ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সিকিউরিটি এলার্ট কেন

প্রকাশিত: ০৯:০৫, ৮ এপ্রিল ২০১৯

 সিকিউরিটি এলার্ট কেন

মার্কিনীদের, বিশেষ করে সরকারের মতিগতি সত্যিই বোঝা মুশকিল। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জমানায় সেটি আরও কঠিন ও দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। কেননা, সে দেশেরই জনগণ ও গণমাধ্যমের মতে প্রেসিডেন্ট সকালে এক কথা বলেন তো বিকেলে বলেন অন্য কথা। সেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার হঠাৎ করে কেন ‘সিকিউরিটি এলার্ট’ বা নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করল বাংলাদেশে সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শুক্রবার গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় প্রশ্নটি উত্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। উল্লেখ্য, এর আগে বুধবার ঢাকার আমেরিকান দূতাবাস বাংলাদেশে অবস্থানরত সে দেশের নাগরিকদের সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কার কথা জানিয়ে চলাফেরায় সতর্ক ও সাবধান হওয়ার পরামর্শ জানিয়ে এক বিবৃতি দেয়। হতে পারে এটা তাদের একটি নিয়মিত রুটিন ওয়ার্ক, যা তারা সময় সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে থাকে। বিশেষ করে মার্কিনবিরোধী, যুদ্ধবিধ্বস্ত, গৃহযুদ্ধ কবলিত, সর্বোপরি সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে বিপর্যস্ত দেশগুলোতে। বাস্তবতা হলো বাংলাদেশে বর্তমানে সেরকম কোন পরিস্থিতি নেই বা আদৌ বিরাজ করছে না। যে কারণে জারি করতে হবে সিকিউরিটি এলার্ট। প্রধানমন্ত্রীও সঙ্গত কারণেই তুলেছেন প্রশ্নটি। মার্কিন নাগরিকদের জন্য নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করলেও এর কোন কারণ ব্যাখ্যা করা হয়নি দেশটির পক্ষ থেকে। এরপরও যদি সত্যি সত্যিই তাদের কাছে সন্ত্রাসী হামলা অথবা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার মতো আদৌ কোন খবর থাকে তবে তা অবশ্যই প্রধানমন্ত্রীর দফতরে অথবা স্থানীয় গোয়েন্দা সংস্থারকে অবহিত এবং তদনুযায়ী তথ্য সরবরাহ করা অত্যাবশ্যক ছিল। তা হলে সে অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারে। এটা তাদের অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্যও বটে। এমনিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ও সুহৃদ। উন্নয়নের অন্যতম অংশীদারও বটে। ঢাকায় নবনিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতও দায়িত্বভার গ্রহণ করে ইতোমধ্যে রাজশাহী ও যশোরসহ কয়েকটি অঞ্চলে সস্ত্রীক সফর করে বাংলাদেশের আতিথেয়তা ও আন্তরিকতার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। আমরা আনন্দের সঙ্গে স্মরণ করতে পারি যে, যশোরের ফুল বাগানে তাদের প্রস্ফুটিত অফুরন্ত গোলাপের সৌন্দর্য উপভোগ এবং রাজশাহীর ফুটপাথে বিবিধ ভর্তাসহযোগে মাষকলাইয়ের ডালের গরম রুটি খাওয়ার কথা। সপরিবারে মাঠ পর্যায়ের এমন আনন্দময় অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই বাংলাদেশের পরিবেশ-পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা সম্পর্কে সম্যক একটি ধারণা দিয়েছে তাদের। অতীতে গুলশানের হলি আর্টিজানে সশস্ত্র জঙ্গী হামলাসহ বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসী ও জঙ্গী হামলার ঘটনা ঘটলেও সে সবই বর্তমান সরকার সাফল্যের সঙ্গে দমন করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার সব রকম জঙ্গী ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে গ্রহণ করেছে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি। সরকার বারবার ঘোষণা করেছে যে, বাংলাদেশ একটি উদার গণতান্ত্রিক দেশ এবং এখানে কোন ধর্মীয় উগ্রপন্থা কিংবা সন্ত্রাসী কার্যক্রমের ঠাঁই নেই। সময় সময় বিভিন্ন নামে এবং বিদেশী সাহায্যপুষ্ট তথা পাকিস্তানের আইএসআইয়ের মদদে কোন গোষ্ঠী মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার অপচেষ্টা করলে সেসব সরকার তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দমন করেছে কঠোর হস্তে। দুঃখজনক হলো, তখন বরং মার্কিন সরকার তথাকথিত মানবাধিকারের ধুয়া তুলে মায়াকান্না করে থাকে। হিসাব করলে দেখা যাবে যে, বাংলাদেশের তুলনায় বরং অনেক বেশি সন্ত্রাসী ও জঙ্গী হামলার ঘটনা ঘটে থাকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, জার্মানি, ইতালি ও অন্যত্র। এর সর্বশেষ উদাহরণ একজন শ্বেতাঙ্গ উগ্রপন্থী সন্ত্রাসী কর্তৃক নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে নৃশংস হামলার ঘটনা, যেখানে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন ৫০ জন এবং আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। উল্লেখ্য, গোটা ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও অন্যত্র উগ্র শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদী ঘৃণায় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা বাড়ছে, যেটি গোটা বিশ্বের জন্য এক আশঙ্কাজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। সবাইকে বুঝতে হবে যে, জঙ্গী ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম বর্তমান বিশ্বে কোন একক দেশের সমস্যা নয়। যুক্তরাষ্ট্র আইএস দমনের কথা বললেও বাস্তবে তারা ছড়িয়ে পড়েছে বা পড়তে চাইছে বিশ্বব্যাপী। সুতরাং তাদের কঠোর হস্তে দমনের দায়িত্ব সব দেশের সরকারের। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর উদ্বেগে তারই ইঙ্গিত মিলেছে।
×