ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাদারীপুরে কালবৈশাখীর তান্ডব

প্রকাশিত: ১০:২৩, ৮ এপ্রিল ২০১৯

মাদারীপুরে কালবৈশাখীর তান্ডব

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর, ৭ এপ্রিল ॥ শনিবার রাতে কালবৈশাখী ও ঘূর্ণিঝড়ে ৫ শতাধিক ঘর-বাড়ি দেকানপাট বিধ্বস্ত হয়েছে। শিবচরে একটি বাজার ও ৩ গ্রামের ওপর দিয়ে প্রচন্ড বেগে ঘূর্ণিঝড় বয়ে যায়। শেখপুর বাজারের ৫০ দোকান এবং ওইসব গ্রামের দেড়শত ঘর-বাড়ি ঘূর্ণিঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। কালবৈশাখী ঝড়ে সদর ও রাজৈরে দু’শতাধিক কাঁচাঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। বহু গাছপালা ভেঙ্গে বিভিন্ন এলাকার বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। শনিবার রাত ৯টার দিকে কালবৈশাখী ঝড়ে সদর, রাজৈর ও শিবচর উপজেলার বহু এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঝড়ে আহত হয়েছে কমপক্ষে ২৫ জন। তিন উপজেলার মধ্যে শিবচরে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এখনও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। জানা গেছে, শনিবার সন্ধ্যা থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টির সঙ্গে দমকা বাতাস বইতে শুরু করে। রাত ৯টার দিকে শুরু হয় কালবৈশাখী ও ঘূর্ণিঝড়। ৩০ মিনিটের তান্ডবে তিন উপজেলার বহু এলাকা লন্ডভন্ড হয়ে যায়। এর মধ্যে সদর, শিবচর ও রাজৈর উপজেলার ৫ শতাধিক কাঁচাঘর ও দোকান বিধ্বস্ত হয়। বাতাসের তোড়ে জেলা সদরে অবস্থিত একমাত্র প্রশিসেস প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের চালা উড়ে যায়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র। এতে প্রতিবন্ধীদের পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এদিকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের রাজৈর উপজেলার কামালদীসহ বেশকিছু এলাকার সড়কের ওপর গাছ ভেঙ্গে পড়ায় কয়েক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। এছাড়া কালবৈশাখী ঝড়ে সদর, রাজৈর ও শিবচর উপজেলার বেশকিছু এলাকায় বিদ্যুত সংযোগ বন্ধ রয়েছে। শনিবার রাত ৯টা থেকে রবিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ ছিল। রবিবার দুপুর ২টা পর্যন্ত বেশ কিছু এলাকার বিদ্যুত সংযোগ বন্ধ রয়েছে। শিবচরে মাত্র ৫ মিনিটের ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অধিকাংশ বাড়ির ঘরের চাল উড়িয়ে নিয়ে গেছে। ঘরের চালের নিচে আটকে আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৫ জন। আহতদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়। শিবচর উপজেলা চেয়ারম্যান সামসুদ্দিন খান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান এলাকা পরিদর্শন করেছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, শিবচরের উপজেলার বাঁশকান্দি ইউনিয়নের ছলেনামা, র্মিজারচর, সিপাইকান্দি গ্রাম ও শেখপুর বাজারের ওপর দিয়ে শনিবার রাত ৯টার সময় প্রবল বেগে ঘূর্ণিঝড় বয়ে যায়। এতে শেখপুর বাজারের প্রায় ৫০ দোকানের ঘরের চালা উড়ে যায়। ঝড়ে শেখপুর বাজারের হাজেরা খাতুন উচ্চ বিদ্যালয়, ২টি মসজিদ, ৩টি কিন্ডারগার্টেনসহ মোট চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাস্তার পাশের গাছ-পালা ভেঙ্গে যান চলাচল বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এছাড়া ওই সকল গ্রামের দেড়শত টিনের ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। রক্ষা পায়নি টিউবয়েল। ঘরের টিনের চালা খুঁজে পাচ্ছে না ঘরের মালিকরা। ভিটে থেকে চাল উড়িয়ে নিয়ে গেছে বহু দূরে। ঘরের টিনের চালাগুলো বিদ্যুতের তার ও গাছের ডালের সঙ্গে আটকে রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষরা মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। সারারাত বৃষ্টিতে ভিজে ওই সকল পরিবারের ছোট শিশু ও বৃদ্ধরা অনেকই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ক্ষতিগ্রস্তরা পড়েছেন খাবার সঙ্কটে। তাদের রান্নাঘরও উড়িয়ে নিয়ে গেছে। ঘরে চাল-ডাল কিছুই নেই। মাদারীপুর থেকে শিবচর উপজেলার বিদ্যুত সংযোগের প্রধান লাইনের প্রায় ৮টি খুঁটি ভেঙ্গে গেছে। এছাড়া বিভিন্ন গ্রাম ও বাজারে বিদ্যুত সংযোগ দেয়া ২৫টি বিদ্যুতের খুঁটি ঝড়ে উপড়ে গেছে। এলাকায়ও বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বাঁশকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল বাসার মিয়া জানান, ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ২শ’ ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে। শেখ বাজারের ৫০ দোকান ও তিনটি গ্রামে প্রায় দেড়শত ঘর-বাড়ি ভেঙ্গে গেছে। রাত থেকে মানুষ বৃষ্টিতে ভিজে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। দ্রুত ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য প্রয়োজন। মাদারীপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতির পরিচালক মোঃ পান্নু খান জানান, শনিবার সন্ধ্যা থেকে শিবচরের ১৯ ইউনিয়ন ও পৌরসভায় বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তবে কবে নাগাদ বিদ্যুত সংযোগ স্বাভাবিক হবে তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। বাঁশকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি নূর মোহাম্মদ মল্লিক জানান, স্বাভাবিক জীবনের ফিরে যেতে ঘরবাড়ি মেরামতের জন্য অতি দ্রুত সাহায্য কামনা করছে ক্ষতিগ্রস্তরা।
×