ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দক্ষিণের নতুন ১৮ ওয়ার্ড দ্রুতই মডেল শহর হবে

প্রকাশিত: ১১:১৮, ৯ এপ্রিল ২০১৯

দক্ষিণের নতুন ১৮ ওয়ার্ড দ্রুতই মডেল শহর হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নতুন যুক্ত হওয়া ১৮ ওয়ার্ডে দ্রুত বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা- করে মডেল শহরে রূপান্তরের ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন। এসব ওয়ার্ডের নাগরিকদের সঙ্গে সুবিধা-অসুবিধার কথা আলোচনা করেই গৃহীত মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করা হবে। রাজধানীতে মানুষ বেড়েছে। অথচ সেই তুলনায় সেবাদানকারী সংস্থাগুলোর সেবা প্রদান ও জনবল অনেক কম। তাই চাহিদা বিবেচনা করে অতি দ্রুত জনবল নিয়োগের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। সোমবার নগর ভবনের ব্যাংক ফ্লোরে নবগঠিত ১৮ ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সঙ্গে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় মেয়র এসব কথা বলেন। এ সময় স্থানীয় এমপি হাজী সেলিম, ঢাকা দক্ষিণের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান, সচিব মোস্তফা কামাল মজুমদারসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সাঈদ খোকন বলেন, নতুন যুক্ত ওয়ার্ডগুলোতে সব আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে এলাকাকে মডেল শহর হিসেবে গড়ে তোলা হবে। তবে আধুনিক শহরে রূপান্তর করতে সময় লাগবে। এটা আমাদের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। আমরা নতুন প্রজন্মের জন্য ঢাকাকে মডার্ন সিটি হিসেবে দেখাতে চাই। এ লক্ষ্যেই কাজ চলমান রয়েছে। মেয়র বলেন, আমাদের জনবল সঙ্কট রয়েছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা উন্নয়ন কাজে বাধা। মেয়র বলেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসন করে মানুষের সেবায় এগিয়ে আসুন। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা যতটুকু কমিয়ে কাজ করা যায় তা করুন। সাঈদ খোকন বলেন, নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুদূরপ্রসারী চিন্তা ভাবনার অংশ হিসেবে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে দুইভাগে ভাগ করেছেন। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, ’১১ সাল থেকে এ পর্যন্ত দীর্ঘ সময়ে এখনও আমরা জনবল কাঠামোর অনুমোদন পাইনি। চাহিদার মাত্র ৪০ শতাংশ জনবল নিয়ে কাজ করছে। চার বছরেও জনবল সঙ্কট কাটিয়ে ওঠা যায়নি। নবসংযুক্ত ওয়ার্ডগুলোর কাউন্সিলরদের উদ্দেশে মেয়র বলেন, এসব ওয়ার্ডে অনেক সম্পদ রয়েছে। আমাদের দক্ষিণ ঢাকা সিটির আগে আয়তন ৪৫ বর্গকিলোমিটার আর নব সংযুক্ত ওয়ার্ডগুলোর আয়তন ৮০/৮২ বর্গ কিলোমিটার। অর্থাৎ দ্বিগুণ এলাকা যুক্ত হয়েছে। কিন্তু সেখানে ভৌত অবকাঠামো এখনও সেভাবে গড়ে ওঠেনি। যেগুলো গড়ে উঠেছে সেগুলো পরিকল্পনামাফিক হয়নি। অনেকটাই অপরিকল্পিত। মেয়র বলেন, খুব দ্রুততার সঙ্গে প্রথমে নবসংযুক্ত ওয়ার্ডগুলোতে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল উপযোগী রাস্তা করতে এরই মধ্যে প্রকল্প গ্রহণ করেছি। ওই প্রকল্পের মধ্যে চারটি ইউনিয়নের ওয়ার্ডগুলোতে ৭৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি চারটি ইউনিয়নের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আমরা খুব দ্রুত এই জায়গার রাস্তা-ঘাট, অলি-গলি ব্যবহার উপযোগী করব। ১৮ ওয়ার্ডের রাস্তা মানুষের চলাচলের উপযোগী করব। সাঈদ খোকন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রকল্প হাতে নিয়েছে, সেই কাজ শেষ হলে এলাকায় জলাবদ্ধতা থাকবে না। একটি পরিকল্পিত শহর হিসেবে এই ১৮ ওয়ার্ডকে গড়ে তুলতে চাই। বিশ্বব্যাংকের মতামত অনুযায়ী, ঢাকার বিদ্যমান সমস্যার সমাধান পূর্ব দিকে অর্থাৎ নবগঠিত ওয়ার্ডগুলোর জায়গা রয়েছে। এই এলাকাকে আমরা সুপরিকল্পিত নগরায়ণ করতে চাই। এজন্য একটি প্রকল্প তৈরি করতে যাচ্ছি। দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে বরাবর বড় সড়ক তৈরির মধ্য দিয়ে এলাকার মূল যাতায়াত নিশ্চিত করব। সেখানে ব্যাপক জমি অধিগ্রহণ লাগবে। এতে সবার সহযোগিতা চাই। এছাড়া খুব অল্প সময়ের মধ্যে সরকারী সংস্থা পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম) নবগঠিত ওয়ার্ডগুলো নিয়ে মাস্টারপ্ল্যান করছে জানিয়ে মেয়র বলেন, খুবই অল্প সময়ের মধ্যে ৭/১০ দিনের মধ্যে মাস্টারপ্ল্যান উপস্থাপন করবে সংস্থাটি। এই প্রকল্প উপস্থাপনের পর সেই প্ল্যান কাউন্সিলরদের দেব। ওই প্ল্যান এলাকার মানুষের মতামতের ভিত্তিতে একনেক সভায় পাঠাব। অনুমোদন হলে কাজ শুরু হবে। এই প্রজেক্ট হবে অবকাঠামো ও স্যুয়ারেজ সিস্টেম নিকাশী পদ্ধতি উন্নয়নের জন্য। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ইতোমধ্যে ইটিপি করেছি। অন্যান্য সেবাগুলোর আওতায় এই এলাকা নিয়ে আসতে চাই। এই ১৮ ওয়ার্ডকে মডেল শহর হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। তবে দুই তিন বছরে এটা হবে বললে বাস্তবতা হবে না। একটা শহর পরিণত হতে ৫০, ৬০, ১০০ বছর সময় লাগে। মেয়র বলেন, এ বছরও ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় জলাবদ্ধতা হতে পারে। তবে আগের বছরের তুলনায় কিছুটা হলেও কম হবে। আমরা দক্ষিণের সীমানায় শান্তিনগর ও পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দীন রোডের ৪০ থেকে ৫০ বছরের জলাবদ্ধতা সমস্যা দূর করতে সক্ষম হয়েছি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, আসন্ন বর্ষায় জলাবদ্ধতা নিরসনে আমাদের নিয়মিত কাজ ড্রেন পরিষ্কার, সেগুলো অব্যাহত রয়েছে। এপ্রিলের শেষ নাগাদ ড্রেন পরিষ্কারের কাজ শেষ হবে। তবে জলাবদ্ধতা নিরসনের মূল কাজটা করে ঢাকা ওয়াসা। এছাড়া সিটি কর্পোরেশন, রাজউকসহ অন্যান্য সংস্থা ছোটখাটো কাজগুলো করে থাকে। নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে ডিএসসিসি এলাকার ২৯২ কিলোমিটার ড্রেন পরিষ্কার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এপ্রিলের শেষ নাগাদ পরিষ্কার করতে সক্ষম হব।
×