ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সবুজ বৃক্ষ, সুন্দর স্থাপত্য ফোয়ারা, মিনি পুকুর-দর্শনার্থীর ঢল

প্রকাশিত: ১১:১৫, ৯ এপ্রিল ২০১৯

সবুজ বৃক্ষ, সুন্দর স্থাপত্য ফোয়ারা, মিনি পুকুর-দর্শনার্থীর ঢল

বাবুল হোসেন ॥ ময়মনসিংহের পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদ পারের নৈসর্গিক পরিবেশের সুন্দর ও আধুনিক স্থাপত্য শৈলীর দৃষ্টিনন্দন রিসোর্ট সিলভার ক্যাসেল ও এর বৃক্ষরাজির ছায়া ঘেরা সবুজ শীতল পরিবেশের প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখতে প্রতিদিন ব্যস্ত নগরবাসীসহ ভিড় জমাচ্ছেন নানা বয়সী ও শ্রেনী পেশার শত শত মানুষ। আসছেন দেশী বিদেশী পর্যটকরাও। রিসোর্ট প্রাঙ্গণকে দর্শনার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে করা হয়েছে জলের ফোয়ারা, শান বাঁধানো মিনি পুকুর, সুইমিং পুল, লাভ গার্ডেন, বর্ণাঢ্য বাহারি ছাতার শেড, দোলনা, হারিয়ে যাওয়া পাখির খামারসহ নানান কিছু। আছে রিসোর্ট লাগোয়া ব্রহ্মপুত্রের ঘাটে বাধা স্পীডবোট। আধুনিক সাউন্ড সিস্টেমযুক্ত হলরুম ও উন্মুক্ত মঞ্চ। রাজ্যের সব বনজ ও ওষুধি বৃক্ষরাজিসহ বাহারি রঙিন ফুলের সাজানো বাগান করা হয়েছে রিসোর্ট প্রাঙ্গণের শোভা বর্ধন করতে। পাথর ও কংক্রিটের ওপর রং দিয়ে তৈরি করা কৃত্রিম গাছপালার আড়ালে নির্মাণ করা হয়েছে নানা কর্নার। বারবিকিউ ও ফাস্টফুডের স্বাদ নিতে আসা দর্শনার্থীদের বসার জন্যও রয়েছে নানা আয়োজন। রাতে রিসোর্ট প্রাঙ্গণকে আলো আধারির আবহে আলো ঝলমলে রাখতে সাজানো হয়েছে বাহারি রঙিন বাতির ব্যবহার করে। মূলত ব্রহ্মপুত্র পাড়ের এমন অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতেই রিসোর্ট চরিত্রের এই হোটেলে আসছেন ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকরা। আর স্থানীয়রা ভিড় জমাচ্ছেন ব্যস্ত নগর জীবনের ক্লান্তি দূর করে স্বস্থির নিঃশ্বাস নিতে। পিকনিক স্পর্ট হিসেবেও বেছে নিচ্ছেন অনেকে এই রিসোর্টকে। ফলে বছরজুড়ে জমজমাট থাকছে এই রিসোর্ট প্রাঙ্গণ। আর ছুটির দিনসহ শীতকালে এই ভিড় আরও বাড়ছে। রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবী আনোয়ারুল ইসলাম বেগ জানান, পর্যটকদের কাছে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের নগরী ময়মনসিংহকে পরিচয় করিয়ে দিতেই এই উদ্যোগের আয়োজন। