ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আবদুল্লাহ হারুন জুয়েল

আলজাজিরার প্রশ্নবিদ্ধ নৈতিকতা এবং সন্ত্রাসবাদে মদদদানের নেপথ্যে

প্রকাশিত: ০৯:১৭, ৯ এপ্রিল ২০১৯

আলজাজিরার প্রশ্নবিদ্ধ নৈতিকতা এবং সন্ত্রাসবাদে মদদদানের নেপথ্যে

আত্মঘাতী হামলার সময় নারীদের হিজাব পরিধান করার শরিয়তগত কোন বাধ্যবাধকতা আছে কি? আলজাজিরায় প্রচারিত ‘শরিয়া ও জীবন’ নামের ধারাবাহিক একটি অনুষ্ঠানে মুসলিম ব্রাদারহুড নেতা ইউসুফ আল কারাদাবিকে ঠিক এই প্রশ্নটি করা হয়েছিল। আপাতদৃষ্টিতে এটি কোন উৎসুক মুসলিম দর্শকের স্বাভাবিক জিজ্ঞাসা মনে হতে পারে, কিন্তু আত্মঘাতী হামলা ইসলামী শরিয়তে অনুমোদিত কিনা সেই প্রশ্নটি কি মীমাংসিত? সারা বিশ্বে পরিচিত এবং বহু দেশে প্রচারিত একটি গণমাধ্যমে সাধারণ মুসলিমদের কাছে ইসলাম সম্পর্কে ভ্রান্ত বার্তা প্রচারের উদ্দেশ্য কি হতে পারে? একটি মিডিয়ার বিরুদ্ধে যদি ক্রমাগত সন্ত্রাসবাদে পৃষ্ঠপোষকতা ও মদদ দানের অভিযোগ আসে, তাহলে জনগণের জীবনের নিরাপত্তার স্বার্থেই তা উপেক্ষা করা যায় না। উপরন্তু ওই সংবাদ-মাধ্যমের আদর্শ, নৈতিকতা ও দায়বদ্ধতা প্রশ্নবিদ্ধ হলে তা জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচনার দাবি রাখে। আলজাজিরার উত্থান কাতারের আমির শেখ হামাদ বিন খলিফা আল থানি ১৯৯৬ সালে বিপুল অংকের বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠা করেন আলজাজিরা। পরোক্ষভাবে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন হলেও প্রথমদিকে দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ না করে সংবাদ প্রচার করায় জনপ্রিয়তা পায়। আলজাজিরা সারা বিশ্বে আলোচিত হয় ওসামা বিন লাদেনের সাক্ষাতকার ও আল কায়েদা সংশ্লিষ্ট খবর প্রচারের মাধ্যমে। ২০১৩ সালে আফগানিস্তানের উগ্রপন্থী সংগঠন তালেবান কাতারে রাজনৈতিক কার্যালয় খোলে। এরপর থেকে আল কায়েদা, মুসলিম ব্রাদারহুড ও আইএসসহ বিভিন্ন জঙ্গীগোষ্ঠীর বিশ্বের কাছে বার্তা দেয়ার মাধ্যম হয়ে ওঠে আলজাজিরা। কাতার চ্যারিটিসহ কয়েকটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জঙ্গী সংগঠনকে আর্থিক সহায়তা দেয়ার তথ্যপ্রমাণও প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। গত কয়েক বছরে সুস্পষ্ট হয়েছে যে, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুড ও সমমনাদের অলিখিত মুখপত্রে পরিণত হয়েছে আলজাজিরা। এর লক্ষ্য বিভিন্ন মুসলিম দেশে আদর্শিক মিত্রদের শাসন ক্ষমতা পেতে সহায়তা করা। আলজাজিরার সন্ত্রাসবাদী মতাদর্শ আলজাজিরায় বিভিন্ন সন্ত্রাসী তৎপরতার ভিডিও-চিত্র প্রচারিত হয়। জঙ্গী নেটওয়ার্কের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে সন্ত্রাসী হামলার আগেই সেখানে পৌঁছে যায় জাজিরার প্রতিনিধি, কিংবা তাদের কাছে পৌঁছে যায় ভিডিও। সন্ত্রাসী তৎপরতার খবর পেয়ে তা বন্ধে ভূমিকা রাখা উচিত, নাকি চ্যানেলের টিআরপির জন্য ওই ঘটনার ভিডিও ধারণ করা উচিতÑ এ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বহুবার। আফগানিস্তানে আল কায়েদা কর্তৃক পরিচালিত অপারেশন, আত্মঘাতী হামলা, ২০০৭ সালের ৭ জুলাই-এ লন্ডনে আত্মঘাতী বোমা হামলা ইত্যাদি ঘটনা একমাত্র আলজাজিরায় প্রচারিত হয়েছিল। লন্ডন ব্রিজে হামলাকারীর মায়ের ভাষ্য ছিল, আলজাজিরার কারণে উগ্রবাদী মতাদর্শে অনুপ্রাণিত হয় হামলাকারী। অনেকে আলজাজিরাকে কাতারের ফরেন পলিসির প্রতিফলন বলে মনে করে। এমন হলে খুব বেশি শঙ্কার বিষয় হতো