ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ময়মনসিংহে আরামবাগ ২-১ গোলে হারাল বিজেএমসিকে

ঢাকা আবাহনী হারাল চট্টগ্রাম আবাহনীকে

প্রকাশিত: ১১:৫৭, ৯ এপ্রিল ২০১৯

ঢাকা আবাহনী হারাল চট্টগ্রাম আবাহনীকে

রুমেল খান ॥ দু’দলেরই নামের মধ্যে ‘আবাহনী’ শব্দটি আছে। মজার ব্যাপার- দু’দলেরই জন্ম ১৯৭২ সালে। তবে মিলের ইতি এখানেই। বাকি সব অমিল। কেননা একদলের আস্তানা ঢাকায়, আরেক দলের চট্টগ্রামে। সফলতায়-শিরোপা জেতায় ঢাকা আবাহনীই যোজন ব্যবধানে এগিয়ে। যেখানে ‘দ্য স্কাই ব্লু ব্রিগেড’ খ্যাত ঢাকা আবাহনীর ৩৭ শিরোপার মধ্যে ১৭টিই লীগ শিরোপা (এই ১৭টির মধ্যে পেশাদার লীগ শিরোপা ৬টি), সেখানে ‘ব্লু পাইরেটস্’ এবং ‘বন্দরনগরীর দল’ খ্যাত চট্টগ্রাম আবাহনীর মাত্র তিন শিরোপার মধ্যে লীগ-শিরোপা নেই একটিও! পেশাদার লীগে তাদের সেরা সাফল্য হচ্ছে ২০১৬ মৌসুমে রানার্সআপ হওয়া। এছাড়া সর্বশেষ ২০১৭-১৮ মৌসুমে তৃতীয় হয় তারা। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে সোমবার এই দুই ‘আবাহনী’র লড়াই অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই লড়াইয়ে জিতেছে ঢাকা আবাহনীই। তারা ২-০ গোলে হারায় চট্টলার ক্লাবটিকে। মূলত প্রথমার্ধেই খেলার ফল নির্ধারিত হয়ে যায়। ওই অর্ধেই সব গোল করে ঢাকার ধানম-ি পাড়ার অভিজাত ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি। এই জয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা ‘দ্য কিংস’ খ্যাত বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে ব্যবধানটা আরও কমিয়ে আনলো লীগের বর্তমান শিরোপাধারী আবাহনী। নিজেদের একাদশ ম্যাচে এটা নবম জয় আবাহনীর। ২৭ পয়েন্ট নিয়ে ধরে রেখেছে দ্বিতীয় স্থানটি। তাদের চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলে ২৮ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে চলতি মৌসুমের স্বাধীনতা কাপ চ্যাম্পিয়ন এবং নবাগত বসুন্ধরা কিংস। পক্ষান্তরে নিজেদের দশম ম্যাচে এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো তেতো স্বাদ পেল চট্টগ্রাম আবাহনী। ২ জয় ও ৫ ড্রতে ১১ পয়েন্ট তাদের। পয়েন্ট টেবিলে আছে আগের মতোই অষ্টম স্থানে। ম্যাচ শুরুর ৩ মিনিটের সময়ই প্রথম গোলের সুযোগ পায় ঢাকা আবাহনী। বক্স থেকে ফরোয়ার্ড নাবিব নেওয়াজ জীবনের জোরালো শট ফিস্ট করেন চট্টলার গোলরক্ষক মোহাম্মদ নেহাল। কর্নার পায় ঢাকা আবাহনী। কর্নার থেকে পাওয়া বলে আফগান ফরোয়ার্ড মাসিহ্ সাইঘানির হেডও রুখে দেন এই গোলরক্ষক। ৬ মিনিটে গোলের সুযোগ পায় চট্টগ্রাম আবাহনীও। কিন্তু গোলরক্ষক-অধিনায়ক শহীদুল আলম সোহেলকে একা পেয়েও বল পোস্টে পাঠাতে পারেননি গাম্বিয়ান মিডফিল্ডার মমদৌ বাও। সোহেল-বরাবর বল মেরেও গোল করতে পারেননি তিনি। ১০ মিনিটে গোল করে এগিয়ে যায় ঢাকা আবাহনী। বল নিয়ে একক প্রচেষ্টায় চট্টলার বক্সে ঢুকে পড়েন হাইতিয়ান ফরোয়ার্ড কারভেন্স ফিলস্ বেলফোর্ট। সতীর্থ কোরিয়ান মিডফিল্ডার মিনহাই কোকে পাস দেন তিনি। কিন্তু নিজে