ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তারুণ্যের বৈশাখ দেশে-বিদেশে

প্রকাশিত: ১২:৩২, ৯ এপ্রিল ২০১৯

তারুণ্যের বৈশাখ দেশে-বিদেশে

বৈশাখ মানেই বাঙালীর প্রাণবন্ততা, স্বতঃস্ফূর্ততা, উজ্জীবন এবং তারুণ্য। শত বছরের নিজস্ব সংস্কৃতি ও গর্বিত ঐতিহ্যের এই সার্বজনীন দিনটিতে ধুয়ে যায় পুরনো জরাগ্রস্ত এবং জীর্ণ সব। যা কিছু শুভ তার সানাই বাজিয়ে আগমন ঘটে দিনটির। বৈশাখ মানেই বটমূলে ছায়ানটের সুরের খেলা, মঙ্গল শোভাযাত্রায় জাতির আলো জ্বালাবার প্রত্যাশা, পান্তা-ইলিশ আরও কত কী? তারুণ্যের সর্বোচ্চ চেষ্টা দিনটিকে আরও রঙিন করে তোলার। বৈশাখ নিয়ে দেশ এবং প্রবাস থেকে তারুণ্যের ভাবনা তুলে ধরেছেনÑ সারতাজ আলীম সাদমানি হক আনিকা মালয়েশিয়া মালয়েশিয়াকে বলা হয় বহু সংস্কৃতির দেশ। কোন বিশেষ সংস্কৃতিকেই আলাদা করে দেখা মুশকিল। তবে এর মধ্যেই পহেলা বৈশাখকে যতটা সম্ভব রং দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। নিজের সংস্কৃতি বলে কথা! ছোট হলেও কোন না কোন আয়োজন হবেই। বাঙালী কমিউনিটিতে এবং বাঙালী দোকানে এদিন রঙের ছোঁয়া লাগে। এম্বাসিতে বিশেষ আয়োজন হয়। দেশের দিনগুলোতে রমনার মতো কোথাও শাড়ি পড়ে হাঁটা হয়ে উঠে না। ইলিশের স্বল্পতাও আফসোসের। তবে প্রতি বছরের আয়োজনই আগের বছরকে ছাপিয়ে যাচ্ছে। জিসান আহমেদ যুক্তরাষ্ট্র ঘুম ভাঙ্গে ইলিশের ঘ্রাণে। নিউইয়র্কে বৈশাখের আমেজটা একেবারেই ভিন্ন। কুইন্স, ব্রুকলিন মিলে সাড়ে পাঁচ হাজার বাঙালী আছে। ২০১৪তে প্রথম এসে জ্যাকসন হেটসসে বৈশাখী মেলা দেখে চমকে উঠেছিলাম। স্মৃতিচারণ করছিলাম টিএসসির দিনগুলোর কথা। পাঞ্জাবি পড়ে কমিউনিটির বাঙালী পরিবারগুলোর সঙ্গে কুশল বিনিময়ের তাড়া থাকে সেদিন। ছোট করে মঙ্গল যাত্রাও হয়ে যায় এক ফাঁকে। মেলা বাঙালী খাবারে ভরে ওঠে। আয়োজন হয় ম্যাকডোনাল্ড স্ট্রিটেও। কাজের তাড়ায় অবশ্য তরুণদের উপস্থিতি খানিকটা কম থাকে। তবে এই তরুণদের মধ্যেই কেউ না কেউ গুরুদায়িত্ব নিয়ে নেয়। এ বছর হয়তো আমি পরের বছর আরেকজন। পৃথিবীতে বহু সংস্কৃতি হারিয়ে গেছে, তবে এটা জোর দিয়েই বলব আমাদের সংস্কৃতি কোনদিন হারাবে না। পৃথিবীর যে প্রান্তেই যাই বাঙালিয়ানা বেঁচে থাকবে। কাজী মহিউদ্দিন তাকি তুরস্ক বৈশাখ শোনামাত্রই মাথায় প্রথমে আসে পান্তা-ইলিশ, রং, রমনার বটমূল, মঙ্গল শোভাযাত্রা, শাড়ি-পাঞ্জাবি আর গান। যেন বৈশাখের সঙ্গে জুড়ে গেছে এই শব্দগুলো, কিন্তু এই বিদেশ বিভূঁইয়ে এসব বাঙালীর প্রাণের মতো করে পাবার সুযোগ কই? তবুও বৈশাখ হবে আর বাঙালী উৎসবে মাতবে না তা কী করে হয়? বৈশাখের সকাল সকাল পাঞ্জাবি পায়জামা পরে রওয়ানা দেব বাংলাদেশ দূতাবাসের অনুষ্ঠানে, জানি বরাবরের মতো আয়োজনের কোন কমতি থাকবে না। ইলিশ কিংবা পান্তা এই মাংসপ্রধান দেশে পাওয়াটা কষ্টকর। তবুও কোন একভাবে ইলিশ হাজির হয়েই যায়। উৎসবমুখর বাঙালীর মিলনমেলায় ক্ষণিকের জন্য তুরস্কই হয়ে ওঠে আমাদের বাংলাদেশ। অনুষ্ঠানগুলোতে তুর্কীরা খুব আগ্রহ নিয়ে অংশগ্রহণ করে, আমরা সংখ্যায় এখানে কম