ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মামলা না তোলায় ছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা

প্রকাশিত: ১০:৩১, ৭ এপ্রিল ২০১৯

  মামলা না তোলায় ছাত্রীকে পুড়িয়ে  হত্যার চেষ্টা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার পরীক্ষা কেন্দ্রে সহপাঠীদের দেয়া আগুনে মারাত্মক দগ্ধ ছাত্রী নাছরিন জাহানকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে অস্ত্রোপাচার করা হয়েছে। পরে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছে। ঢামেক হাসপাতালে বার্ন ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক ডাঃ সামন্তলাল সেন জনকণ্ঠকে জানান, শনিবার বিকেল তিনটার দিকে ওই ছাত্রীর ভাই রাশেদুল হাসান তাকে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করেন। ভর্তির সঙ্গে সঙ্গে তাকে বার্ন ইউনিটের ইমার্জেন্সি ওটিতে (অপারেশন থিয়েটার) ঢোকান হয়েছে। সেখানে দুই ঘণ্টা অস্ত্রোপাচার শেষে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। তিনি জানান, তার ফ্যাসিওটমি ও আইজি করা হয়েছে। সেলাই দেয়া হয়েছে। ডাঃ সামন্তলাল সেন জানান, তার সারা শরীর ৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক। ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, ওই ছাত্রীর মুখমণ্ডল বাদে পুরো শরীর পুড়ে গেছে। আমাদের ফেনীর সংবাদদাতা জানান, শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নাছরিন জাহান সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে আরবী প্রথমপত্র পরীক্ষায় অংশ নিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে যায়। সেখানকার শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগে মামলা করায় ওই ছাত্রীকে পরীক্ষার হল থেকে ডেকে নিয়ে যায় প্রধান শিক্ষকের অনুসারী কয়েকজন ছাত্রী। পরে হলের ছাদে নিয়ে আলিম পরীক্ষার্থী ওই ছাত্রীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে তার আর্তচিৎকারে শিক্ষার্থীরা তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে ফেনী সদর হাসপাতাল ভর্তি করা হয়। সেখানকার চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। নাছরিন পৌরসভার উত্তর চরছান্দিয়া গ্রামের মাওলানা মুচা মিয়ার মেয়ে। দগ্ধ ছাত্রীর ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান জানান, মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক এসএম সিরাজউদ্দৌলাহ গত ২৬ মার্চ নাছরিনের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। নাছরিন বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের জানিয়ে দেয়। পরে সোনাগাজী থানার মামলা দায়ের করে। সোনাগাজী থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, গত ২৭ মার্চ সিরাজউদ্দৌলাকে গ্রেফতার করা হয়। দগ্ধের ভাই নোমান জানান, মামলাটি উঠিয়ে নেয়ার জন্য প্রধান শিক্ষক সিরাজউদ্দৌলার লোকজন নাছরিনকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। কিন্তু নাছরিন মামলা তুলে নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ অবস্থায় বোর্ড পরীক্ষা শুরুর দিন থেকে ভাই নোমান নাছরিনকে পরীক্ষার হলে বসিয়ে দিয়ে আসত। শনিবার সকালে বোনকে নিয়ে পরীক্ষার হলে বসিয়ে দেয়ার জন্য মাদ্রাসায় ঢোকার সময় মাদ্রাসার পিয়ন মোস্তফা নোমানকে ভেতরে প্রবেশে বাধা দেয়। নাছরিন নিজে পরীক্ষার হলে বসতে পারবে বলে নোমানকে বাইরে থাকতে বলে। নাছরিন পরীক্ষার হলে বসলে সিরাজউদ্দৌলার অনুসারী কয়েকজন ছাত্রী নাছরিনকে হল থেকে ডেকে ছাদে নিয়ে যায়। এ সময় তারা মামলাটি উঠিয়ে নেয়ার জন্য নাছরিনকে চাপ দেয়। এতে নাছরিন নত না হওয়ায় তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন নিয়ে সে নিচে দৌড়ে আসে। খবর পেয়ে ভাই নোমান অগ্নিদগ্ধ নাছরিনকে প্রথমে সোনাগাজী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরে ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় নাছরিন জানান, তিনি পরীক্ষা কেন্দ্রে গেলে বোরকা পরা এক ছাত্রী তাকে বলে, তার এক বান্ধবীকে (নিশাত) ছাদের