না, কিন্তু বিষয়টি এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। আলজাজিরা নিয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষকরা বোধহয় একটি বিষয় বিবেচনায় আনেননি, আর তা হচ্ছে, এটি কোন সাধারণ গণমাধ্যম নয়, বরং একটি রাজনৈতিক মতাদর্শের মুখপত্র। ক্ষমতা দখলের ইসলাম এক শ’ বছর আগেও মুসলিমরা জিহাদ বলতে যুদ্ধ মনে করত না। কোরান ও হাদিসের আলোকে ক্ষমতা দখলের সঙ্গে ইসলামের তথা সাধারণ মুসলিমদের প্রত্যক্ষ কোন সম্পর্ক নেই। ইসলাম সম্পর্কে ১৪শ’ বছরের ধারণা পাল্টে দিয়ে জামাল উদ্দিন আফগানি ও হাসান আল বান্না পলিটিক্যাল ইসলামের মতবাদ দেন। পরবর্তীতে এ ধারায় যুক্ত হন সৈয়দ কুতুব ও আবু আলা মওদুদী। কোরানের অপব্যাখ্যা করে এবং ইকামতে দ্বীন ও সংশ্লিষ্ট কোরানের আয়াতের মনগড়া অনুবাদ করে ‘ক্ষমতা দখলই ইসলাম এবং সকল মুসলিমদের ক্ষমতা দখলে যুক্ত থাকা বাধ্যতামূলক’ এই মর্মে মতবাদ প্রচার শুরু হয়। পৃথিবীর বহু দেশের অগণিত ছাত্র-যুবক জঙ্গীবাদী এই মতাদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে পথভ্রষ্ট হয়। সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় বিশ্বাসী এই মতাদর্শ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুড বা ইখওয়ানুল মুসলেমীন, তুরস্কের একে পার্টি এবং দক্ষিণ এশিয়ার জামায়াতে ইসলামী ইত্যাদি নামে এই মতাদর্শের অনুসারীরা সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু করে। সাধারণ অনেকে এই মতবাদের বিষয়বস্তু সম্পর্কেও অবগত নন। মতাদর্শ ও কর্মকা-ের আওতায় দলীয় লোকদের কর্মসংস্থান, দলের অধীনে বায়তুল মাল, মুতআ বিবাহ, দাসী সম্ভোগ ইত্যাদি সমর্থনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে আশঙ্কা ছিল না। কিন্তু ফ্রি ম্যাসন ও তাকিয়া ধারণার আলোকে গোপন সংগঠন/শাখা খোলা, প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করার কৌশল, ছদ্মবেশে অনুপ্রবেশ, ক্ষমতার জন্য সবকিছুই বৈধ ইত্যাদি বিতর্কিত ও নেতিবাচক কার্যক্রমকে নীতি হিসেবে গ্রহণ করে এ মতবাদ বিকশিত হয়েছে। বিশ্বের সকল শীর্ষ মুসলিম স্কলার এই মতাদর্শকে বাতিল বলে মন্তব্য করেছেন। অনেকে নতুন ধর্ম হিসেবেও অভিহিত করেছেন। ওলামায়ে দেওবন্দ, সুন্নাত ওয়াল জামাত ও সুফিবাদের অনুসারী শীর্ষ আলেমরা মওদুদী ও সৈয়দ কুতুব গংকে কাফের এবং এই মতাদর্শকে ভ্রান্ত ও কুফরি মতবাদ হিসেবে ফতোয়াও দিয়েছেন। কিন্তু অর্থ ও রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে ওঠেনি। মুসলিম ব্রাদারহুড সমমনাদের মুখপত্র আলজাজিরা আলজাজিরা প্রকৃতপক্ষে মুসলিম ব্রাদারহুড ও সমমনাদের প্রচার মাধ্যম। সাংবাদিক হিসেবে যাদের রিক্রুট করা হয় তাদের উল্লেখযোগ্য অংশ ওই মুসলিম ব্রাদারহুডের রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসারী। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, ২০১১ সালে আলজাজিরায় দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর যুদ্ধাপরাধ, প্রতারণা ও ধর্মান্তরিত করার নাটক নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রচারিত হয়েছিল। অথচ সেই আলজাজিরা অল্প সময়ের ব্যবধানে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নেয়। আর এই অবস্থান পরিবর্তনের কারণ সাংবাদিক/প্রতিনিধি হিসেবে জামায়াত শিবির সমর্থকদের নিয়োগ দান। বিশ্বের যে সকল দেশে মুসলিম ব্রাদারহুড বা সমমনা সংগঠন রয়েছে, সেখানেই ক্রমান্বয়ে ওই সংগঠনের কর্মী-সমর্থকদের