু জিনিস ফলো করতে হবে। ডি-প্রজন্ম : আমাদের দেশে ফ্রিল্যান্সারদের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা কী? হাসিবুল হাসান : বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে। তার মধ্যে যারা গ্রামে থাকেন তারা ঠিকমতো ইলেকট্রিসিটি পান না। অনেকে শুরু করতে চান কিন্তু সঠিক গাইড পান না। আর সব থেকে বড় সমস্যা হলো এখনকার তরুণ প্রজন্মের ধৈর্য নেই বললেই চলে। ৩ মাস সময়ও তারা ধৈর্য ধরে কাজ শিখতে পারেন না। ডি-প্রজন্ম : কীভাবে ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হওয়া যাবে? হাসিবুল হাসান : ১. অধ্যবসায় যা উপরে আলোচনা করলাম। ২. সময়জ্ঞান, আপনাকে অবশ্যই সময়ের মূল্যায়ন করতে হবে। সময়ের কাজ সময়ে করতে হবে। আপনাকে ক্লায়েন্ট আজকে নক দিল আর আপনি কাল ক্লায়েন্টকে রিপ্লাই দিলেন এভাবে হবে না। ৩. অপ্রত্যাশিত টাকার পেছনে ছোটা, বেশিরভাগের ভুল ধারণা হলো ফ্রিল্যান্সিং মানে হাজার হাজার ডলার। হাজার ডলার ইনকামের জন্য একজন ফ্রিল্যান্সার কতটা ত্যাগ স্বীকার করে তা একজন ফ্রিল্যান্সারই জানেন। ৪. নিয়মিতভাবে নিজের স্কিল বৃদ্ধি করা : প্রতিদিন নিয়মিত নতুন কাজ শেখার জন্য ১ ঘণ্টা করে সময় দিতে পারেন। আপনার সেক্টরে নতুন কাজগুলো শিখতে পারেন, এতে দিনশেষে আপনি নতুন নতুন প্রোজেক্টে কাজ করতে পারবেন। ডি-প্রজন্ম : তরুণদের কাছে আপনার প্রত্যাশা- হাসিবুল হাসান : আপনারা যারা বেকার আছেন, তারা জীবনের ৬টা মাস দিয়ে দেখতে পারেন। বৃথা যাবে বলে মনে হয় না। ২২-২৪ বছর পার করেছেন গ্র্যাজুয়েশনের সার্টিফিকেটের জন্য, তবুও আপনার চাকরি হবে কিনা এই নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না। নিজেকে ৬ মাস এর একটা চ্যালেঞ্জ দিন, তারপর দেখুন আপনি বেকার আছেন কিনা। তবে অবশ্যই আপনাকে ভাল কোন ট্রেনিং সেন্টার কিংবা এক্সপার্ট কারও সঙ্গে থেকে শিখতে হবে। এ ছাড়া বর্তমানে সব ধরনের রিসোর্সই অনলাইনে পাওয়া যায়। আপনি চাইলে নিজে নিজে শিখতে পারেন, এই ক্ষেত্রে সময় একটু বেশি লাগে। ডি-প্রজন্ম : কেমন বাংলাদেশ দেখতে চান? হাসিবুল হাসান : বেকারত্বমুক্ত সুন্দর বাংলাদেশ।
×