ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ছাত্রলীগ নামধারীদের নৈরাজ্যে অশান্ত চবি ক্যাম্পাস

প্রকাশিত: ১০:১৭, ৮ এপ্রিল ২০১৯

 ছাত্রলীগ নামধারীদের নৈরাজ্যে  অশান্ত চবি  ক্যাম্পাস

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নামধারীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে পুরো ক্যাম্পাসে আতঙ্কজনক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। চবিতে ছাত্রলীগের সব ধরনের কর্মকান্ড কেন্দ্রের নির্দেশে আগে থেকে নিষিদ্ধ রয়েছে। কমিটিও বাতিল করা হয়েছে। এর পরও ছাত্রলীগের ব্যানারে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জড়িত ছাত্রলীগ নামধারীরা মৌলবাদী শিবির কর্মীদের সহযোগিতা নিয়ে শান্ত ক্যাম্পাসকে অশান্ত করার তৎপরতা চালাচ্ছে। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সূত্রে এমন অভিযোগ করা হয়েছে। রবিবার ছাত্রলীগ নামধারীর একাংশের ডাকা ধর্মঘট চলার এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ৩ পুলিশ সদস্যসহ ৫ জন আহত হয়। ভাংচুর করা হয়েছে ডিবি পুলিশের একটি গাড়িও। পরিস্থিতি সামাল দিতে জলকামান, রবার বুলেট ও কয়েকটি টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। ৩ দিন ধরে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নামধারীরা উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে রেখেছে। গত ৪ এপ্রিল পুলিশ ক্যাম্পাস থেকে ছাত্রলীগ নামধারী ৬ জনকে গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে কিছু দেশী অস্ত্র উদ্ধার হওয়ার প্রেক্ষিতে অস্ত্র মামলায় তাদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এ ঘটনায় রবিবার ধর্মঘটের শুরুতে সকাল নয়টার দিকে ক্যাম্পাসের মূল ফটক আটকে দিয়ে স্লোগান দিতে থাকে। পরে চবি সংগঠনের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ করেন এবং কর্মীদের শান্ত হতে বলেন। কিন্তু নেতাদের কথায় আশ^স্ত হতে না পেরে আন্দোলন চালিয়ে যায় তারা। বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে মূল ফটকের সামনে একটি জলকামানের গাড়ি এসে হাজির হয়। এতে আরও উত্তেজিত হয়ে যায় ছাত্রলীগ কর্মীরা। এ সময় চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত এসপি (উত্তর) মশিউদ্দোলা রেজা তাদের সরে যাওয়ার অনুরোধ করেন এবং মামলা ও মুক্তির বিষয়ে পুলিশ প্রশাসন সহযোগিতারও আশ্বাস দেয়। এক পর্যায়ে উভয়পক্ষ বাগবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়লে শুরু হয় পুলিশের লাঠিচার্জ। ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় ছাত্রলীগ নামধারীরা। তারা কাটা পাহাড়ের রাস্তা ও শাহজালাল হলের সামনে অবস্থান নিয়ে পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ এ সময় জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেয়। পরে পুলিশ প্রতিটি রাস্তায় প্রবেশ করে এবং পুরো ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ছাত্রলীগ নামধারীরা বিক্ষিপ্তভাবে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছিল। এদিকে, চবি পরিস্থিতি সামাল দিতে ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় অনবধানতায় অস্ত্রের ট্রিগারে চাপ লেগে গুলিতে আহত হয় ২ পুলিশ সদস্য। আহত দুজনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা মহীউদ্দন চৌধুরীর অনুসারী ছাত্রলীগের দুটি গ্রুপ বিজয় ও সিএফসি কিছুদিন যাবতই ক্যাম্পাসে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। এরই প্রেক্ষিতে ৪ এপ্রিল ৬ জনকে আটক করে পুলিশ। এর মধ্যে চার জনের বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলা দায়ের করে তাদের কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এরপরই ফুঁসে ওঠে ছাত্রলীগ কর্মীরা। এবং উভয় গ্রুপ এক হয়ে যুগপৎ ধর্মঘটের কর্মসূচী দেয়। মামলা প্রত্যাহার দাবিতে ছাত্রলীগ নামধারীর একাংশ এ ধর্মঘট আহ্বান করে। ধর্মঘটে কার্যত অচল হয়ে পড়ে ক্যাম্পাস। ব্যাহত হয় স্বাভাবিক কার্যক্রম। সকালেই ক্যাম্পাস অভিমুখী শাটল ট্রেনের হোসপাইপ কেটে দেয়া হয়। অভিযোগ ওঠে লোকোমাস্টারকে অপহরণের। ফলে শাটল ট্রেনে কোন শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে আসতে পারেনি। এদিকে আগের রাতেই শিক্ষক বাসগুলোর টায়ারের হাওয়া ছেড়ে দেয়া হয়। এতে শহর থেকে শিক্ষকদের আনতে যেতে পারেনি বাস। ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে বন্ধ ছিল সকল দোকানপাট ও যান চলাচল। এমনকি রিক্সা-সাইকেলও চলেনি। অধিকাংশ বিভাগে ক্লাস পরীক্ষাও হয়নি। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, গত একমাসে এসব ছাত্রলীগ নামধারীর গ্রুপিংয়ের জেরে আহত হয়েছে ২০ জন। মহীউদ্দিন চৌধুরীর নাম ব্যবহার করে নয় গ্রুপে বিভক্ত হয়ে আছে। মূলত এরাই ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে তৎপর। রবিবারের ঘটনাও গ্রুপিংয়ের বহির্প্রকাশ। আরও অভিযোগ রয়েছে, চবি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সকল কর্মকা- কেন্দ্রের নির্দেশে নিষিদ্ধ থাকার পরও ছাত্রলীগের ব্যানারে শিবির কর্মীদের সহযোগিতা নিয়ে গ্রুপিংয়ে বিভক্ত হয়ে পরিস্থিতি অশান্ত করার চেষ্টা চলছে। এ প্রক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষকের ইন্ধন দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। জনকণ্ঠের চবি সংবাদদাতা জানিয়েছেন, কয়েকদিন ধরে ছাত্রলীগের ব্যানারে মূলত দুটি গ্রুপ ক্যাম্পাসে বিভিন্ন কর্মসূচী নিয়ে আন্দোলন তৎপরতা চালিয়ে আসছে। এ প্রক্রিয়ায় পুলিশ গ্রেফতার করেছে ৬ জনকে, যাদের মধ্যে ৪ জনের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা দেয়া হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে রবিবার ক্যাম্পাসে অনাকাক্সিক্ষত এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পুলিশের পক্ষে আন্দোলনকারীদের সরে যাওয়ার জন্য দুই ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়া হয়। কিন্তু এর পরও বেপরোয়া অবস্থানের কারণে পুলিশ এ্যাকশনে যায়। এসব বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ভিসি প্রফেসর ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী রবিবার সন্ধ্যায় জনকণ্ঠকে জানান, অনাহূতভাবে শান্ত ক্যাম্পাসকে যারা অশান্ত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পিছপা হবে না। পাশাপাশি যারা একটি সংগঠনের নাম ব্যবহার করে ক্যাম্পাসকে উত্তপ্ত করতে চাইছে তাদের ন্যায্য কোন দাবিদাওয়া থাকলে তারা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করতে পারে। তিনি জানান, বর্তমানে ক্যাম্পাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। মোতায়েন রয়েছে পুলিশ।
×