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক বাহক প্রাচীন নগরী ময়মনসিংহ শহর থেকে মাত্র ছয় কিলোমিটার দূরে পুরনো ব্রহ্মপুত্র পাড়ে এক দশমিক পাঁচ একর জমিতে গত ২০১১ সালে গড়ে তোলা হয় আধুনিক ও সুন্দর স্থাপত্য শৈলীর রিসোর্ট সিলভার ক্যাসেল। এর ডিজাইনার রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ারুল ইসলাম বেগ নিজেই। থাইল্যান্ড ও চীনের স্থাপত্য শৈলীর আদলে দেশীয় মিস্ত্রি দিয়ে টালির ইট, রঙিন কাচ ও স্টিল স্ট্রাকচারসহ মার্বেল পাথরের সিড়ি এবং মেঝেতে দেশীয় আধুনিক সব টাইলস ব্যবহার করে নির্মাণ করা হয়েছে বর্ণাঢ্য ও দৃষ্টিনন্দন চারতলার হোটেল কাম রিসোর্ট। হোটেলের ভেতরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ২৭টি ডাবল বেডের কক্ষ ছাড়াও অনুষ্ঠানাদি ও সেমিনারের জন্য আধুনিক সাউন্ড সিস্টেমের হলরুম, রান্নাঘর রয়েছে। রিসোর্টের ম্যানেজার মোঃ শরীফ জানান, হোটেলের প্রতিটি কক্ষের ভাড়া ৩৫০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। বোর্ডারদের জন্য গাড়ি পার্কিং সুবিধা ছাড়াও রয়েছে সুইমিং পুলসহ ব্রহ্মপুত্র নদে স্পীডবোট ব্যবহার ও সকালের নাস্তার সুবিধা। আছে ওয়াইফাই তথ্যপ্রযুক্তির নেট সুবিধা। নিজস্ব সিকিউরিটি ও ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার নজরদারি। এসব সুবিধা নির্ধারিত ভাড়ার সঙ্গেই যুক্ত। হোটেল কাম রিসোর্টটির নির্মাণ শৈলী এমনভাবে করা হয়েছে যে, প্রতিটি ফ্লোর থেকেই পুরো ব্রহ্মপুত্র নদ, নদের ওপারের চরের গ্রাম ও ভাদ্র আশ্বিন মাসে কাশবনসহ বছরজুড়ে আবহমান বাংলার ভিউ দেখা যায়। রিসোর্টের ভেতরে বাইরে দর্শনার্থীদের কাছে আবহমান বাংলার গ্রামীণ জীবনের ছবি মেলে ধরতে পাটের তৈরি শিকায় থরে থরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে মাটির বর্ণাঢ্য হাড়ি পাতিল। রিসোর্টের উত্তরপাশ দিয়ে বয়ে চলা ব্রহ্মপুত্র নদের পাশ ছাড়া বাকি তিন পাশ সাজানো হয়েছে বাহারি গোলাপ, গাঁদা, বেলি, চেরি পাতাবাহার, জবা, শাপলা, ফুল, আম, লিচু, পেয়ারা, নারকেল, মাল্টা, পেঁপে, ফলদ আর বনজ পামট্রি, ক্রিসমাস সেগুন ও ওষুধি তুলসি তেজপাতা মেহেদীসহ নানান বৃক্ষরাজিতে। ফুল, ফলদ ও বনজসহ ওষুধি বৃক্ষরাজির জন্য আলাদা কর্নার তৈরি করে প্রতিটি কর্নারকে আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন করে তুলতে সাজানো হয়েছে বর্ণাঢ্য করে। ঘন সবুজ বৃক্ষরাজিতে ঘেরা এসব কর্নারের ভেতর দর্শনার্থীদের বসার জন্য পাথর ও কংক্রিটের ওপর বাহারি রংয়ের প্রলেপ দিয়ে করা হয়েছে চেয়ার টেবিল দোলনার ব্যবস্থা। আছে শান বাঁধানো মিনি পুকুর, জলের ফোয়ারা ও লাভ গার্ডেন। রিসোর্ট প্রাঙ্গণে সুইমিং পুলের ব্যবস্থা কেবল বোর্ডারদের জন্য। প্রবেশদ্বার পেরিয়ে রিসোর্টে ওঠার পথে কাঠের পাটাতনের সিড়ির নিচে চোখে পড়বে বর্ণাঢ্য সাজানো ঝর্ণা কাম মিনি পুকুর। রিসোর্টের ফটকের সামনেও চোখে পড়বে আরেকটি দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারা। এর