ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হাটহাজারীতে ভেজাল ঘি কারখানার ছড়াছড়ি

প্রকাশিত: ১১:৪৭, ৭ এপ্রিল ২০১৯

 হাটহাজারীতে ভেজাল ঘি কারখানার ছড়াছড়ি

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ খাবারের স্বাদ বিষিয়ে দিচ্ছে ভেজাল ঘি। চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে ভেজাল ঘি এর কারখানা অলিগলিতে। নামীদামী ব্র্যান্ডের নামে গোপন কারখানার ঘি চলছে বাবুর্চিকে কমিশন দিয়ে। দেদারসে চলছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। অভিযোগ রয়েছে, কারখানা মালিকদের ২শ’ টাকার টোকেনের ভিত্তিতে বাবুর্চিরাই মূলত এসব ঘি ক্রেতাকে কিনতে বাধ্য করে। দেশের সবচেয়ে বেশি ঘি ভেজাল হচ্ছে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায়। ঘি সুস্বাদু খাবারের অনন্য উপাদান হওয়ায় ঘি এর ব্যবহার হয় সবচেয়ে বেশি। এছাড়াও যাদের অঢেল অর্থ রয়েছে তারা হয়ত প্রতিনিয়তই ঘি খাচ্ছেন। তবে সেই দামী খাবারের ঘি যদি ভেজাল হয় তাহলে রসালো আপ্যায়ন রসাতলে যাবে। কিন্তু একবারও কি পরীক্ষা করে দেখছেন তিনি কি খাচ্ছেন। ‘প্রাণ’ এর জায়গায় ‘প্রাম’, ‘বাঘাবাড়ির’ ঘি নাম হাঁকিয়ে ‘স্পেশাল বাঘাবাড়ির ঘি’, আবার বাঘাবাড়ির ঠিকানাও পরিবর্তন করে ক্রেতাদের বিভ্রান্তিতে ফেলে দিচ্ছে এসব ভেজাল কারখানা। হাটহাজারীতে এ পর্যন্ত প্রায় এক ডজন ভেজাল ঘি কারখানার সন্ধান পাওয়া গেছে। এদিকে, এই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমিন প্রতিনিয়ত ভেজাল ঘি ও খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুতকারক কারখানাগুলো খুঁজে বেড়াচ্ছেন। এমনকি এলাকার মানুষজনকেও তিনি কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে তথ্য আদায়ে উদ্বুদ্ধ করছেন। গত এক মাসে তিনি ১০টিরও বেশি ভেজাল ঘি এর কারখানায় অভিযান চালিয়ে জরিমানা, সতর্ক ও কারখানা সিলগালা করে দিয়েছেন। এই উপজেলায় এত বেশি ভেজাল ঘি এর কারখানা রয়েছে যা প্রতিনিয়ত উপজেলা অফিসে তথ্য আসছে। শুধু তাই নয় ডালডার ভেতরে ঘি এর ফ্লেভার দিয়ে বাঘা বাড়ির ঘি তৈরি করার ঘটনাও ঘটছে। অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে হাটহাজারীতে ভেজাল ঘি এর কারখানা বিদ্যমান থাকলেও থানা পুলিশ ও পূর্ববর্তী উপজেলা প্রশাসন কি করেছে। বছরের পর বছর এসব কারখানায় ভেজাল ঘি উৎপাদন করে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নামে বিক্রি করেছে। এতে প্রকৃত ঘি কারখানার মালিকরা ও ক্রেতা সাধারণ প্রতারণার শিকার হয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘি এর ফ্লেভার অনুসন্ধানে ইউএনও রুহুল আমীন বলেন, সম্প্রতি একটি বস্তা জব্দ করা হয় একটি দোকান থেকে। কিন্তু এর ভেতরে কি আছে তা নিয়ে অনেকেরই কৌতূহল ছিল। অবশেষে রাতে এর উৎস খুঁজে পাওয়া গেল। কালো জাতীয় একটি জিনিস কিন্তু ঘ্রাণ খাঁটি ঘি এর। দোকানির কথায় এটি মাছের খাবার। আসলে যারা মাছ শিকার করেন তারাই মূলত এটার ক্রেতা। এক কেজি দোকানির কেনা ৩২০ টাকা হলেও বিক্রি কিন্তু ৪০০ টাকা। এ খাবার আসে ফরিদপুর থেকে। দোকানির কথায় এটি ঘি তৈরির সময় ফেলে দেয়া ফেনা থেকে জমে এমন হয়। কিন্তু এর সঙ্গে আরও কিছু উপাদান মেশানো হয়। যা ঘি এর ফ্লেভার হিসেবে বিক্রি হচ্ছে হাটহাজারীর বিভিন্ন স্থানে। চারটি কারখানায় অভিযান চালিয়ে দেখা গেছে, পামওয়েল, ডালডা ও হলুদ রং মিশিয়ে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ঘি তৈরি হচ্ছে হাটহাজারীতে। এদিকে, গত ২৭ মার্চ হাটহাজারীর এগারোমাইল নামক স্থানে অভিযান চালায় হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন। রাত সাড়ে ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত প্রায় দেড় ঘণ্টার অভিযান হলে কবির চেয়ারম্যানের ভাড়া বাড়িতে। প্রায় তিন শ’ লিটার ভেজাল ঘি বোতলজাত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রশাসন। এক কারখানায় ৫টি ব্র্যান্ডের ঘি, এক হাজার খালি কৌটা সেইসঙ্গে ভেজাল ঘি তৈরির উপকরণ জব্দ করার পর তা আবার কারখানার সামনেই পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়। তবে এসব ভেজাল ঘির মধ্যে বাঘাবাড়ির নামেই কৌটজাত করা হয়েছে বেশিরভাগ ঘি। কিন্তু উপজেলা প্রশাসনের মধ্যেও ভেজাল ঘি কারখানার সোর্স রয়েছে।
×