ওপর মারপিট করা হচ্ছে। এ কথা শুনে তিনি ছাদে গেলে তার ওপর কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে বোরকা পরা কয়েকজন ছাত্রী পালিয়ে যায়। কষ্ট ও যন্ত্রণায় নাছরিন জানান, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় তার শরীরে আগুন লাগানো হয়েছে। পরীক্ষার হলে দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবল রাসেদ ও মাদ্রাসার নিরাপত্তা প্রহরী মোস্তফা জানান, ঘটনার সময় ছাদ থেকে চিৎকার করতে করতে নাছরিন নিচে নেমে আসলে আমরা দ্রুত তার শরীরের আগুন নেভানোর চেষ্টা করি। এ সময় মাদ্রাসার অন্য পরীক্ষার্থীরা এগিয়ে এসে তার শরীরের আগুন নিভিয়ে তাকে হাসপাতালে পাঠায়। ঘটনার কিছুক্ষণ পর ফেনীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পিকে এনামুল করিম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহেল পারভেজ, সোনাগাজী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সাইকুল আহমদ ভুঞা মাদ্রাসায় পৌঁছে পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় অগ্নিদগ্ধ নাছরিনের বান্ধবী নিশাত জানান, তাকে কেউ মারধর করেনি। পরীক্ষা হলে উপস্থিত ২৩ জন পরীক্ষার্থী জানান, নাছরিন হলে এসে তার প্রবেশপত্রসহ অন্য সামগ্রী পরীক্ষা কেন্দ্রের টেবিলে রেখে গিয়ে বাইরে চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর আগুনের ঘটনা ঘটে। তবে ঘটনা কিভাবে ঘটেছে তারা কিছু জানেন না। পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব নুরুল আফচার একই রকম কথা বলেন। ফেনী সদর হাসপাতালের ডাঃ আবু তাহের জানায়, ভিকটিমের শরীর ৮০ ভাগ ঝলসে গেছে। তাই তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ২৭ মার্চ নাছরিনকে যৌন হয়রানির অভিযোগে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় নাছরিনের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে মামলা করেন সোনাগাজী থানায়। ওই মামলায় অধ্যক্ষ ফেনী কারাগারে আছেন। মাদারীপুরে ছাত্র নির্যাতন- শিক্ষকের কুশপুতুল দাহ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা মাদারীপুর থেকে জানান, শনিবার রাজৈরে শিক্ষকের হাতে নবম শ্রেণীর এক ছাত্র নির্যাতনের প্রতিবাদে ও প্রধান শিক্ষকসহ ৫ শিক্ষকের অপসারণ দাবিতে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-ছাত্রীরা অফিসসহ শ্রেণীকক্ষে তালা ঝুলিয়ে ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধন ও প্রধান শিক্ষকের কুশপুতুল দাহ করেছে। বিক্ষোভ মিছিলটি আড়ুয়াকান্দি আনব উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বের করে স্থানীয় কদমবাড়ি ইউনিয়ন কলেজ হয়ে বিদ্যালয় চত্বরে এসে শেষ হয়। সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এ কর্মসূচী পালন করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-ছাত্রীরা। কর্মসূচীতে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় এলাকাবাসী ও অভিভাবক। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ি ইউনিয়নের আড়ুয়াকন্দি আনব উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র কিংকন বৈদ্যের বিরুদ্ধে প্রায় স্কুল অনুপস্থিত হয়ে দিনের পর দিন বাইরে ঘোরাফেরা করার অভিযোগ ছিল। স্কুলের শিক্ষক (সম্পর্কের মামা) সুবোধ বিশ^াসের বিষয়টি চোখ এড়ায়নি। মঙ্গলবার এমনই একটি ঘটনা চোখে পড়ে যায় তার। অধিকার বশে তিনি কিংকনকে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে স্কুলে যায়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে কিংকনের বেয়াদবির মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে স্কুলের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে তাকে প্রহার করে কয়েক শিক্ষক। শেষে ক্ষমা প্রার্থনা ও মুচলেকা দিয়ে বাবা সমর বৈদ্য ছেলেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। পরদিন বুধবার কিংকন বৈদ্যকে রাজৈর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসী ও ছাত্রছাত্রীরা ফুঁসে ওঠে এবং শনিবার এই প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করে।
×