ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কক্সবাজার সদর হাসপাতাল ছাড়ছে রোগীরা

পাঁচদিন চিকিৎসা বন্ধ

প্রকাশিত: ১০:২৯, ৮ এপ্রিল ২০১৯

 পাঁচদিন চিকিৎসা বন্ধ

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ পাঁচ দিনেও কক্সবাজার সদর হাসপাতালের অপ্রীতিকর ঘটনার সমাধান হয়নি। ঘটনার সমাধান না হওয়ায় চিকিৎসক-নার্স ও কর্মচারীরা তাদের অবস্থানে অনড় রয়েছে। ফলে রবিবারও চিকিৎসা সেবা বন্ধ রয়েছে। জানা যায়, বৃহস্পতিবার ভুল চিকিৎসায় শহরের সমিতি পাড়ার আনোয়ার হোসেন নামে এক মৎস্য ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয় বলে দাবি স্বজনদের। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মৃতের স্বজনরা দুই ইন্টার্ন চিকিৎসককে মারধর করে। এ নিয়ে ডাক্তার-নার্সরা টানা পাঁচ দিন চিকিৎসা সেবা বন্ধ রেখেছে জেলার একমাত্র পূর্ণাঙ্গ সরকারী এই হাসপাতালে। চিকিৎসা সেবা বন্ধ থাকায় রোগীদের আর্তনাদে হাসপাতাল জুড়ে এক ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। চিকিৎসার জন্য গগনবিদারী কান্না করছে রোগীরা। কিন্তু রোগীদের এই আর্তনাদেও মন গলছে না চিকিৎসক-নার্সদের। তবে কর্তৃপক্ষের দাবি হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। এই পরিস্থিতি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে জেলার সর্বসাধারণ। একজনের কারণে পুরো হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা বন্ধ রাখায় দায়ী চিকিৎসক-নার্স ও কর্মচারীদের কঠোর শাস্তিরও দাবি জানাচ্ছেন লোকজন। রবিবার দুপুর ১টায় হাসপাতালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের বহির্বিভাগ, জরুরী এবং সব ওয়ার্ডের চিকিৎসা সেবা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে। কোথাও কোন চিকিৎসক-নার্স ও কর্মচারীর দেখা মিলেনি। চিকিৎসা সেবা বন্ধ থাকায় হাসপাতালের বেডে পড়ে থেকে কাতরাচ্ছে বেশ কিছু রোগী। চিকিৎসা না পেয়ে রোগী ও স্বজনরা কান্না করছে। অনেক রোগীর অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটাপন্ন হয়েছে। যারা হাসপাতালে পড়ে রয়েছে সবাই গরিব রোগী। অর্থাভাবে প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নিতেও পারছে না তারা। তাই বাধ্য হয়ে চিকিৎসার আশায় পড়ে আছেন তারা। রবিবার সকালে চিকিৎসা না পেয়ে শহরের এক মহিলা রোগী মারা গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই মহিলার স্বজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবদুল মোনাফ জানান, তার ওই আত্মীয় সদর হাসপাতালে গিয়েও বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে। এদিকে প্রতি মুহূর্তে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসছে শত শত মুমূর্ষু রোগী। জেলার দূর-দূরান্ত থেকে আসছে রোগীরা। চিকিৎসা না পেয়ে তারা বাধ্য হয়ে ফিরে যাচ্ছে। হাসপাতালের শীর্ষ কর্মকর্তারা অফিস করছেন। কয়েকজন ইন্টার্নি চিকিৎসক দেখা গেলেও তারা কর্মবিরতিতে রয়েছেন। শনিবার রাতে বিষয়টি নিয়ে একটি বৈঠক হলেও কোন সমাধান হয়নি। ইতোপূর্বেও ডাক্তার-নার্সরা চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগী ও সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করেছেন। কথায় কথায় দাপট দেখান ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নালিশ করলেও কোন রকমের বিচার পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ রয়েছে। সরকারী কর্মচারী হয়েও সদর হাসপাতালের ডাক্তার-নার্সরা রবিবার সকালে প্রধান সড়কে নেমে মিছিল করেছে। চিকিৎসা সেবা বন্ধ রাখলেও তাদের বেতন বন্ধ হওয়া থেকে সাবধান রয়েছেন। ঠিকই গত ৫ দিন ধরে হাজিরা খাতায় দস্তখত করে গেছেন ডাক্তার-নার্সরা।জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) ভুল চিকিৎসায় শহরের সমিতি পাড়ার আনোয়ার হোসেন নামের এক মৎস্য ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয় বলে দাবি তার স্বজনদের। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মৃতের স্বজনরা দুইজন ইন্টার্ন চিকিৎসককে মারধর করে। এছাড়া নার্স ও কর্মচারীদের লাঞ্ছিত করে। এই ঘটনার জের ধরে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দেয় হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্স ও কর্মচারীরা। এতে বিপাকে পড়ে যায় চিকিৎসাধীন রোগীরা।
×