সাংবাদিক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বিকৃত ও ভয়ঙ্কর উগ্রবাদী ধারণা নিয়ে প্রসারিত এই রাজনৈতিক মতাদর্শ যেখানে যাবে, সেই স্থানই হয়ে পড়বে অরক্ষিত ও ঝুঁকিপূর্ণ। বিষয়গুলো এখনও অনেকে অনুধাবন করছেন না অথবা ভাবতেও পারছেন না, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় বিশ্বাসী এই গোষ্ঠী অচিরেই বিশ্বের জন্য চরম হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। নৈতিকতা বর্জন ও দ্বৈতনীতি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এই গণমাধ্যম সকল দেশের রাজনীতি নিয়ে উদ্বিগ্ন হলেও, নিজ দেশ সম্পর্কে উদাসীন। তারা নীরব এরদোগানের সাংবাদিক ও সংবাদ-মাধ্যম নিপীড়নের বিরুদ্ধেও। কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী ও ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীদের পক্ষ নিতে তারা দ্বিধা করে না বিন্দুমাত্র। ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকার শাপলা চত্বরে হেফাজত কর্মীদের হত্যা করা হয়েছে, এই অপপ্রচারকে বিশ্বাসযোগ্য করতে একটি কবরস্থানের প্রতিবন্ধী কর্মীকে সূত্র হিসেবে উল্লেখ করে যে চরম মিথ্যাচার চালিয়েছিল, তা অনেকেই বিস্মৃত হননি। শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর বহু দেশে আলজাজিরা বিতর্কিত ও সমালোচিত হয়েছে। সাংবাদিকদের হলুদ সাংবাদিকতায় বাধ্য করা, জঙ্গীদের সঙ্গে যোগাযোগ করার নির্দেশ এবং অনৈতিকভাবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা ইত্যাদি অভিযোগ এনে আলজাজিরার ব্যুরো প্রধান মোহাম্মদ ফাহমিসহ মিসরে ২২ জন সাংবাদিক পদত্যাগ করেন। একই অভিযোগ এনে এবং জাজিরাকে অপপ্রচারের মেশিন হিসেবে অভিহিত করে পদত্যাগ করেন লিবিয়া প্রতিনিধি আলী হাশেম, বার্লিন প্রতিনিধি আখতাম সুলেমান। ধর্মীয় উস্কানি, জিহাদের অপব্যাখ্যা দিয়ে উগ্রবাদী ধারণা প্রচার, জঙ্গীদের দেশপ্রেমিক হিসেবে আখ্যা দেয়া, বোমা হামলা ও আত্মঘাতী হামলাকে জান্নাতের সফর বলে উল্লেখ করা সহ নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে বিতর্কিত অনুষ্ঠান প্রচারের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে আলজাজিরা। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দর্শক হারানোর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের সিইওসহ কর্মরত সাংবাদিকরা পদত্যাগ করলে যুক্তরাষ্ট্রের শাখা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। আলজিরিয়া থেকে ভারত : আলজাজিরায় নিষেধাজ্ঞা ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলার পর সন্ত্রাসীদের সমর্থনের অভিযোগ উঠেছিল আলজাজিরার বিরুদ্ধে। তবে প্রথম নিষিদ্ধ করা হয় আলজেরিয়ায়। ২০০৪ সালে পক্ষপাতদুষ্ট ও সহিংসতা সৃষ্টিতে উস্কানিমূলক সংবাদ প্রচারের অভিযোগে আল-জাজিরাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে আলজিরিয়া। একই বছর নিষিদ্ধ হয় ইরাকে। ২০১১ সালে মুসলিম ও খ্রীস্টানদের মধ্যে সহিংসতা সৃষ্টির অভিযোগে নিষিদ্ধ হয় মিসরে। ২০১৩ সালে ধর্মীয় বিভাজনে উস্কানির অভিযোগে ইরাকে আলজাজিরা নিষিদ্ধ হয়। সৌদি আরব, মিসর, বাহরাইন ও আরব আমিরাত অনেকদিন থেকে সন্ত্রাসবাদে পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ এনে আলজাজিরা বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছে। অনুরূপভাবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইসরাইল, লিবিয়া ও সিরিয়া আলজাজিরাকে জঙ্গী