ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের জামাল মোল্লা দশম, সিদ্দিকুর দ্বাদশ

বঙ্গবন্ধু কাপ গলফে সেরা থাইল্যান্ডের সাদোম

প্রকাশিত: ১১:৫৯, ৭ এপ্রিল ২০১৯

 বঙ্গবন্ধু কাপ গলফে সেরা থাইল্যান্ডের সাদোম

রুমেল খান ॥ বয়স মাত্র ২০। সদ্য কৈশোর-উত্তীর্ণ টগবগে তরুণ। যদিও প্রথম দৃষ্টিতে মনে হবে এখনও বুঝি কিশোরই আছেন। স্বভাবে বেশ বিনয়ী ও লাজুক। কিন্তু ভেতরে ভেতরে যে জেতার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং লড়াকু, সেটা বোঝা গেল শনিবারের শেষ বিকেলে। যখন কুর্মিটোলা গলফ কোর্সে বঙ্গবন্ধু কাপ গলফ ওপেন টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ঘোষিত হলো তার নামটি, সাদোম কায়েওকাঞ্জনা। পাঠক নিশ্চয়ই বলবেন, নামটা অচেনা, কখনও শোনেননি। হ্যাঁ, ঠিকই। শুনবেনই বা কিভাবে, এর আগে তিনি সিনিয়র পর্যায়ে কোন পেশাদার-আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টই খেলেননি। ঠিক ধরেছেন, জীবনের প্রথম পেশাদার গলফ টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েই বাজিমাত করলেন থাইল্যান্ডের এই সুদর্শন তরুণ গলফার। তার আরেকটি রেকর্ড আছে। সেটি হলো তিনি ‘ফাস্টেট কোয়ালিফাইং স্কুল গ্র্যাজুয়েট এশিয়ান ট্যুর চ্যাম্পিয়ন’। সাদোম হচ্ছেন তৃতীয় থাই খেলোয়াড় যিনি বাংলাদেশের মাটি থেকে গলফের শিরোপা জিতলেন। তার আগে বাংলাদেশ ওপেন জেতেন থিতফুন চুয়ায়প্রাকোং (২০১৬) এবং জায জানেওয়াত্তানানোদ (২০১৭)। অনেকেই এই তথ্য জেনে বলতে পারেন থাই গলফারদের জন্য শিরোপা জেতার জন্য বাংলাদেশ হচ্ছে লাকি গ্রাউন্ড। শিরোপা জয়ের পর সাদোম আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান। সেই সঙ্গে তিনি ট্রফিটা উৎসর্গ করেন তার পরিবারের সদস্যদের। এ্যামেচার গলফার হিসেবে সাদোম ২০১৭ সিংঘা পাতায়া ওপেন, মালয়েশিয়ান ওপেন, অল ইন্ডিয়া এমেচার ওপেন এবং ২০১৮ সালে ডাচ্ ইন্টারন্যাশনাল জুনিয়র ওপেন জেতেন। আগেরদিনই আভাস দিয়েছিলেন, চ্যাম্পিয়ন হতে পারেন সাদোম। কেননা শীর্ষেই ছিলেন তিনি। দিনটা শুরু করেন বেশ ভালমভাবেই। সেটাই শেষ পর্যন্ত ধরে রাখেন, বাকিরা যেটা পারেননি। অভাবনীয় নৈপুণ্য দেখিয়ে সবাইকে পেছনে ফেলে শীর্ষস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হন। সাড়ে তিন লাখ মার্কিন ডলার প্রাইজমানির এই আসরে শিরোপা জিতে তিনি লাভ করেন ৬৩ হাজার ডলার। সাদোম অবশ্য চার বছর আগেও বাংলাদেশে এসে খেলে গিয়েছেন। সেবার তিনি অংশ নিয়েছিলেন ৩০তম বাংলাদেশ এ্যামেচার গলফ চ্যাম্পিয়নশিপে। সেবার রানারআপ হয়েছিলেন তিনি। আর এবার তো চ্যাম্পিয়নই বনে গেলেন। শনিবার সাদোম পারের চেয়ে ৯ স্ট্রোক কম খেলে তিনি শিরোপা বিজয় নিশ্চিত করেন। তার চার রাউন্ডের ফলাফল যথাক্রমে ৬৫ + ৬২ + ৬৮ + ৭০ = ২৬৫ যা সর্বমোট পারের চেয়ে ১৯ স্ট্রোক কম। ভারতের অজিতেষ সান্ধু পারের চেয়ে ১৮ স্ট্রোক কম খেলে রানারআপ হন। একই দেশের অপর গলফার রশিদ খান পারের চেয়ে ১৭ স্ট্রোক কম