ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রহর শেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্র মাস

প্রকাশিত: ০৯:০৬, ৮ এপ্রিল ২০১৯

 প্রহর শেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্র মাস

চলে যায় দিন, সপ্তাহ, মাস, ঋতু। যাওয়ারই কথা। থেমে থাকা মানায় না তাদের। ধাতেও নেই। স্বভাবেও নয়। পরিভ্রমণই তাদের কাজ। আর তাদের বিদায় বেলায় আঁখি দুটো ছল ছল হওয়ারই কথা। যে আর ফিরবে না তার জন্য শোকগাথা তৈরি হয়ে যায় অনায়াসে। কত আবেগ, ভালবাসা, সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, উল্লাসে-উচ্ছ্বাসে কেটে গেছে দিনমান, বছর। এ সময়ে জমেছে প্রচুর আবর্জনা, ধুলো-ময়লা। কলুষতার ডাস্টবিনগুলোতে উপচে পড়ছে রাশি রাশি বর্জ্য। যা শুধু কটু দুর্গন্ধ ছড়ায়। সারা বছর ধরে জমে থাকা পুঞ্জিভূত ক্ষোভগুলোও বিদায়ের পথে। কিন্তু থেকে যাবে তবু তার রেশ, এমনকি ক্লেশও। এসবের বিপরীতে সুগন্ধী বাতাস বহে যাওয়া দিনগুলো আরও সুন্দরের পথে যাবে এগিয়ে। চলাই তার একমাত্র বিধান। চৈত্র ফুরিয়ে যাচ্ছে। ফুরায় বসন্তও। কালবোশেখীর তোড়ে লুপ্ত হয়ে আসে কত কিছু। চৈতালী বাতাস হয়ে যায় ঝোড়ো বাতাস। আর পাঁচদিন পর দেয়ালপঞ্জি থেকে সরে যাবে খরবায়ু বয় বেগের চৈত্রমাস। আগেকার দিনে চৈত্রমাস মানে তীব্র দাবদাহ, তথা তীব্র গরমে-হাঁসফাঁস করার মাস। জলবায়ু পরিবর্তনের ধকলে বদলে গেছে সেসব। বসন্ত বাতাস জুড়ে ধুলোরা ওড়ে মেঘের আড়ালে। শেষ চৈত্রের এই মেঘ এই রোদের আবছায়ায় বসে মনে জাগবেই পুরো বছরের সালতামামি। শেষ চৈত্রের সূর্যাস্তের ছায়া ছায়া রোদমাখা উষ্ণ বিকেলের দিকে বাঙালী তাকালেই ভেসে আসবে বিদায়ী ১৪২৫ সনের ঘটনাপঞ্জি। বিদায়ের রাগিণী বেজে ওঠার গোধূলিসন্ধিতে মনে প্রশ্ন জাগবেই- কেমন ছিল বিদায়ী বছরটি। একবাক্যে হয়তো বলা হবে ভাল-মন্দ মিলিয়েই কেটেছে বছর। আলো-অন্ধকারের দিন রাত্রিগুলো হয়তো ছিল স্বপ্নময়, কিংবা বিষাদগ্রস্ত। তবে স্বস্তির ভাব ছিল সর্বত্র। পেছনে ফেলে আসা হয় বিদায়ী বছরের কত স্মৃতি, কত রোমাঞ্চ, আনন্দ, জাগরণ। আর কিছু বেদনামিশ্রিত দুঃখভারাক্রান্ত সময় দেয় পাড়ি। বাঙালীর জীবনে আশা-নিরাশা, আলো-আঁধার, সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা আর অগ্রগতির সুর, তাল, লয়ই জবাব দেবে ১৪২৫ সালের হাল হকিকত কেমন ধারায় প্রবাহিত হয়েছে। বিশ্বমানব হওয়ার পথে তার এগিয়ে চলার রথ দিয়েছে কতটুকু পাড়ি। বিদায়ী বছরের সূর্যাস্তের শেষ আলোয় তার জবাবও ভেসে উঠবে মানসপটে। বিদায়ের সুর বেদনার। কিন্তু নতুনের আগমন আনন্দের। তাই বর্ষ বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন বছরের আগমন এক অনির্বচনীয় সুখের আস্বাদ এনে দেয় বুঝি। বাঙালীর বর্ষ বিদায় আর বর্ষ আগমন বেদনা ও আনন্দ মিশ্রিত। বাঙালী জাতির জীবনে ‘আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহ দহন লাগে,/ তবুও শান্তি, তবু অনন্ত, তবু আনন্দ জাগে।’ চৈত্র শেষের খরতাপে বা দাবদাহে দগ্ধ মৃত্তিকা যখন বোশেখের প্রথম সূর্যের আলোয় ঝলমল করে ওঠে, তখন যেন বাঙালীর মনও নতুনত্বের স্বাদ গ্রহণের জন্য হয়ে ওঠে উদগ্রীব। এই দেশের ভাষা এক, খাদ্যাভ্যাস প্রায় এক। বাঙালী কঠোর শ্রমজীবী, নির্মল, সহজ, সরল, হাসিখুশি, ধার্মিক অথচ ধর্মে নয় গোঁড়া। বাঙালী অসাম্প্রদায়িক, শান্তিবাদী, শিল্প ও সঙ্গীতপ্রিয়, পরিবেশবাদী, দেশপ্রেমিকও। কৃষিজীবী, লৌকিক দর্শন ও ভাববাদী। এই দেশকে সুশাসন, প্রকৃত ইতিহাস, শান্তি, সংস্কৃতি দিয়ে কেউ পরিচালিত করুক- এমন প্রত্যাশা জাগায় নতুন বছরের আবাহনে। বিদায়ী বছরের শেষ দিনগুলো আশাবাদ জাগায়, আরও বেশি প্রাণ প্রবাহ যেন হয় সঞ্চায়িত নতুন বর্ষে, পুরাতনের রেশ নিয়ে। এমনিতেই প্রতিটি জাতির, প্রতিটি সংস্কৃতির কিছু নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে, বাঙালীরও তাই। চৈত্র মাস বাঙালীর দিনপঞ্জির শেষ মাস। বসন্তের মাতাল হাওয়ায় বর্ষ ফুরানোর গান বেজে উঠে সর্বত্র। ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসকদের স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ছিলেন সিএ বেন্টলি। ১৯২১ সালে প্রকাশিত তার ‘ফেয়ার এ্যান্ড ফেস্টিভ্যালস ইন বেঙ্গল’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, বছর শেষের পুরো চৈত্র মাসই যে বাঙালীর উৎসবের মাস। কারণ এই মাসে বাংলার নানা জায়গায় নানারকম গ্রামীণমেলা হতো। চৈত্র সংক্রান্তি ছিল এর অন্যতম। নববর্ষের মেলা প্রায় সারা চৈত্রমাস এবং বৈশাখ মাস পর্যন্ত হতো। বেন্টলি ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের সংবছরের মেলার তালিকাও দিয়েছেন। সে আমলেও শেষ চৈত্রে চড়ক পূজা হতো। বাংলাদেশে চড়ক পূজার আয়োজন চলে শেষ চৈত্রে দেশের বিভিন্ন গ্রামে। হিন্দু সম্প্রদায়ের নিম্ন বর্ণের মানুষ এতে অংশ নেয়। এই পূজাকে কেন্দ্র করেও বসে মেলা। ১৩০৮ তথা ১৯০১ সালের শেষ চৈত্র দিনে শান্তিনিকেতনের উপাসনালয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘পৃথিবীতে সকল বস্তুই আসিতেছে এবং যাইতেছে- কিছুই স্থির নহে; সকলই চঞ্চল- বর্ষশেষের সন্ধ্যায় এই কথাই তপ্ত দীর্ঘ নিশ্বাসের সহিত হৃদয়ের মধ্যে প্রবাহিত হইতে থাকে। কিন্তু যাহা আছে, যাহা চিরকাল স্থির থাকে, যাহাকে কেহই হরণ করিতে পারে না, যাহা আমাদের অন্তরে বিরাজমান- গত বর্ষে সেই ধ্রুবের কি পরিচয় পাই নাই- জীবনে কি তাহার কোন লক্ষণ চিহ্নিত হয় নাই? সকলই কেবল আসিয়াছে কিংবা গিয়াছে?’ না, শুধু আসা-যাওয়াতেই সব কিছু সীমিত ছিল তা নয়। অনেক কিছুই গ্রথিত হয়ে যায় নানা দিগন্ত রেখার সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে। এটা তো স্বীকার্য যে, ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার মধ্যেই অতীত স্মরণ করার সার্র্থকতা। পক্ষান্তরে অতীতে ফিরে গিয়ে বর্তমান সমস্যাবলী সমাধানে চেষ্টা করার নাম পশ্চাদমুখিতা। আর তা মানেই অগণতান্ত্রিক। অগণতান্ত্রিক পন্থা এবং প্রবঞ্চনা ছাড়া অতীতে ফিরে যাওয়া যায় না। বিশ শতকের ষাটের দশকে দেখা যেত চৈত্র শেষের দিকে গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে বীজ বপন উৎসব, ভাল খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন হতো। চৈত্র সংক্রান্তিতে পঞ্চব্যঞ্জনের ধারাবাহিকতা আজও বিদ্যমান। মেলা বসত গ্রামের বড় বটবৃক্ষের নিচে। মেলায় খেলাধুলা হতো। ছেলেমেয়েরা টুকরি ভরে নিয়ে আসত বিন্নি ধানের খৈ, চিনির হাতি ঘোড়া, পুতুল, জিলিপি, বড় বাতাসা, বাঁশি এবং আরও কত কি। মাটির তৈরি তৈজসপত্র তো থাকতই মেলায়। চৈত্র সংক্রান্তির দিনটি ছিল একদা প্রকৃতই বিষণ্ণতার দিন। বর্ষবিদায়ে বেদনা ভারাতুর হতো বুঝি প্রকৃতিও। আর বর্ষ শুরুর দিন হতো ছুটির দিন, আনন্দের দিন। মেলার দিন। প্রাণে প্রাণ যোগানোর দিন। কিন্তু সেদিনের অনাবিল আনন্দ কোলাহলের কতটুকু অবশিষ্ট আছে পল্লীগ্রামে অথবা শহরে? শহরের উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্তরা সরকারী ছুটি ভোগ করছে, গানের জলসায় যোগ দিচ্ছে। অনেকে মেলায় কেনাকাটাও করছে। অপরদিকে রিক্সাচালক সাত-সকাল থেকেই রিক্সা চালাচ্ছেন। ঠেলাগাড়িওয়ালা ও ভ্যানওয়ালা তার গাড়ি নিয়ে পথে, কুলি মজুরেরা কোদাল টুকরি হাতে চৌরাস্তার মোড়ে কাজ পাওয়ার আশায় অপেক্ষমাণ। ফকির, ভিক্ষুক, ফেরিওয়ালারাও শশব্যস্ত। গ্রাম বাংলারও একই অবস্থা। কিষাণ-কিষাণীসহ মজুরদের যেমন শুক্র-শনিবারের ছুটি নেই, নেই নববর্ষসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দিবসের ছুটিও। ঈদে চাঁদেও নয় ওরা সমস্যামুক্ত। তখনও তারা কাজ খোঁজে, কাজ করে যায় নিরন্তর। শ’য়ে শ’য়ে ভিক্ষায় নেমে সভ্য ও সংস্কৃতিবান ব্যক্তিদের জন্য অনায়াসে পূণ্য অর্জনের কাজে বুঝি সহায়তাই করে। জীবিতকালে আসলে তাদের ছুটি মেলে না। ‘ওরা চিরকাল টানে দাঁড়; ধরে থাকে হাল; ওরা মাঠে মাঠে বীজ বোনে, পাকা ধান কাটে/ওরা কাজ করে নগরে-প্রান্তরে।’ রবীন্দ্রনাথ জেনেছিলেন তাদের। বুঝেছিলেন ওদের কঠোর পরিশ্রমে উৎপন্ন ধান এবং শস্য ভোগ করা হচ্ছে। আজীবন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে নিজেরা অভুক্ত-অর্ধভুক্ত এবং জীর্ণ বস্ত্র পরিহিত থেকে ওরা একটি ক্ষুদ্র শ্রেণীর ছুটি ভোগ ও আরাম আয়েশের যাবতীয় উপাদান যোগাচ্ছে। অথচ নিজেরা জানে না ছুটি কী জিনিস। যেন ‘বেদনারে করিতেছে পরিহাস স্বার্থোদ্ধত অধিকার।’ বসন্ত ফুরিয়ে আসছে। ফুরিয়ে আসছে ১৪২৫ সাল। এখন শেষ বেলাকার গান গাইবার সময় যেন। শেষের এই সময়গুলোতে দাঁড়িয়ে আসন্ন গ্রীষ্মকালকে তথা বৈশাখকে বরণ করে নেয়ার পূর্ব মুহূর্তে ভেসে ওঠে বিদায়ী বছরের নানা দৃশ্যপট। বিদায়ী বছরের শেষ দিকে দেশ ছিল নির্বাচনমুখী। জাতীয় সংসদ নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন, এমনকি ডাকসু নির্বাচনও হয়েছে। এসব নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ১৪২৫ সনজুড়ে রাজনীতির অঙ্গন ছিল সরগরম। একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ভূমিধস বিজয় অর্জন করেছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সঙ্গী ডক্টর কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামমাত্র আসন পেয়েছে। ব্যাপক প্রার্থী তাদের জামানত হারিয়েছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে অভিধাপ্রাপ্ত বিএনপি এবং জামায়াত ধরাশায়ী হয়েছে এই নির্বাচনে। পরাজয়ের গ্লানি তাদের এতই কাবু করেছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়ে গণরায় পাবার মতো সাহস তারা আর অর্জন করতে পারেনি। নির্বাচনে অংশ না নিয়ে তারা কোন অর্জনই করতে পারেনি। বরং দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে দলের গ্রহণযোগ্যতা ক্রমশ হারাচ্ছে। দুর্নীতির দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত বিএনপির চেয়ারপার্সনের মুক্তির দাবিতে জনগণ দূরে থাক, দলই এগিয়ে আসেনি। এমনকি দন্ডিত পলাতক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সনকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়েও দলের কোন আগ্রহ দেখা যায়নি। লন্ডনে বিলাসবহুল জীবনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠা পলাতক ব্যক্তিটি ষড়যন্ত্র আর নাশকতাকে প্রাধান্য দিয়ে অবস্থা এমন করেছে যে, সহিংসতাকেই দলীয় রাজনীতির নিয়ামক শক্তিতে পরিণত করা হয়েছে। বিএনপি নির্বাচনকে আন্দোলনের অংশ হিসেবে ঘোষণা করেও নির্বাচনী তৎপরতা থেকে ছিল দূরত্ব দূরে। দেশবাসী তাদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবার কারণে নির্বাচন আর আন্দোলনের অংশ হতে পারেনি। তবে লন্ডনবাসী তাদের নেতার নানা ষড়যন্ত্র থেমে নেই। দেশকে ধ্বংস করে সরকার