আগে এক পাশে হারিয়ে যাওয়া পাখি ঘুঘু, টিয়া, কালেম, মুনিয়া, কাকাতোয়াসহ খাচায় গড়ে তোলা পাখির খামার। আছে খরগোশ, কবুতর, রাজহাস, দেশী মুরগি পর্যন্ত। আরেক পাশে বারবিকিউ ও ফাস্টফুডের রেঁস্তরা। রেঁস্তরাকে ঘিরে সাজানো হয়েছে বাহারি রংয়ের ছাতার শেড, কৃত্রিম গাছপালার নিচে কংক্রিটের বেঞ্চ, দোলনা, বিশাল আকৃতির টবের ভেতর লাল পদ্ম। টবের পানিতে লাগিয়ে রাখা লাল পদ্মফুল ফুটে আছে অপার সৌন্দর্য মেলে ধরে। পাখির খামারের পাশে উন্মুক্ত মঞ্চ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজন দেখা যায় এই মঞ্চে বছর জুড়ে। এসবের বাইরে পুরো রিসোর্ট প্রাঙ্গণের ফাঁকে ফাঁকে শোভা পাচ্ছে কংক্রিটের তৈরি নানা প্রজাতির বন্য প্রাণী আর বৃক্ষরাজি। সন্ধ্যা নেমে আসার সঙ্গে সঙ্গে আলো আধারির আবহে মিটি মিটি বাতির আলোয় ঝলমলে হয়ে উঠছে রিসোর্ট প্রাঙ্গণ। আর প্রধান সড়ক থেকে রিসোর্টে যাওয়ার পথে, প্রধান ফটকের পথে শোভা বর্ধনে রাখা হয়েছে বাহারি রংয়ের পাতাবাহারসহ বাহারি সবুজ বৃক্ষরাজি। প্রাকৃতিক পরিবেশ পাওয়ায় পাখিরাও ভিড় জমাচ্ছে রিসোর্ট প্রাঙ্গণে। ফলে পাখির কলকাকলিতেও মুখর থাকছে সকাল সন্ধ্যা বেলা। বোর্ডারের বাইরে প্রতিদিন বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত স্থানীয় নগরবাসী পরিবার পরিজন নিয়ে সুন্দর স্থাপত্য শৈলী ও কারুকার্যের এই দৃষ্টিনন্দন রিসোর্ট দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন। এ সময় অনেকে স্পীড বোটে করে ব্রহ্মপুত্র নদ ঘুরে বেড়ানোর আনন্দও উপভোগ করছেন। উত্তরবঙ্গের রাজশাহী থেকে স্ত্রী সন্তান নিয়ে বেড়াতে আসা মামুন রশিদ জানান, ব্রহ্মপুত্র পারের রিসোর্টটি চমৎকার। মন ভরে যায়। পরিবার পরিজন নিয়ে বেড়ানোর মতো পরিচ্ছন্ন জায়গাটি অপার সম্ভাবনা রয়েছে। আরও কিছু সুযোগ সুবিধা বাড়ানো গেলে পর্যটকদের ভিড় আরও বাড়বে বলে জানান এই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার আনোয়ারুল ইসলাম বেগ জানান, পর্যটকদের জন্য ভালমানের কোন হোটেল কিংবা কোন রিসোর্ট ছিল না ময়মনসিংহে। অথচ ময়মনসিংহ বেড়াতে আসছে প্রতিবছর অসংখ্য পর্যটক। শিল্পাচার্য জয়নুল জাদুঘর, জমিদারদের দৃষ্টিনন্দন রাজবাড়ি, প্রকৃতির কন্যা বলে খ্যাত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ব্রহ্মপুত্র নদসহ দেখারও আছে অনেক কিছু। অথচ পর্যটকদের সুন্দর পরিবেশে থাকার জায়গার ছিল একটি সঙ্কট। মূলত এমন একটি সঙ্কট কাটিয়ে পর্যটকদের কাছে ঐতিহ্যের নগরী ময়মনসিংহকে পরিচয় করিয়ে দিতেই তার এই উদ্যোগ বলে জানালেন। আগামীতে রিসোর্টে আরও সুযোগ সুবিধাসহ সম্প্রসারণ করার কথাও জানান তিনি।
×