ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাংচুরে জড়িত ব্যক্তিই ডুমুরিয়ায় নৌকার প্রার্থী!

প্রকাশিত: ১১:০৭, ৯ এপ্রিল ২০১৯

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাংচুরে জড়িত ব্যক্তিই ডুমুরিয়ায় নৌকার প্রার্থী!

বিভাষ বাড়ৈ ॥ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এমনকি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিও জানেন না অথচ তিনিই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নৌকার প্রার্থী। অন্তত ১৬ মামলা, এমনকি বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে খুলনা বেতার কেন্দ্রে জাতির জনকের ভাস্কর্য ভাংচুরের সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনিই আওয়ামী লীগের প্রার্থী। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, পেছনের দরজা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে তাকে প্রার্থী করা হয়েছে। প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে মাঠ পর্যায়ে তোলপাড় করা এ ঘটনা ঘটেছে খুলনার ডুমুরিয়ায়। প্রার্থী মোস্তফা সারোয়ারের বিরুদ্ধে খোদ আওয়ামী লীগ নেতাদের একের পর এক অভিযোগ আসার পর বিকল্প চিন্তাও করছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ আসায় হতাশ প্রার্থী মোস্তফা সারোয়ার বলছেন, ‘আমি যদি অপরাধী হই তাহলে নেত্রী যেন আমার বিচার করেন। কিন্তু বিনা অপরাধে আমাকে বিভিন্ন মহল থেকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করা হচ্ছে।’ শুধু এই একটি উপজেলাই নয়, দেশের বেশ কিছু উপজেলায় নৌকার প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে ক্ষোভ আছে জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর মধ্যে। ব্যাপক অসন্তোষ থাকলেও অনন্যোপায় সমর্থকরা প্রার্থীকে মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে ডুমুরিয়ার ঘটনা নিয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেছেন সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান এমপি নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। অভিযোগ, স্থানীয় আওয়ামী লীগের কোন পদে না থাকলেও মোস্তফা সারোয়ার নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন খুলনার ডুমুরিয়ায়। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় এমপি নারায়ণ চন্দ্র চন্দসহ আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। চন্দ বলেন, স্থানীয় কোন পদে না থেকে এবং স্থানীয় কোন তালিকায় তার নাম না থাকলেও সে কিভাবে মনোনয়ন পায়, এটাই ভাবার বিষয়। ’৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর তার হত্যাকারীরা দেশের ইতিহাস থেকে তার নাম মুছে ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা হয় নতুন প্রজন্মের সামনে। এ সময় খুলনা বেতার কেন্দ্রে স্থাপন করা হয় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য। ২০০১ সালে জামায়াত-বিএনপি ক্ষমতা গ্রহণ করলে বঙ্গবন্ধুর এই ভাস্কর্যে ভাংচুর চালানো হয়। এ সময় ভেঙ্গে ফেলা হয় ভাস্কর্যের ওপর থাকা লাইটশেড। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় এসে এই ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ডিসি অফিস বরাবর আবেদন করে খুলনা বেতার কর্তৃপক্ষ। সেখানে ভাংচুরের জন্য দায়ী করা হয় সাংবাদিক মোস্তফা সারোয়ারকে। দায়ীদের তালিকায় ছিলেন জামায়াত নেতা সাঈদীর শিষ্য আব্দুস সাত্তার শেখ, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের খুলনা শাখার সভাপতি তরিকুল ইসলাম তরুসহ বিএনপি-জামায়াতের বেশকিছু নেতাকর্মী। এমন অবস্থায় এবার মোস্তফা সারোয়ারের মনোনয়ন পাওয়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। তারা কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর একটি চিঠিও দেন। ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে জামায়াত-বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ত কেউ কীভাবে নৌকা প্রতীক পায় তা নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। খুলনা-৫ আসনের এমপি নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এ বিষয়ে বলেন, মোস্তফা সারোয়ার ডুমুরিয়া আওয়ামী লীগের সদস্য নয়, কোন পদেও নেই। আমি উপজেলা সভাপতি হিসেবেও তার নাম কেন্দ্রে পাঠাইনি। মজার বিষয় হলো, খুলনা জেলা আওয়ামী লীগ থেকে এই উপজেলার জন্য যে চারটি নাম গেছে তার মধ্যেও ‘মোস্তফা সারোয়ারের’ নাম নেই। আমি কিছুদিন দেশের বাইরে ছিলাম। গত ৪ তারিখ দেশে ফিরে দেখলাম মোস্তফা সারোয়ার মনোনয়ন পেয়েছে। আসলে ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে এ ধরনের মনোনয়ন মেনে নেয়া কষ্টকর। তিনি বলেন, এই মোস্তফা ২০০১ সালে খুলনা বেতার কেন্দ্রে অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাংচুরের ঘটনায় সরাসরি জড়িত। এটি খুলনার প্রতিটি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী জানে। তার বিরুদ্ধে খুলনা বেতার কেন্দ্র থেকে লিখিত অভিযোগও ডিসির কাছে করা হয়, সেই অভিযোগপত্রের কপিও রয়েছে। এ বিষয়ে ২০০৯ সালে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেই কমিটি কোন প্রতিবেদন দাখিল করেনি। বিএনপির আলী আসগর লবির সঙ্গে মিলে স্থানীয় ত্রাস সৃষ্টিকারী এই সারোয়ারের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা রয়েছে। দেশে ফেরার পর এ বিষয়ে আমি নেত্রীকে অবগত করেছি। তিনি বিষয়টি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন এবং সেখানে এই জামায়াত-বিএনপি ঘরানার ব্যক্তির পরিবর্তে শাহজান হোসেন জোয়ার্দারকে মনোনয়ন দেয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। কিন্তু বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে জানানো হলে তারা জানায়, মনোনয়ন দাখিলের সময় শেষ। এর পর মোস্তফা সারোয়ারকে নৌকা প্রতীক দেয়া হয়। এ অবস্থায় হাইকোর্টে আবেদন করা হয়েছে। আগামীকাল ১০ এপ্রিল পর্যন্ত এই উপজেলার নির্বাচন মুলতবি ঘোষণা করা হয়েছে। এখন দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কি হয়?
×