উৎখাতের মতো তার তৎপরতার ধারাবাহিকতা এখনও শেষ হয়নি। চলছে তা গোচরে-অগোচরে। বিদায়ী এই বছরে খালেদা-জামায়াত সৃষ্ট জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ তেমনভাবে মাথাচাড়া দিতে পারেনি। বরং অনেকটাই দমিত হয়েছে। কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনের নামে নাশকতায় লিপ্ত হতে দেখা গিয়েছে। জামায়াত শিবিরের জঙ্গীরা এই আন্দোলনে অনুপ্রবেশ করে অরাজক অবস্থার তৈরি করেছিল। তরুণ সমাজ এদের দ্বারা বিভ্রান্ত হয়েছিল। সবচেয়ে বেদনাদায়ক ছিল বিদায়ী বছরে সড়ক দুর্ঘটনা। প্রতিবাদে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও নেমে এসেছিল রাজপথে। তারা যানবাহন নিয়ন্ত্রণও করেছে ট্রাফিকের পাশাপাশি। বিএনপি-জামায়াত এই আন্দোলনে ইন্ধন দিতে গিয়েও ব্যর্থ হয়েছে। তাতেও হালে পানি পায়নি। বিএনপি আর রাজনীতির স্বাভাবিক পথে ফিরে আসতে পারেনি বিদায়ী বছরে। বরং দলের অনেক নেতাকর্মী পদত্যাগ করেছেন নেতৃত্বের আযোগ্যতা, দুর্বলতার প্রতিবাদেও। ষড়যন্ত্রের কানাগলিতে তারা এখনও বিচরণ করছে। ডাকসু নির্বাচনে বিএনপির ছাত্র সংগঠন গো হারা হেরেছে। রাজনীতির স্বাভাবিক পথ ধরে এগিয়ে যাওয়ার সাহস ও ক্ষমতা হারিয়ে ফেলায় ষড়যন্ত্রের জাল বোনা আর তার বিস্তার ঘটানোকেই তারা ব্রত হিসেবে বেছে নিয়েছে। এই যে দেশজুড়ে মহামারীর মতো অগ্নিকান্ড ঘটছে। তার নেপথ্যে এসব নাশকতাকারীর ইন্ধন, অংশগ্রহণ রয়েছে কি না, তা এক সময় স্পষ্ট হবে। সড়ক দুর্ঘটনা আর অগ্নিকান্ডে যারা প্রাণ হারিয়েছে তাদের প্রতি গভীর বেদনামিশ্রিত শ্রদ্ধা আর আহতদের প্রতি সমবেদনা দেশবাসীই জানিয়েছে। বিদায়ী বছরে সহিংসতা হ্রাস পেয়েছে যেমন, তেমনি জঙ্গী দমনও অব্যাহত ছিল। বিদায়ী বছরে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে গঠিত একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। বৈশাখে দ্বিতীয় অধিবেশন বসবে। বরষ ফুরায়ে আসে। বাঙালীর জীবন থেকে সরে যাচ্ছে আরেকটি বছর। বিদায় ১৪২৫ সাল। বিদায় চৈত্র মাস। শুভ হোক ১৪২৬ সন নতুন বর্ষ। যুদ্ধাপরাধীমুক্ত হোক দেশ। পরাজিত শক্তির হোক বিনাশ। নাশকতা, সহিংসতা, বোমাবাজি হোক উধাও। সোনার বাংলা হোক সোনায় মোড়ানো। ডিজিটাল বাংলাদেশ হোক সমৃদ্ধ। চৈত্র মাস রবীন্দ্রনাথকে অন্যরকম আবাহনে টেনে নিয়েছিল। প্রহর শেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্র মাস/ তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ’ বলে যে অক্ষেপ করেছিলেন, ‘এসো হে বৈশাখ’ দিয়ে তার সবকিছু ছাপিয়ে গেছেন। বাঙলার জল, বায়ু, ঘর-সংসার সবকিছু হোক পুণ্যময়। রবীন্দ্রনাথের মতো এ-ও আমাদের চাওয়া।
×