ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বৈশাখ বরণের প্রস্তুতি

রাজশাহীতে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা

প্রকাশিত: ১১:৪১, ৭ এপ্রিল ২০১৯

রাজশাহীতে ব্যস্ত  মৃৎশিল্পীরা

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ বলতে গেলে এখন দুয়ারেই পহেলা বৈশাখ। আর কদিন পরেই বাঙালীর প্রাণের উৎসব। এ দিনকে ঘিরে তাই ব্যস্ততা বেড়েছে রাজশাহীর মৃৎশিল্পীদের। বৈশাখী উৎসবের প্রস্তুতিকে ঘিরে ব্যস্ততায় দিন কাটছে তাদের। এজন্য রাত-দিন সমানতালে বৈশাখী উৎসবের বিভিন্ন উপকরণ তৈরিতে ব্যস্ত পরিবারের সদস্যরাও। রাজশাহীর পবা উপজেলার বসন্তপুর এলাকার ‘ঐতিহ্যবাহী শখের হাঁড়ি’ তৈরির কারিগরের বাড়িতে এখন রং ছড়িয়েছে বৈশাখীর বার্তা। বাড়ির সদস্যদের যেন দম ফেলার সময়টুকুও নেই। শনিবার দুপুরে বাড়ির সামনের সুশান্ত কুমার পাল তৈরি করছেন ছোট ছোট হাঁড়ি। পাশেই কাজ করছে সঞ্জয় কুমার পাল। তাকে সাহায্য করছেন বাড়ির সদস্যরা। তিনি ছোট ছোট হাঁড়ি তৈরি করছেন। বাড়িতে ঢুকতেই চোখে পড়ে ব্যস্ততার দৃশ্য। পরিবারের একেকজন একেক কাজে ব্যস্ত। উদ্দেশ্য পহেলা বৈশাখ-বাংলা নববর্ষ। কেউ প্রস্তুত করছেন মাটি, কেউ তৈরি করছেন বিভিন্ন জিনিসপত্র। আবার কেউ রঙের তুলির শেষ আঁচড় কাটছেন নানা ধরনের শখের হাঁড়িতে। রঙের তুলির আঁচড়ে পরিবারের ছোট সদস্যরাই অংশ নিচ্ছে। ১০ বছরের সঞ্জিতা রানী পাল। সেও শখের হাঁড়িতে বিভিন্ন আলপনা আঁকছে ইচ্ছেমতো। আবার বাবা-মায়ের দেখানো নক্সায় তুলির আঁচড় কাটছে সে। জানা গেছে, রাজশাহীজুড়ে শুধু এই উপজেলায় বৈশাখ উপলক্ষে বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র তৈরি করা হয়। আর নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন মেলায়। মেলাগুলোতে বেশ কদর রয়েছে রাজশাহীর ‘শখের হাড়ি’র তৈরি জিনিসপত্রের। কিন্তু মূল্যায়ন নেই নিজ শহর রাজশাহীতে। আমন্ত্রণ জোটে না রাজশাহীর কোন মেলায়। এখানকার কারুশিল্পী সুশান্ত কুমার পাল। মৃতপ্রায় এ মৃৎশিল্প টিকিয়ে আজও জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম মৃৎশিল্প আঁকড়ে ধরে আছেন তিনি। শুধু সুশান্ত পালই নয়, সঙ্গে স্ত্রী মমতা রানী পাল, দুই ছেলে সঞ্জয় কুমার পাল ও মৃত্যুঞ্জয় কুমার পাল, এক মেয়ে সুচিত্রা রানী পাল এবং দুই ছেলের স্ত্রী মুক্তি রানী পাল ও করুণা রানী পাল ‘শখের হাড়ি’র কারিগর। তারা সবাই এখন কারুশিল্পী। বাড়ির পুরুষ সদস্যদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছেন তারাও। বর্তমানের আধুনিক প্লাস্টিক, সিরামিক, সিনথেটিক, ধাতব, কাঁচ এবং মেলামাইন সামগ্রীর দোর্দ- প্রভাবে মাটির তৈরি তৈজসপত্রের চাহিদা ফুরিয়েছে অনেক আগেই। তবুও মৃৎশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে লড়াই করে যাচ্ছেন সুশান্ত পাল ও তার পরিবার। বাংলা নববর্ষ সামনে রেখে তৈরি করা হয়েছে, ছোট বড় প্রায় ১০ রকমের শখের হাঁড়ি। এছাড়াও ট্যাপা পুতুল, হাতি-ঘোড়া, পঞ্চসাধি, সরা, পাখি ইত্যাদি। আবার সেগুলো দেয়া হয়েছে রোদে শুকাতে। শুকানোগুলোতে চলছে রং-তুলির আঁচড়। নিপুণ হাতে চলছে রং তুলির ছোঁয়া। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমানে প্রাকৃতিক উপায়ে রং তৈরির উপকরণ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই বাজার থেকে কয়েক রকমের রং কিনে রাঙ্গানোর কাজে ব্যবহার করতে হচ্ছে তাদের। শখের হাঁড়িগুলোকে সাজানো হচ্ছে বাহারি সাজে। কোনটিতে ছাপ দেয়া হচ্ছে মাছ, পাখি। আবার কোনটিতে হাতি, ঘোড়াসহ বিভিন্ন ফুল ও লতাপাতার।
×