ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ঘৃণার রাজনীতি বিজেপির ভরাডুবি ঘটাবে ॥ মায়াবতী

প্রকাশিত: ১০:১৩, ৮ এপ্রিল ২০১৯

 ঘৃণার রাজনীতি বিজেপির ভরাডুবি  ঘটাবে ॥ মায়াবতী

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ উত্তর প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও বহুজন সমাজ পার্টির (বিএসপি) প্রধান মায়াবতী রবিবার ভোট প্রচারে বিজেপিকে আক্রমণ করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, বিজেপি ঘৃণার রাজনীতি করে। সমাজবাদী পার্টি প্রধান অখিলেশ যাদব এবং আরএলডি প্রধান অজিত সিংয়ের সঙ্গে এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ঘৃণার রাজনীতিই এবার বিজেপির ভরাডুবির কারণ হবে। ১১ এপ্রিল শুরু হয়ে ৭ ধাপে এ নির্বাচন চলবে ১৯ মে পর্যন্ত। ২৩ মে ভোট গণনা হবে। ১৩০ কোটি জনসংখ্যার দেশটিতে এবার ভোটার সংখ্যা প্রায় ৯০ কোটি। বিবিসি ও এনডিটিভি। উত্তর প্রদেশের সাহারানপুরে ওই সমাবেশ থেকে বিজেপির বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দেয়া হলেও প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের জন্য এটি খুব আশার খবর ছিল না। মায়াবতী একথাও বলেন যে, কংগ্রেস বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী নয়। মুসলিম সম্প্রদায়কে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনারা আপনাদের ভোট ভাগ হয়ে যাওয়ার সুযোগ দেবেন না। তিনি বলেন, কংগ্রেস নয় কেবল মহাজোটেরই সামর্থ্য আছে বিজেপিকে হারানোর। ভারতের অন্য রাজ্যে কংগ্রেস মহাজোটের সঙ্গে থাকলেও উত্তর প্রদেশে নেই। ওই প্রদেশে কংগ্রেস, বিজেপি ও মহাজোট এই ত্রিমুখী লড়াই হবে বলে আশা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, ভারতের যেসব স্থানে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ তার মধ্যে উত্তর প্রদেশ অন্যতম। যে সাহারানপুর শহরে মহাজোটের সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয় সেখানে মুসলিমদের অন্যতম ধর্মীয় বিদ্যাপীঠ দারুল উলুম দেওবন্দ অবস্থিত। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে পরিচিত ভারতে লোকসভা নির্বাচন চলতি সপ্তাহেই শুরু হচ্ছে। এবারের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতার জন্য লড়াইয়ে নেমেছেন। ভারতে ভোটারের এ সংখ্যা ইউরোপ ও ব্রাজিলের মোট জনসংখ্যার কাছাকাছি। নারী ভোটারের সংখ্যা ৪৩ কোটি ২০ লাখ। সর্বশেষ ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে নিবন্ধিত ভোটারের সংখ্যা ছিল ৮৩ কোটি। তবে সেবার মোট ভোটারের ৬৬ শতাংশ বা ৫৫ কোটি ৩০ লাখ মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিলেন। ওই নির্বাচনে ৪৬৪টি রাজনৈতিক দলের ৮ হাজার ২৫১ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষ হিসেবে ভারতের নির্বাচন কমিশনই (ইসিআই) পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়া তদারক করে। রাজধানী নয়াদিল্লীতে এর প্রধান কার্যালয়ে ৩ শতাধিক স্থায়ী কর্মকর্তা কাজ করেন। ভারতের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভার ৫৪৫ আসনের মধ্যে নির্বাচন হয় ৫৪৩টিতে। ঔপনিবেশিক যুগে ভারতীয়দের বিয়ে করা ইউরোপীয় উত্তরসূরিদের (এ্যাংলো ইন্ডিয়ান কমিউনিটি) জন্য বাকি দুটি আসন সংরক্ষিত থাকে। প্রেসিডেন্ট এ দুই আসনে মনোনয়ন দেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রতিটি সংসদীয় আসনে গড়ে ১৫ করে প্রার্থী ছিলেন বলে ইসিআইয়ের তথ্যে জানা গেছে। এর মধ্যে একটি আসনে ছিল সর্বাধিক ৪২ প্রার্থী। গতবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ৮ হাজার ২৫১ প্রার্থীর মধ্যে নারী ছিলেন মাত্র ৬৬৮। ওই নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি নিকটতম প্রার্থীকে ৫ লাখ ৭০ হাজার ১২৮ ভোটের ব্যবধানে হারান। এবারের লোকসভা নির্বাচনের জন্য ইসিআই প্রায় ১০ লাখ ভোটকেন্দ্র স্থাপন করছে যা গতবারের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। কোন কেন্দ্রই যেন ভোটারদের থেকে ২ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে না থাকে এই