ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে ঢেলে সাজার সিদ্ধান্ত

প্রকাশিত: ০৯:৫১, ৮ এপ্রিল ২০১৯

   ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে ঢেলে  সাজার সিদ্ধান্ত

শংকর কুমার দে ॥ চলতি মাসেই রাজধানীর পুরান ঢাকার কেমিক্যাল মার্কেটের পার্শ্ববর্তী আরমানিটোলা এলাকায় একটি ফায়ার স্টেশন স্থাপন করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকায় এগারোটি মডার্ন ফায়ার স্টেশন স্থাপন করা হবে। সারাদেশে উপজেলায় ফায়ার স্টেশন স্থাপন করা হচ্ছে ৫৬৫ ফায়ার স্টেশন। ফায়ার স্টেশনগুলোতে অত্যাধুনিক অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রসহ ফায়ার সার্ভিসের দক্ষ জনশক্তি বাড়ানোর লক্ষ্যে ট্রেনিং দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ভয়াবহ দাবানলের থাবা থেকে মানুষজনের জানমাল রক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য এসব ফায়ার স্টেশন স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রাজধানীর বনানীর ফারুক রূপায়ন (এফআর) টাওয়ারে অগ্নিকান্ডের ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে এ খবর জানা গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের তিন মাসে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় দুই শতাধিক মানুষজন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন পাঁচ শতাধিক। এর মধ্যে চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ৭০ জন ও বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকান্ডে ঘটনায় ২৫ জনসহ শতাধিক মানুষ মারা গেছেন। পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার অগ্নিকান্ডের পর রাজধানীর অভিজাত এলাকা বনানী, গুলশানের অগ্নিকান্ডের ঘটনা ছাড়াও সারাদেশে আগুনে পুড়েছে ২৪ বস্তি। বিগত ৬ বছরে সারাদেশে ৮৮ হাজারের মতো অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ২৯ হাজার কোটি টাকা। প্রাণহানি হয়েছে ১ হাজার ৪শ’ জন। আহত হয়েছেন অন্তত ৫ হাজার মানুষ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর বনানীর ফারুক রূপায়ন (এফআর) টাওয়ারে অগ্নিকা-ের ঘটনার সময়ে অসহায়ের মতো শত শত মানুষজন রাস্তায় দাঁড়িয়ে আগুনে পুড়ে ছাই হতে দেখার হৃদয় বিদারক ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে আধুনিকায়ন করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। বাঁচার আকুতি নিয়ে বহুতল ভবনের অনেক উঁচু থেকে লাফিয়ে পড়ে থেঁতলে গিয়ে মর্মান্তিকভাবে মারা গেছে আগুনে কবলিত মানুষজন। আগুন নেভাতে দেরি হওয়ার কারণে জানমালের ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে সরকার। যে কোন বহুতল ভবনে আগুন নেভানোর জন্য উঁচু মই বা ফায়ার ল্যাডারসহ ফায়ার সার্ভিসের আধুনিক যন্ত্রপাতি যেমন জরুরী, তেমনি প্রতিটি ভবনের নিজস্ব হাইড্রেন্ট বা জলাধার, ফায়ার এক্সিট বা জরুরী নির্গমন পথ এবং তাৎক্ষণিক ব্যবহারের জন্য প্রতিটি ভবনের নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা মোকাবেলার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ জন্য কোন সুউচ্চ ভবনে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলে দ্রুততার সঙ্গে অগ্নিকান্ড নির্র্বাপণ ও অগ্নিকান্ড কবলিত মানুষজনকে উদ্ধারের লক্ষ্য নিয়ে আধুনিকায়নের আওতায় আনার জন্য ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরটিকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন উপজেলায় নতুন ঘরবাড়ি ও কল-কারখানা, বহুতল উচ্চ ভবন তৈরি হচ্ছে। রাজধানী ঢাকায় একের পর এক অগ্নিদুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেই চলেছে। নগরায়ণ ও শিল্পায়ন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শহরগুলোতেও অগ্নিদুর্ঘটনার ঘটনা ক্রমাগত বাড়ছে। সাম্প্রতিক দুর্ঘটনাগুলো থেকে অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিরোধের যথাযথ ব্যবস্থা না থাকার বিষয়টি যেমন উঠে এসেছে তেমনি আগুন লাগার পর দ্রুততম সময়ে উদ্ধারকাজ পরিচালনায় সক্ষমতার অভাবও স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হয়েছে। সাধারণ মানুষের কাছেও এটা স্পষ্ট যে, অগ্নিদুর্ঘটনা মোকাবিলা এবং জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে উদ্ধারকাজ পরিচালনায় আরও আধুনিক প্রযুক্তির অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম প্রযোজন। এজন্য ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে আধুনিকায়নের প্রসঙ্গটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়েছে সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীর বনানীতে ফারুক রূপায়ণ (এফআর) টাওয়ারে অগ্নিকান্ডের ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসকে আধুনিকায়নের বিষয়টি সরকারের নীতিনির্ধারক মহলে আলোচনা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপন করে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করে অগ্নিনির্বাপণ সক্ষমতা বাড়াতে ফায়ার সার্ভিসের বহরে শীঘ্রই অত্যাধুনিক সরঞ্জামাদি যুক্ত করার কথার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রাজধানীর বসুন্ধরা মার্কেট, নিমতলী ট্র্যাজেডি, চকবাজারের চুড়িহাট্টা, বনানীর এফ আর টাওয়ারের মতো অগ্নিকান্ডের সময়ে সড়কের যানজট, উৎসাহী জনতার ভিড় এবং সংকুচিত হয়ে যাওয়া প্রবেশ পথে অগ্নিনির্বাপক দলের বিলম্বে ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর বিষয়টিসহ নানা ধরনের ত্রুটি বিচ্যুতির প্রসঙ্গ এখন আলোচনায়। অসহায়ের মতো চোখের সামনে আগুনে পুড়ে মানুষজন মারা যাওয়ার বিভৎস দৃশ্যে মানুষজনের অশ্রুসজল হৃদয়ে করুণ আর্তনাদ করা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। এই প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবেলায় আধুনিক প্রযুক্তির অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রপাতি-সরঞ্জাম, প্রশিক্ষিত বাহিনী দিয়ে যথাযথ উদ্ধার তৎপরতা চালানোর জন্য ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে ঢেলে সাজিয়ে অত্যাধুনিক করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার।
×