ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

করের আওতা বাড়বে

প্রকাশিত: ১১:০৬, ৯ এপ্রিল ২০১৯

করের আওতা বাড়বে

এম শাহজাহান ॥ সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে করহার নির্ধারণে বড় কোন পরিবর্তন করা হচ্ছে না। বরং চাল, ডাল, পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল ও চিনির মতো নিত্যপণ্যের ভ্যাটহার কমানো হবে। তবে রাজস্ব আয় বাড়াতে করের আওতা বাড়ানোর উদ্যোগ থাকবে বাজেটে। প্রতিটি বিভাগীয় ও জেলা শহরের পাশাপাশি দেশের ৮২টি উপজেলায় আয়কর অফিস রয়েছে। এটির সংখ্যা বাড়িয়ে ৩০০ উপজেলায় কর আদায়ের নিজস্ব অফিস করতে চায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এছাড়া ভ্যাট ও শুল্ক বিভাগের মতো কর বিভাগেও পৃথক গোয়েন্দা বিভাগ চালু করাসহ একগুচ্ছ পরিকল্পনা রয়েছে এনবিআরের। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, নতুন কর্মসংস্থানে সরকারী বিনিয়োগ বাড়ানো, নাগরিক সেবা বৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য বিমোচনের মতো কর্মসূচী বাস্তবায়নে সরকারকে প্রতিবছর বাজেটের আকার বাড়াতে হচ্ছে। কিন্তু সেই তুলনায় রাজস্ব আদায় বাড়ছে না। আবার যারা নিয়মিত কর দিচ্ছেন তাদের ঘাড়েও বাড়তি করের বোঝা চাপিয়ে দিতে চায় না জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ লক্ষ্যে সবাইকে স্বস্তির মধ্যে রেখে কর ও ভ্যাট আদায়ের কৌশল গ্রহণ করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সম্প্রতি প্রাক-বাজেট সংক্রান্ত এক বৈঠক শেষে জনকণ্ঠকে বলেন, নতুন বাজেটে ভ্যাট ও ট্যাক্স বাড়ানো হচ্ছে না। বাজেট হবে সবার জন্য স্বস্তিদায়ক। এমনকি ভোগ্যপণ্যের মতো নিত্যপণ্যের ভ্যাট কমানো হবে। তিনি বলেন, কর না বাড়িয়ে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ানো সম্ভব। এজন্য করের আওতা বাড়ানো হচ্ছে। কর প্রদানে সক্ষম এরকম প্রতিটি ব্যক্তি যাতে করের আওতায় আসে সেদিকে এনবিআরকে সবচেয়ে বেশি নজর দিতে হবে। তিনি বলেন, আগামী জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হবে। তবে ভ্যাট হার এক হবে না। পণ্যভিত্তিক আলাদা ভ্যাট হার হবে। এ নিয়ে ব্যবসায়ীসহ সব অংশীজনকে নিয়ে আলাপ-আলোচনা করা হয়েছে। এদিকে ভ্যাট ও শুল্ক বিভাগের মতো কর বিভাগেও গোয়েন্দা বিভাগ চালু করা, উৎস কর আদায় ব্যবস্থাপনাকে যুগোপযোগী করতে আলাদা বিশেষায়িত ইউনিট স্থাপন ও অনলাইন ট্যাক্স ব্যবস্থাপনার জন্য আলাদা অধিদফতর প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর। শুধু তাই নয়, বহুজাতিক কোম্পানির কাছ থেকে যথাযথ কর আদায় ও ট্রান্সফার প্রাইসিং ব্যবস্থা তদারকির লক্ষ্যে বিশেষায়িত ইন্টারন্যাশনাল ট্যাক্স ইউনিটসহ বেশকিছু উদ্যোগ নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি একটি প্রস্তাব সংবলিত প্রতিবেদন এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো হয়েছে। বিদ্যমান করদাতা ও আয়কর আদায় বাড়ানোর লক্ষ্যে কর কাঠামোয় সংস্কারের জন্য এনবিআর সদস্য আলমগীর হোসেনকে প্রধান করে ১৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি কয়েকটি সুপারিশসহ ওই প্রতিবেদন এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার কাছে জমা দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে কমিটির আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন বলেন, যাদের করযোগ্য আয় আছে, তাদের কর দিতে হবে। কর ফাঁকিবাজদের চিহ্নিত করতে দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা চলছে। এজন্য আধুনিক কর প্রশাসন প্রয়োজন। উপজেলা পর্যায়ে কর অফিস বিস্তৃত করা হলে করযোগ্য ব্যক্তিদের করের আওতায় আনা সহজ হবে। এনবিআরের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে কর শনাক্তকরণ নম্বরধারীর (ই-টিআইএন) সংখ্যা ৩৬ লাখের কিছু বেশি। এর মধ্যে গত তিন বছরেই নতুন করে করের খাতায় নাম লিখিয়েছেন ১৫ লাখের ওপরে। যাদের বেশিরভাগ চাকরিজীবী। করযোগ্যদের করের আওতায় আনতে কয়েক বছর ধরে সরকার বাজেটে বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে। ফলে টিআইএনধারী বেড়েছে। তবে এনবিআর মনে করছে, দেশের ১৭ কোটি মানুষের দেশে কর দেয়ার সামর্থ্য রয়েছে অন্তত ১ কোটি মানুষের। অন্যদিকে ৩৬ লাখ টিআইএনধারী হলেও গত করবর্ষে আয়কর বিবরণী দাখিল করেছেন ১৮ লাখের মতো। অর্থাৎ বাদবাকি ১৮ লাখ টিআইএনধারীর তথ্য জানতে পারেনি এনবিআর। এসব টিআইএনধারীর বিষয়েও খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে সংস্থাটি। জানা গেছে, আগামী বাজেটে ঢাকবাড়িওয়ালাদের করের আওতায় আনার উদ্যোগ রয়েছে। এনবিআর চেয়ারম্যান মোঃ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া জানিয়েছেন, বাজেট লক্ষ্য পূরণে করের আওতা বাড়াতে এনবিঅএ পরিকল্পাননিয়েছে। ঢাকা শহরের যত ফ্ল্যাট ও বাড়ি আছে, এগুলো জরিপ করা হবে। এই ফ্ল্যাট ও বাড়ির মধ্যে থাকা ভাড়াটে ও ফ্ল্যাটের মালিকদের সবাইকে রিটার্নের মাধ্যমে করের আওতায় নিয়ে আসতে কাজ শুরু করা হয়েছে। এজন্য এনবিআরের একটি টিম কাজ করছে। পাশাপাশি ঢাকার অফিসগুলোর বৃদ্ধি করে উপজেলা পর্যায়ে নেয়া হবে। উপজেলার রিসোর্স সেন্টার, ব্যবসায়ী এবং জনপ্রতিনিধিদের করের আওতায় আনার বিষয়ে নজর দেবে কর্মকর্তারা। তিনি বলেন, বিশ্বায়নের ফলে আগামীতে কাস্টমস ডিউটি কমবে। তআমাদের ইনকাম ট্যাক্সকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।
×