ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিজিএমইএ নির্বাচনে পুরো প্যানেলে জয়ী রুবানা হক

প্রকাশিত: ১০:৩২, ৭ এপ্রিল ২০১৯

 বিজিএমইএ নির্বাচনে পুরো প্যানেলে জয়ী রুবানা হক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পোশাক খাত উদ্যোক্তাদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ নির্বাচনে পুরো প্যানেলসহ বিজয়ী হয়েছেন সম্মিলিত পরিষদ-ফোরাম জোটের প্যানেল লিডার রুবানা হক। তিনি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের স্ত্রী ও মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। রাত সাড়ে ৯টায় ভোট গণনা শেষে নির্বাচন কমিশনার জাহাঙ্গীর আলামিন ফল ঘোষণা করেন। বিজিএমইএর পরিচালনা পর্ষদের ২৬টি (ঢাকার) পদের সব কয়টিতে রুবানা নেতৃত্বাধীন প্যানেলের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন বলে জানান তিনি। ঢাকার বাইরে সংগঠনের পরিচালনা পর্ষদে চট্টগ্রামের জন্য সংরক্ষিত নয়টি পদে একক প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তারা সবাই সম্মিলিত পরিষদ-ফোরামের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিজিএমইএর পরিচালনা পর্ষদের সব পদই এই প্যানেলের হওয়ায় রুবানা হকের সংগঠনটির সভাপতি হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার। আগামী দুই বছরের জন্য সংগঠনটির প্রথম নারী হিসেবে নেতৃত্বে আসছেন তিনি। সম্মিলিত ফোরামে সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন এমএ রহিম ১২৯৫ ভোট। এই ফোরামে নেতৃত্ব দেয়া রুবানা হক পেয়েছেন ১২৮০। অন্যদিকে স্বাধীনতা পরিষদের নেতৃত্ব দেয়া জাহাঙ্গীর আলম ৪২২ পান। বিজিএমইএ নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড জানিয়েছে, জয়ী পরিচালকরা আগামী ১৮ এপ্রিল ভোটের মাধ্যমে সভাপতি, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও সহসভাপতি নির্বাচিত করবেন। এরপর আগামী ২১ তারিখ বিজিএমইএর নির্বাচিত নতুন কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবে বর্তমান কমিটি। পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-এর নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হওয়ার পর রুবানা হকই হতে যাচ্ছেন বিজিএমইএ-এর প্রথম কোন নারী সভাপতি। জয়ের পর প্রতিক্রিয়ায় রুবানা হক বলেন, এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ভোটারদের জয় হয়েছে। শিল্পের জয় হয়েছে। এক সঙ্গে প্রত্যেকের স্বার্থ রক্ষা করে এগিয়ে যাব। শ্রমিকদের কল্যাণে ও শিল্পের স্বার্থে আমরা এগিয়ে যাব। গর্ব করার মতো একটি শিল্প খাত গড়ে তুলব। তিনি বলেন, আমাদের চ্যালেঞ্জটা হবে, কী করে শ্রমিক ও মালিক একসঙ্গে কাজ করবে। আমার প্রয়াত স্বামী আনিসুল হক দুই বছরে দেখিয়ে গেছেন সবাইকে, কীভাবে পরিবর্তন আনতে হয়। তার মানে বদলানো সম্ভব, সেভাবে কাজ করব। দেশের পোশাক খাত নিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে যে ইমেজ সঙ্কট রয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে হবে। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করব সেটা কাটিয়ে উঠতে। তিনি আরও বলেন, অনেকেই মনে করেন, আমরা সবচেয়ে সস্তা। এই সস্তা কোনভাবেই ভাল না বলে আমি ও আমার পরিষদ মনে করি। আমরা বলতে চাই, প্রতিযোগিতা হলো সবচেয়ে ভাল। যদিও আমরা সম্মিলিতভাবে দর কষাকষির জায়গায় পৌঁছতে পারিনি। সবাই এ বিষয়ে একমত হতে পারিনি। এখন সময় এসেছে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে একটা উদ্যোগ নেয়া। ফল ঘোষণার পর অপর প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, রুবানা আপা যখনই আমাকে ডাকবেন তার পাশে থেকে এই শিল্পকে এগিয়ে নেব। এছাড়া সুন্দর নির্বাচন উপহার দেয়ার জন্য জাহাঙ্গীর বর্তমান সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানকে ধন্যবাদ জানান। দুই বছর মেয়াদী (২০১৯-২১) এই নির্বাচনে পরিচালনা পর্ষদের ৩৫টি পরিচালক পদে ৫৩ প্রার্থী অংশ নেন। তবে এর মধ্যে চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৯ প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় ২৬ পদে ভোটগ্রহণ হয়। যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ৪৪ প্রার্থী। এর মধ্যে সম্মিলিত পরিষদ-ফোরামের ২৬, স্বাধীনতা পরিষদের ১৭ ও একজন স্বতন্ত্র। সম্মিলিত-ফোরামের প্যানেল থেকে নির্বাচিত হলেন মোহাম্মদী গ্রুপের রুবানা হক, সেহা ডিজাইনের এসএম মান্নান কচি, সুরমা গার্মেন্টসের ফয়সাল সামাদ, মাসুদ এ্যাপারেলসের মোহাম্মদ নাছির, কাইলক নিউএইজ বাংলাদেশের আসিফ ইব্রাহীম, তুসুকা ফ্যাশন্সের আরশাদ জামাল দিপু, দুলাল ব্রাদার্সের এমএ রহিম ফিরোজ, গোল্ডেন রেফিট গার্মেন্টসের কেএম রফিকুল ইসলাম, এ্যাডাম এ্যাপারেলসের মোঃ শহীদুল হক মুকুল, ফেম সুয়েটার্সের মশিউল আজম সজল, অনন্ত গার্মেন্টসের ইনামুল হক খান বাবলু, টিভোলি এ্যাপারেলসের মাসুদ কাদের মনা, ওডেসা ফ্যাশন্সের ইকবাল হামিদ কোরাইশী আদনান, সামা ফ্যাশন ওয়্যারের নাছির উদ্দিন, দিগন্ত সুয়েটার্সের কামাল উদ্দিন, ভিজেন্ট ডেনিম স্টুডিওর মোঃ সাজ্জাদুর রহমান মৃধা, সফটেক্স সুয়েটার ইন্ডাস্ট্রিজের রেজওয়ান সেলিম, নিউ ফ্যাশন্সের মুনির হোসেন, গার্মেন্টস এক্সপার্ট ভিলেজের একেএম বদিউল আলম, মিসারি গার্মেন্টসের মিরান আলী, ফ্যাশন নিট গার্মেন্টসের মোহাম্মদ আবদুল মোমেন, সিভিক এ্যাপারেলসের মোশাররফ হোসেন ঢালী, এমিটি ডিজাইনের শিহাব উদ্দোজা চৌধুরী, ডেনিম এক্সপার্টের মহিউদ্দিন রুবেল, অনন্ত ডেনিম টেকনোলজির শরীফ জহির ও জিসাস ফ্যাশনের নজরুল ইসলাম। চট্টগ্রাম অঞ্চলে একই প্যানেলের বিজয়ীরা হলেন- মোহাম্মদ আব্দুস সালাম, এ এম চৌধুরী, এ এম মাহবুব চৌধুরী, এনামুল আজিজ চৌধুরী, মোহাম্মদ আতিক, খন্দকার বেলায়েত হোসেন, অঞ্জন শেখর দাশ, মোহাম্মদ মুছা ও মোহাম্মদ মেরাজ-ই-মোস্তফা। প্রসঙ্গত, বিজিএমইএ’র নির্বাচন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ঢাকা অঞ্চলের ১ হাজার ৫৯৭ ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ১ হাজার ২০৪ জন। অন্যদিকে, চট্টগ্রামে ৩৫৮ ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ২৮৮ জন। ৯৯টি ভোট বাতিল হয়েছে বলেও জানা যায়। সে হিসাবে মোট ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৭৬ দশমিক ২৭ শতাংশ। বিকেল ৪টায় ভোটগ্রহণ কার্যক্রম শেষে দেয়া হয় ৩০ মিনিটের বিরতি। বিরতি শেষে বিকেল সাড়ে ৪টায় শুরু হয় গণনা কার্যক্রম।
×