ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

স্টার ওয়ার কর্মসূচী জোরদার

প্রকাশিত: ০৯:০১, ৮ এপ্রিল ২০১৯

 স্টার ওয়ার কর্মসূচী জোরদার

‘স্টার ওয়ার’র জন্য যুদ্ধ সরঞ্জাম বানাচ্ছে ভারত। গত মাসে সফলভাবে এ্যান্টি-স্যাটেলাইট (এস্যাট) মিসাইল (উপগ্রহ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র) উৎক্ষেপণের পর মহাকাশে যুদ্ধ সক্ষমতা বাড়াতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে দেশটি। এর মধ্যে রয়েছে ডিরেক্টেড এনার্জি উইপেন্স (ডিইডব্লিউ) ও কক্ষপথের অন্য উপগ্রহ বিধ্বংসী অস্ত্র। এছাড়া মহাকাশে ইলেক্ট্রনিক ও সরাসরি হামলা থেকে নিজেদের উপগ্রহ রক্ষার সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করছে তারা। ডিআরডিওর প্রধান জি সতীশ রেড্ডি শনিবার বলেন, ‘আমরা ডিইডব্লিউ, লেজার, ইলেকট্রোম্যাগনেটিক পালস (ইএমপি) ও কো-অরবিটাল অস্ত্রসহ বেশ কয়েকটি প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছি। আমরা বিস্তারিত প্রকাশ করতে পারি না, কিন্তু বিষয়টি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছি।’ ভারত গত ২৭ মার্চ ২৮৩ কিমি উচ্চতায় থাকা মাইক্রোস্যাট-আরস্যাটেলাইট ধ্বংস করে এ-স্যাট ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে। ডিআরডিও প্রধান বলেন, মহাকাশের অনেক উপগ্রহকে লক্ষ্যে পরিণত করা সম্ভব। কারণ তিন পর্বের ইন্টারসেপটর ক্ষেপণাস্ত্র মহাকাশে প্রায় এক হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে সক্ষম। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া। কো-অরবিটাল অস্ত্র হচ্ছে মূলত বিস্ফোরক, অস্ত্র ও ডিইডব্লিউ যন্ত্রপাতিতে সজ্জিত একটি উপগ্রহ। এটি প্রথমে কক্ষপথে (অরবিট) স্থাপন করা হবে এবং তারপর পরবর্তীতে শত্রু উপগ্রহে হামলা চালাতে ব্যবহার করা হবে। অন্যান্য এস্যাট অস্ত্র যেমন, লেজার জ্যামার, ইএমপি ও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষুদ্রতরঙ্গ (মাইক্রোওয়েভ) উন্নত করছে চীন। দেশটি ২০০৭ সালে ‘এলইও’ আবহাওয়া উপগ্রহ ধ্বংসে প্রথম এ-স্যাট ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায়। একটি সূত্র জানায়, ভারতের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য হচ্ছে এলইও এবং জিইও উপগ্রহের বিরুদ্ধে এ-স্যাট অস্ত্র বানানো। দেশটির অব্যাহত মহাকাশকেন্দ্রিক সম্পদ নিয়ে যে হুমকি রয়েছে, সেটি মোকাবেলা করতেই এ পদক্ষেপ। অন্যদিকে ভারতের উপগ্রহ ও সেন্সরগুলোকে কঠিন করে তুলছে ইএমপি। অন্যান্য বিরূপ প্রভাব থেকে রক্ষা করবে এসব ‘স্টার ওয়ার’। অন্য একটি সূত্র জানায়, যদি প্রধান প্রধান উপগ্রহগুলো লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়, তাহলে সশস্ত্র বাহিনীর দাবি অনুযায়ী ক্ষুদ্র উপগ্রহ (মিনি স্যাটেলাইট) উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ডিইডব্লিউ ধরনের প্রকল্প চালিয়ে আসছে ডিআরডিও। এসবের মধ্যে রয়েছে উচ্চশক্তি সম্পন্ন লেজার ও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষুদ্র তরঙ্গ (মাইক্রোওয়েভ) যেগুলো আকাশে এবং ভূমিতে থাকা বস্তুকে টার্গেট করতে সক্ষম। তবে এসব কবে নাগাদ সফলভাবে এ-স্যাট অস্ত্রে পরিণত করা সম্ভব সেটাই এখন দেখার বিষয়। ডিআরডিও প্রধান জি সতীশ রেড্ডি বলেন, পূর্ণাঙ্গ এ্যারোস্পেস মিলিটারি কমান্ড গঠন করা হবে, নাকি এ-স্যাট প্রক্রিয়ায় অস্ত্রসজ্জিত করা হবে এ বিষয়টির সিদ্ধান্ত নিতে হবে সরকারকে। তিনি বলেন, ‘সামরিক ক্ষেত্রে গুরুত্ব অর্জন করেছে মহাকাশ। নিরাপত্তা নিশ্চিতের সবচেয়ে ভাল উপায় হলো পূর্বানুমান করা।’ ডিআরডিও প্রধান পরিষ্কার করেন যে, এখন পর্যন্ত নতুন এ-স্যাট ক্ষেপণাস্ত্রের আর কোন পরীক্ষার সম্ভাবনা নেই। তিনি বলেন, আমরা তিন শ’ কিলোমিটারের কম উচ্চতায় ইন্টারসেপটর ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছি। আমাদের এক হাজার কিলোমিটারের বেশি উচ্চতায় যাওয়ার প্রাযুক্তিক সক্ষমতা রয়েছে। এর ফলে এলইওতে ঘোরা কক্ষপথের সব উপগ্রহ পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব। একই উদ্দেশ্যে আরও পরীক্ষা চালানোর প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, কাক্সিক্ষত উপগ্রহে আঘাতের ক্ষেত্রে এটি খুবই সফল। কারণ বিশ্বব্যাপী এ-স্যাট উপগ্রহ উৎক্ষেপণের ক্ষেত্রে গড়পড়তা ‘সবচেয়ে ভাল ফলের’ চেয়েও ১০ সেন্টিমিটারেরও কম নির্ভুলতায় আঘাত করেছে। রেড্ডি বলেন, ‘সুতরাং এই পরীক্ষা আমাদের সব আশা পূরণ করেছে।’ তিনি বলেন, ‘মিশন শক্তি’ ভারতকে বিশ্বে এ-স্যাট সক্ষম তিনটি দেশের অভিজাত তালিকায় স্থান করে দিয়েছে। এ-স্যাট উৎক্ষেপণকারী অন্য তিনটি দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন।
×