ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিজিএমইএর প্রথম নারী সভাপতি হচ্ছেন রুবানা হক

প্রকাশিত: ০৯:২৪, ৮ এপ্রিল ২০১৯

বিজিএমইএর প্রথম নারী সভাপতি হচ্ছেন রুবানা হক

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বিজিএমইএর প্রথম নারী সভাপতি হতে যাচ্ছেন বিশিষ্ট গার্মেন্টস ব্যবসায়ী এবং প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের স্ত্রী রুবানা হক। গত ৬ এপ্রিল তার নেতৃত্বে সম্মিলিত ফোরাম বিজিএমইএ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে। এই বিজয় নিয়েই তিনি বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সংগঠনের ইতিহাসে প্রথম নারী সভাপতি হতে যাচ্ছেন। আগামী ২০ এপ্রিল নতুন কমিটির প্রথম পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভাতেই তাকে প্রথম নারী সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করা হবে বলে প্যানেল সূত্রে জানা গেছে। রুবানা হক মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রয়াত ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হকের সহধর্মিণী। এবারের বিজিএমইএ’র নির্বাচনে সম্মিলিত পরিষদ এবং ফোরাম সমঝোতার মাধ্যমে যে প্যানেল জমা দেয় তাতে দলনেতা করা হয় রুবানা হককে। ফলে, বিজিএমইএ’তে আগামী ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ এই দুই বছর নেতৃত্ব দেবেন রুবানা হক। বিজিএমইএ নতুন কমিটির প্রধান হিসেবে রুবানা হক তার নতুন দায়িত্ব প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমার চ্যালেঞ্জটা হবে, কী করে শ্রমিক ও মালিক একসঙ্গে কাজ করব। অনাস্থার জায়গাগুলো আমরা দূর করব।’ তিনি বলেন, ‘দেশের পোশাক খাত নিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে যে ইমেজ সঙ্কট রয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে হবে। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করব সেটি কাটিয়ে উঠতে। অনেকেই মনে করে, আমরা সবচেয়ে সস্তা। এই সস্তা কোনভাবেই ভাল না বলে আমি ও আমার পরিষদ মনে করে। আমরা বলতে চাই, প্রতিযোগিতা হলো সবচেয়ে ভাল। যদিও আমরা সম্মিলিতভাবে দর কষাকষির জায়গায় পৌঁছতে পারিনি। সবাই এ বিষয়ে একমত হতে পারিনি। এখন সময় এসেছে বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে একটা উদ্যোগ নেয়ার।’ তিনি তৈরি পোশাক খাতের নিরাপত্তা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ‘আপনারা জানেন শেয়ার বিল্ডিং মোটেও এ্যালাউড না। অথচ বহু চার লাইন, ছয় লাইন ফ্যাক্টরির শেয়ার বিল্ডিং রয়েছে। এখন আমাদের উচিত হবে, অন্তত এসব কারখানায় যেন ফায়ার ও ইলেক্ট্রিক সেফটিটা নিশ্চিত করা যায়। গার্মেন্ট সেক্টরে স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করতে পারলে এবং গণমাধ্যম আমাদের সঙ্গে কাজ করলে এ খাতের হারানো ইমেজ অবশ্যই ফিরে আসবে ইনশাল্লাহ।’ নবনির্বাচিত প্যানেলের সদস্যরা নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে বেশ ভালমানের ফ্যাক্টরি রয়েছে। আমরা মনে করি, সেলফ মনিটরিংয়ের এখনই সময়। এটি দেশের সবচেয়ে বড় রফতানি খাত। দেশের সবচেয়ে বেশি মানুষ এ খাতের সঙ্গে জড়িত। আমরাই মূলত দেশের অর্থনীতির চালিকা হিসেবে কাজ করছি। সুতরাং আমাদের বেশ কিছু দায়িত্ব রয়েছে। আমার কাছে স্বচ্ছতাও থাকবে। প্রতিশ্রুতি দিতে চাই, আমাদের প্যানেলের কাজের প্রতি নিষ্ঠার একটুও অভাব থাকবে না।’ তিনি বলেন, ‘দায়বদ্ধতার কথা যদি বলেন, আমার পুরো পরিষদ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করবে। আমার প্রয়াত স্বামী আনিসুল হক দুই বছরে দেখিয়ে গেছেন সবাইকে, কীভাবে পরিবর্তন আনতে হয়। তার মানে বদলানো সম্ভব। আমরাও সেটা পারব। এজন্য আমাদের দায়বদ্ধতার কোন প্রকার ত্রুটি দেখবেন না। তারপরও কোন ত্রুটি-বিচ্চুতি থাকলে সেটা ধরিয়ে দেয়ার আহ্বান থাকল।’ রুবানা হক বলেন, ‘আমরা মোটামুটিভাবে দর কষাকষি করতে শিখেছি, একটা গৌরবের জায়গায় দাঁড়াতে শিখেছি। আমরা যদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকি, সবাই একসঙ্গে কাজ করি তাহলে ঘুরে দাঁড়াবেই এ শিল্প। যত চ্যালেঞ্জই আসুক না কেন। কারণ চ্যালেঞ্জ যেমন আছে ঠিক একইভাবে সম্ভবনাও আছে। সবাই যদি একসঙ্গে কাজ করি, দু’বছরে আমরা বহু কিছু পাল্টে দিতে পারব।’ দায়িত্ব নেয়ার পর পোশাকখাতের ভাবমূর্তি যেটুকু ঘাটতি আছে তা পূরণ করতে কাজে নেমে পড়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথম কাজ হবে পোশাক খাতের ভাবমূর্তির ঘাটতি কাটিয়ে ওঠা। বাংলাদেশ সস্তায় পণ্য দিচ্ছে বলে যে ন্যারেটিভ প্রচলিত আছে সেটা বদলাতে হবে। স্বস্তায় কখনও ভাল জিনিস হয় না। শব্দটি হবে ‘কম্পারেটিভলি গুড প্রাইজ’, সেই ট্রেন্ডস চালু করতে আমাদের কাজ করতে হবে। দামের বিষয়ে দরকষাকষিতে কখনই ছাড় দেয়া যাবে না। বিজিএমইএ থেকে আমি এবং আমার প্যানেল সেই লক্ষ্যে কাজ করার উদ্যোগ নিতে পারি। এক্ষেত্রে যদি ফ্যাক্টরিগুলো মনে করে, দরকষাকষির ক্ষেত্রে আমাদের সাহায্য লাগবে আমরা তাহলে অবশ্যই নেগোসিয়েট করে দেব। সেটার জন্য আমরা আলাদা একটা সেল করব। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সম্পর্কে তিনি বলেন, ছোট ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্প অনেকগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তাদের সবার কষ্ট হচ্ছে। অতিসত্বর তাদের পক্ষে আমাদের দাঁড়াতে হবে। কিছুদিন পরপর বেতন দিতে পারছেন না বলে আপনারা শুনতে পাচ্ছেন। এর ফলে অনেক ভদ্রলোক কষ্ট পাচ্ছেন। তাদের উত্তরণের পক্ষে দাঁড়াতে হবে। ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পকে কী করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় সেই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। এই শিল্পে স্বচ্ছতার প্রতি ?গুরুত্বারোপ করে রুবানা বলেন, এই সেক্টরে একেবারেই স্বচ্ছতার প্রয়োজন আছে। নিজেরা যেন একজন অন্যের বিরুদ্ধে অসম প্রতিযোগিতায় লিপ্ত না হই সেটাই হবে চ্যালেঞ্জ। সঠিক দামে পৌঁছাতে না পারলেও ফ্যাক্টরির চাকা চলতে হবে বলে অল্প দামে অর্ডার নিয়ে নেয়া ঠিক হবে না। এই জায়গাটায় আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। কারণ ক্রেতারা যতই বলুক উনারা চলে যাবেন, আসলে উনারা যেতে পারবেন না। কারণ বাংলাদেশের মতো এমন দাম অন্য কোন দেশ অফার করতে পারবে না। কারখানার নিরাপত্তার বিষয়ে বিদেশী ক্রেতাদের তদারকি প্রতিষ্ঠান এ্যাকর্ড ও এলায়েন্সকে শীঘ্রই আদালতের নির্দেশ মেনে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের আহ্বান জানান তিনি। এ্যাকর্ড এ্যালায়েন্স প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তারা অনেক করেছেন আমাদের জন্য। এজন্য আমরা খুবই কৃতজ্ঞ। কিন্তু এমন একটি সময়ে আমরা দাঁড়িয়েছি যেখানে সব গার্মেন্টগুলো পুনঃসংস্কার হয়েছে। এখন এসব কারখানার সংস্কার কীভাবে টেকসই করা যায়, সেগুলো দেখতে হবে। তিনি বলেন, এখন আমাদের নজর দিতে হবে তাদের দায়িত্ব হস্তান্তরের অন্তর্র্বর্তীকালীন সময়ের দিকে। হাইকোর্ট এ্যাকর্ডকে আটটি শর্ত দিয়েছে। এই শর্ত মেনে যদি তারা থাকতে পারে তাহলে অল্প দিন থাকবে। কিন্তু তারা যে বলতেই থাকবে যে কারখানা এখনও প্রস্তুত না, সেটা আমরা মানতে রাজি নই। শিল্প প্রস্তুত কিনা সেটার জবাব শিল্প নিজেই তার কাজের মাধ্যমে দেবে।
×