শট না নিয়ে জীবনকে বলটা বাড়িয়ে দেন এই কোরিয়ান। জীবন শুধু পা দিয়ে স্পর্শ করে বল পোস্টে পাঠান (১-০)। চলতি লীগে এটা জীবনের সপ্তম গোল, যা দেশীয় ফুটবলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ। ১৭ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে ঢাকা আবাহনী। জীবন এবার গোল এ্যাসিস্টের ভূমিকায়। ডানপ্রান্ত থেকে করা তার চমৎকার ক্রসে সতীর্থ নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড সানডে চিজোবা যে জোরালো হেড নেন, তা আর ফেরাতে না পেরে অসহায়ভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন মোহাম্মদ নেহাল (২-০)। চলমান লীগে এটা সানডের অষ্টম গোল, যা সর্বোচ্চ। প্রেসবক্সে মজা করে একজন বলেন, ‘মানডেতে গোল করল সানডে!’ ৩৯ মিনিট ম্যাচ চলার পর ভারি বর্ষণ, দমকা হাওয়া এবং হাল্কা বজ্রপাত শুরু হয়। ফলে রেফারি এমজেডএফ নাহিদ খেলা বন্ধ করার নির্দেশ দেন। প্রায় আধঘণ্টা পর আবারও খেলা শুরু হয়। প্রথমার্ধের ইনজুরি টাইমে চট্টগ্রামের বক্সে বল পেয়ে পোস্ট লক্ষ্য করে শট নেন সানডে। কিন্তু বল জড়ায়নি জালে। দ্বিতীয়ার্ধে গোল শোধে মরিয়া চট্টলার দলটি একাধিক আক্রমণ করলেও লক্ষ্যভেদ করতে পারেনি তারা। ফলে হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় তাদের। এই লীগে প্রায় প্রতি ম্যাচেই গোল পাচ্ছেন জীবন। গত মৌসুমে বেশিরভাগ সময় সাইডবেঞ্চ গরম করা এ ফরোয়ার্ডের আত্মবিশ্বাসও এবার অনেক ওপরে। চট্টগ্রাম আবাহনীর বিপক্ষে গোল করেছেন এবং করিয়েছেন। ম্যাচ শেষে রোমাঞ্চিত জীবন, ‘প্রায় প্রতি ম্যাচে গোল পাচ্ছি বলে ভাল লাগছে। আরও পরিশ্রম করে আরও গোল করতে চাই। মাঠে নামলে আমার কাছে মনে হয় গোল পাব। গতবার সেভাবে সুযোগ পাইনি বলে গোলও বেশি করতে পারিনি। এবার কোচ আমাকে সুযোগ দিয়েছেন। তা কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি।’ টার্গেট করেছেন এই লীগে ১৫ গোল করবেন। ইতোমধ্যে সাতটি করেছেন। নিজের লক্ষ্য পূরণ করতে পারবেন বলে বিশ্বাস জীবনের। * এখনও জয়হীন বিজেএমসি ॥ একইদিনে ময়মনসিংহের রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের মুখোমুখি হয় টিম বিজেএমসি। যেখানে ২-১ গোলে জেতে ‘দ্য রাইজিং স্ট্রেন্থ’ খ্যাত আরামবাগ। ম্যাচের ৪ মিনিটে পল এমিলের গোলে ম্যাচে লিড নেয় আরামবাগ। ৮ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন রবিউল হাসান। মূলত এই ৪ মিনিটের ঝড়েই কুপোকাত হয়ে যায় ‘সোনালি আঁশের দল’ খ্যাত এবং পাঁচবারের লীগ চ্যাম্পিয়ন বিজেএমসি। যদিও তারা ৮১ মিনিটে পেনাল্টি থেকে এক গোলে শোধ করে। গোলটি করেন তাদের কিন্তু নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড স্যামসন ইলিয়াসু। এই জয়ে ১১ ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে পূর্বের পঞ্চম স্থানেই থাকল আরামবাগ। পক্ষান্তরে ১০ ম্যাচে সপ্তম হারে ৩ পয়েন্ট নিয়ে তলানিতেই (১৩ দলের মধ্যে ত্রয়োদশ) থাকল বিজেএমসি। চলতি লীগে এখন পর্যন্ত একমাত্র জয়হীন দল তারাই।
×