হলেও উৎসবের মধ্য দিয়ে আমাদের সংস্কৃতি ছড়িয়ে যাচ্ছে এই বহু সংস্কৃতির দেশটিতে। জান্নাতুল মাওয়া পাবনা বাঙালীর একমাত্র অসাম্প্রদায়িক উৎসব ‘পহেলা বৈশাখ’। সকালে পান্তা ইলিশ খাওয়া, মঙ্গল শোভাযাত্রা, নতুন জামা কাপড় পড়া, বৈশাখী মেলায় যাওয়া এই মিলিয়েই পহেলা বৈশাখ। যদিও ঢাকা শহর আর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে মঙ্গল শোভাযাত্রা তেমন দেখা যায় না, বাকি উৎসব সবার জন্য প্রায় এক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নতুন বছরের শুরুতেও আমাদের এক হওয়া হয়নি। এখানেও আমরা বিভক্ত। কারও প্রশ্ন কোথা থেকে এলো পহেলা বৈশাখের ধারণা? আসলেই কি হাজার বছরের ঐতিহ্য? কেউবা দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে। এত শত প্রশ্ন ঠেলে উৎসবকে উৎসব করে তুলতে যেন না ভুলি আমরা। সকল কল্যাণের জয় করতে তরুণরা এগিয়ে আসুক। রেহান উল হক রাফি ঢাকা ছোটবেলা থেকেই ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকায় বাংলা দিনপঞ্জির প্রথম দিনের জন্য দায়িত্বের পাহাড় জমত অনেক। সারারাত ধরে আলপনা করা বা আনন্দ মিছিলের প্রস্তুতি নিয়ে ক্লান্তিটা কোথায় যেন হারিয়ে যেত। আমি বাঙালী, বাংলাদেশী এই পরিচয়টা মনে করলে সব ক্লান্তি হাওয়া হয়ে যায়। একজন তরুণ হিসেবে আমার সংগঠনের জ্যেষ্ঠদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ এই জন্য যে আমাকে বাঙালিয়ানার স্বাদটা তারাই পেতে শিখিয়েছেন। পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে আমিও সেই শিক্ষাটা প্রবাহিত করতে চেষ্টা করি। তারুণ্যের কাছে আমার এতটুকুই প্রত্যাশা। আফসোসও আছে। দিনে মঙ্গলযাত্রার পর রাতে ডিজে পার্টি কাম্য নয়। তবে আশার আলোটাই বেশি। নতুন বছরের আগমনে বাংলাদেশ আরও সুন্দর হয়ে উঠুক। মাজিদ সাদমান ঢাকা পুরনো ঢাকায় বড় হওয়ায় ১২ মাসে ১৩ উৎসব দেখেছি সবসময়। সার্বজনীন পহেলা বৈশাখে আমেজটা সব থেকে বেশি থাকে। এই উৎসব পুরান ঢাকাকেন্দ্রিক না হলেও প্রত্যেক গলিতে যেন একটা আমেজের ভাব, রঙ-ঢং ছড়িয়ে পড়ে। ঐতিহ্য-সংস্কৃতি ধরে রাখার অগ্রদূত কিন্তু তরুণরাই। নিজে তরুণ হিসেবে প্রতিবছরই কিছু না কিছু দায়িত্ব থাকে। এই দায়িত্ব যেন বাঙালিয়ানার রক্তে উত্তরাধিকারী হিসেবে দেয়া। তারুণ্যের কাছে আমার প্রত্যাশা এই দায়িত্ব থেকে যেন কেউ সরে না পড়ে। আমাদের স্বকীয়তা বেঁচে থাক, সঙ্কীর্ণতা মুছে যাক। আরেফিন ইসলাম জার্মানি বৈশাখ বাংলার মানুষের জীবনে কেবল উৎসব নয়, এক আবেগের নাম। আর আমরা যারা প্রবাসে থাকি, শেকড় থেকে বহু দূরে, আমাদের জন্য এই আবেগটুকু অন্যরকম ভাবে কাজ করে। আমাদের কাছে বৈশাখ মানে বিদেশের মাটিতে হালকা কিছু আয়োজন আর দেশের স্মৃতি। এই সব সুন্দরের দেশে সব কিছু ছবির মতো হলেও, দিনশেষে যখন পাঞ্জাবি শাড়ি পরে নাগরদোলার শব্দ শুনতে পাই না, কাঁচা আমের গন্ধে চারপাশ ভরে থাকে না তখন সৌন্দর্য আর মনে ধরে না। এই অনুভূতিটুকু বুকে নিয়েই মিউনিখের মাটিতে এবারও আমরা ছোট একটু আয়োজন করেছি বৈশাখের জন্য।
×