খেলে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন। বাংলাদেশের জামাল হোসেন মোল্লা সেরা পেশাদার (প্রফেশনাল) গলফার নির্বাচিত হন। তিনি লাভ করেন দশম স্থান। বাংলাদেশের সেরা এ্যামেচার গলফার নির্বাচিত হন শফিক বাঘা। যাকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি আশা ছিল, সেই দেশসেরা তারকা গলফার সিদ্দিকুর রহমান লাভ করেন দ্বাদশ স্থান। ঢাকা সেনানিবাসের কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবের ব্যাংকুয়েট হলে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধান অতিথি তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ গলফ ফেডারেশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল এনায়েত উল্লাহ, সেক্রেটারি জেনারেল ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাঈদ সিদ্দিকি, টুর্নামেন্ট ডিরেক্টের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবিদুর রেজা খান (অব.), জয়েন্ট সেক্রেটারি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিএসএম হামিদুর রহমান (অব.), ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালক রিক হক শিকদার ও রণ হক শিকদার, ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী মোস্তাক আহমেদ, এশিয়ান ট্যুরের ম্যানেজার ট্যুর এ্যান্ড প্লেয়ার এ্যাফেয়ার্স উনহু পার্ক, সেলিব্রিটি গর্ডন গ্রিনিজ এবং ওপেন ২০১৯-এর বিভিন্ন কমিটির চেয়ারম্যানসহ উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা। ‘এশিয়ান ট্যুরে অভিষেকেই শিরোপা জিতে আমি ভীষণ খুশি। এ শিরোপা আমার আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়িয়ে দেবে। সত্যি বলতে কি, আমার জীবনটাই পাল্টে দিয়েছে এই সাফল্য। তবে জয়টা এত সহজে আসেনি। অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল। বিশেষ করে শেষ তিনটি হোলে খেলতে গিয়ে আমাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে, মনোসংযোগ ধরে রাখতে হয়েছে। এই শিরোপাটার জন্য গত তিনটি বছর ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আজ বাবার কথা অনেক মনে পড়ছে। কেননা তিনিই আমার প্রথম গলফ-শিক্ষক।’ এ টুর্নামেন্ট গত ৩ এপ্রিল শুরু হয়। এতে অংশ নেয় ২২ দেশের সেরা ১৪৬ পেশাদার গলফার। এই টুর্নামেন্টের আয়োজক হওয়ার সুবাদে বাংলাদেশের ৪০ উদীয়মান পেশাদার গলফার এবং ৬ এ্যামেচার গলফার সরাসরি মূলপর্বের খেলায় অংশ নেয়ার সুযোগ পান। এদের মধ্যে আছেন বাংলাদেশের প্রথম পেশাদার ও তারকা গলফার সিদ্দিকুর রহমান। এশিয়ান ট্যুর বর্তমান গলফ বিশ্বে গলফের তৃতীয় বৃহত্তম ট্যুর। আন্তর্জাতিক এই টুর্নামেন্টে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিশেষ করে এশিয়ার খ্যাতিমান পেশাদার গলফাররা অংশ নিয়ে থাকেন। নিঃসন্দেহে এই আয়োজন ক্রীড়াবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নতুন এক উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
×