নির্দেশনা মেনেই এবার এত কেন্দ্র বসানোর পরিকল্পনা করা হয়। বিপুল এ কর্মযজ্ঞে প্রচুর সরকারী কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা রক্ষী মোতায়েন করতে হয়। গতবার প্রায় ৫০ লাখ কর্মকর্তা ও রক্ষী মোতায়েন করা হয়েছিল। হেঁটে, সড়কপথে, বিশেষ ট্রেন, হেলিকপ্টার, নৌকা এমনকি কখনও কখনও হাতির পিঠে চেপে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে যেতে হয় কর্মকর্তাদের। দুর্গম এলাকার কিছু কিছু ভোটকেন্দ্রে সুযোগ-সুবিধার পরিমাণ খুব কম থাকে। গত বছর প্রকাশিত এক তথ্যে ইসিআই জানিয়েছে, দেশটির ৮০ হাজারের বেশি ভোটকেন্দ্রে নেই মোবাইল যোগাযোগ সুবিধা, ২০ হাজারের কাছাকাছি কেন্দ্রের অবস্থান বন কিংবা আধা-বনাঞ্চলে। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে কেবল একজন ভোটারের জন্য নির্বাচন কমিশন পশ্চিম গুজরাটের গির বনেও একটি কেন্দ্র বসিয়েছিল। বনটি এশীয় সিংহের আবাসস্থল হিসেবে খ্যাত। কর্মকর্তা ও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত সদস্যদের দফায় দফায় বিভিন্ন স্থানে মোতায়েনের সুবিধার্থে ভোট সাধারণত কয়েক ধাপে মাসখানেকের বেশি সময় ধরে নেয়া হয়। ৫৪৩ সংসদীয় আসনের ভোটগণনা অবশ্য একদিনেই শেষ হয়। ২০১৪ সালের পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় মোট ৩ হাজার ৮৭০ কোটি রুপী খরচ হয়েছিল বলে অনুমান ইসিআইয়ের। সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি বাদে নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পন্নে খ্যাতি ও বিশ্বাসযোগ্যতা থাকলেও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ভারতের নির্বাচন কমিশনকে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার নিয়ে বিরোধী দলগুলোর ব্যাপক চাপ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৮ লাখ ইভিএম ব্যবহৃত হয়। এই যন্ত্র দিয়ে ভোট জালিয়াতি করা সম্ভব বলে রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন সময় অভিযোগ করে এসেছে। জালিয়াতি বন্ধে ভোটাররা যাচাই করতে পারে এমন পেপার অডিট ট্রেইল (ভিভিপিএটি) প্রযুক্তির বিস্তৃত ব্যবহারেও ইসিআইয়ের কাছে দাবি জানানো হয়েছে। ইভিএমের সঙ্গে ভিভিপিএটি সংযুক্ত থাকলে ভোট দেয়ার পরপরই ভোটাররা হাতে একটি প্রিন্ট করা কাগজ পাবেন। ওই কাগজে ভোটারের সিরিয়াল নম্বর, পছন্দের প্রার্থীর নাম ও প্রতীক থাকবে। ভোটাররা স্বল্প সময় ওই নম্বর, প্রতীক ও নামটি দেখার সুযোগ পাবেন। ভোট যাচাইয়ের ক্ষেত্রেও ইসিআই এ প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে পারবে। কংগ্রেস ‘ডুবন্ত টাইটানিক’- মোদি ॥ বিরোধী দল কংগ্রেসকে ‘ডুবন্ত জাহাজ টাইটানিক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপি প্রধান নরেন্দ্র মোদি। নির্বাচনী এক জনসভায় অংশ নিয়ে বক্তব্য দেয়ার সময় প্রধান বিরোধী দলকে এমন আখ্যা দেন মোদি। খবর ওয়েবসাইটের। মোদি বলেন, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ৪৪টি আসনে হেরেছিল কংগ্রেস। তবে এবার তাদের অবস্থা আরও খারাপ। কংগ্রেস যেন টাইটানিক। প্রতিটি দিন অতিক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দলটি একটু একটু করে ডুবছে। কংগ্রেসকে কটাক্ষ করে মোদি বলেন, সাধারণ মানুষের পাশাপাশি কংগ্রেসের বহু নেতারাও দলটির পক্ষে যুদ্ধের ময়দানে না থেকে, পালিয়ে যাওয়াই শ্রেয় মনে করছেন। দলটির শরদ পাওয়ার, প্রফুল্ল প্যাটেল ও রাজীব সতভসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরাও এটা মনে করছেন। এমনকি নির্বাচনী লড়াইয়েও তারা অংশ নিচ্ছেন না। তিনি আরও বলেন, নিজেই সমস্যার মধ্যে রয়েছে কংগ্রেস। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে রাহুল গান্ধী উত্তর প্রদেশের আমেঠির পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চলের ওয়েনাড় থেকেও লড়ছেন। কারণ আমেঠিতে তিনি জিতবেন কি-না তা অনিশ্চিত। কংগ্রেসের বর্তমান জোট নিয়ে তিনি বলেন, জোটের আওতাধীন দল ন্যাশনাল কনফারেন্সের প্রধান ফারুক আবদুল্লা এবং তার ছেলে ওমর আবদুল্লা দিল্লী আর কাশ্মীর থেকে পৃথক দু’জন প্রধানমন্ত্রী চান।
×