লালনকারী ও সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষক বলে অভিযোগ করে। আলজাজিরা ইস্যুতে বাক স্বাধীনতা ও সংবাদ-মাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চকণ্ঠ অনেকেরই সম্প্রতি মোহভঙ্গ হয়েছে। ২০১৫ সালে আলজাজিরায় প্রচারিত একটি প্রতিবেদনে ভারত অধিকৃত কাশ্মীরকে পাকিস্তানের অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে মানচিত্র দেখানো হয়। ভারতের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানোর পরও আরেকটি পর্বে একই মানচিত্র প্রচার করায় পাঁচ দিনের জন্য ব্যান করা হয়। সম্প্রতি কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে উস্কানিমূলক সংবাদ প্রচারের অভিযোগে আলজাজিরার সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স বাতিল করেছে ভারত। আলজাজিরা এ যাবত তাদের বিতর্কিত কর্মকা-ের দায়ভার যুক্তরাষ্ট্রের ওপর কিংবা সৌদি আরব প্রভাবিত বলে সাফাই দেয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাদের কর্মকা- প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে প্রতিটি দেশেই। জঙ্গীগোষ্ঠীদের আর্থিক সহায়তা দেয়ার বিষয়ও চাপা থাকেনি। জাতিসংঘের মুখপাত্র আলজাজিরাকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, সংবাদ-মাধ্যমের স্বাধীনতা মানে নাগরিক জীবন বিপন্ন করা নয়। একটি গণমাধ্যমের খবর প্রকাশের পাশাপাশি নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে পারে। তাই বলে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রতিপক্ষ মনে করা হয় না। কিন্তু আলজাজিরা যে মতাদর্শে বিশ্বাসী, তা ভিন্ন একটি ধর্মীয় মতবাদের অনুরূপ। নতুন ধর্ম নামকরণের ঝুঁকি না নিয়ে ইসলামকেই পরিবর্তন করা এই মতবাদে ভিন্ন মতাবলম্বী মুসলিমদেরও তাদের প্রদত্ত সংজ্ঞা অনুসারে মুসলিম বলে গণ্য করা হয় না। তাদের বিশ্বাস অনুসারে কোন নবী রাসুলগণ দ্বীন কায়েমে সফল হননি, অতএব দ্বীন কায়েমে ক্ষমতা দখলের সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। সাধারণত রাজনৈতিক বা যে কোন আদর্শের অনুসারী হওয়ার সঙ্গে ধর্মের প্রত্যক্ষ কোন সম্পর্ক থাকে না। কিন্তু মুসলিম ব্রাদারহুড ও সমমনাদের রাজনৈতিক আদর্শে বপন করা হয়েছে ধর্মের বীজ। ব্রেনওয়াশ করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে যদি ধর্মের মোড়কে মোড়ানো হয় তখন অনুসারীরা আত্মঘাতী হামলা করতে বা জীবন উৎসর্গ করতেও দ্বিধা করে না। তাই আলজাজিরা বিশ্বের জন্য কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে তা বোধহয় এখনও আমরা অনুধাবন করতে পারিনি। তবে আমাদের চিন্তা করা প্রয়োজন, কেন গণমাধ্যমের ইতিহাসে আলজাজিরার মতো এত সমালোচিত গণমাধ্যম দ্বিতীয়টি নেই! অন্যদিকে, আলজাজিরা হয়ত তাদের নিজস্ব উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সফল, কিন্তু হলুদ সাংবাদিকতার প্রভাবে গণমাধ্যমের প্রতি মানুষের আস্থা ও নির্ভরশীলতার জায়গাটি নষ্ট হলে, তার প্রভাব পড়বে সামগ্রিকভাবে। সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, আলজাজিরা শুধু মধ্যপ্রাচ্যের ইস্যু নয়, বরং এর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিতর্কিত ভূমিকা সারাবিশ্বের শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ। তাই সঙ্কটের উৎস চিহ্নিত না করে উত্তরণের সুযোগ নেই। লেখক : কলামিস্ট, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ইমেইল : [email protected]
×