ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খালেদাকে এখনও সুচিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না ॥ ফখরুল

প্রকাশিত: ১০:০৯, ৭ এপ্রিল ২০১৯

 খালেদাকে এখনও  সুচিকিৎসা  দেয়া  হচ্ছে না ॥  ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও তাকে সুচিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার দুপুরে পুরানা পল্টনের সিপিবি কার্যালয়ের মৈত্রী মিলনায়তনে কল্যাণ পার্টির ত্রিবার্ষিক জাতীয় কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ করেন। ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া এখন হাঁটতে পারেন না, চলতে পারেন না, ঠিকমতো খেতেও পারেন না। তারপরও সরকার তাকে বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করেনি। আমরা বার বার দাবি জানিয়েছি তাকে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার জন্য। কারণ, আমরা মনে করি না বিএসএমএমইউ-তে তার সঠিক চিকিৎসা হবে। তারা শুধু ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য সংবিধান ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। তিনি আরও বলেন, সরকার চক্রান্তকারীদের সঙ্গে আপোস করে ক্ষমতায় আছে। এ সরকার অত্যন্ত সচেতনভাবে যারা ওয়ান-ইলেভেনে চক্রান্ত করেছে তাদের সঙ্গে আপোস করে ক্ষমতায় আছে। তাদের সঙ্গে জনগণ নেই, বন্দুকের নলের জোরে তারা ক্ষমতায় আছে। ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র হচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২০ দল এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে কোন ফাটল নেই। আমাদের ঐক্য সৃদৃঢ়। কাজেই কেউ জোটে ভাঙ্গন ধরাতে পারবে না। ফখরুল বলেন, এ দেশের রাজনীতিকে বিরাজনীতিকরণের জন্য অনেক আগেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়। ওয়ান-ইলেভেনের সময় যে সরকার ক্ষমতায় এসেছিল তা অসাংবিধানিক সরকার। আমরা এটাও জানি, আজকে যারা ক্ষমতায় আছে তারা দীর্ঘকাল আন্দোলন করে তাদের এনেছিল। তাই আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গর্ব করে বলেছিল, ‘ওয়ান-ইলেভেনের সরকার আমাদের আন্দোলনের ফসল।’ এসব কথা আমরা ভুলে যাইনি। মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচনের আগে যখন আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করেছিলাম তখন তিনি বলেছিলেন, আপনাদের বিরুদ্ধে যে সকল মামলা হয়েছে তার তালিকা দেন। আমরা তালিকা দেয়ার পর কি দেখলাম? সেই মামলার তালিকা ধরে ধরে আমাদের নেতাকর্মীদের আরও বেশি গ্রেফতার করা হলো,গায়েবি মামলার পরিমাণ আরও বেড়ে গেল। এই হলো সরকারের প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস। বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচনে বিএনপি পরাজিত হয়নি। কে বলেছে আমাদের পরাজয় হয়েছে? পরাজিত হয়েছে তো আওয়ামী লীগ। তারা এখন জনগণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। আমরা এখন জনগণকে সঙ্গে নিয়ে অপ্রতিরোধ্য আন্দোলন গড়ে তুলে আমাদের বুকের ওপর যে জগদ্দল পাথর আছে তা সরিয়ে দেব। দেশে রাজনীতি নেই, রাজনীতিকে কবর দেয়া হয়েছে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, দেশে এখন আর কোন রাজনীতি নেই। সমস্ত কিছুকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী অবলীলায় মিথ্যা বলেন অভিযোগ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন বিএনপির বিরুদ্ধে নাকি কোন মামলাই মিথ্যা নয়। এগুলো কি কেউ বিশ্বাস করে? সারা দেশের মানুষ জানে খালেদা জিয়াসহ বিএনপি নেতাদের নামে করা মামলা সত্য না মিথ্যা। এসব করে আওয়ামী লীগ জনগণ থেকে দূরে সরে গেছে। জনগণের সঙ্গে তাদের কোন সম্পর্ক নেই, বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তারা দেউলিয়া হয়ে গেছে। জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রকে সম্পূর্ণরূপে করায়ত্ত করে জোর করে ক্ষমতায় টিকে আছে। তবে জোর করে ক্ষমতায় বেশিদিন টিকে থাকা যায় না, বিশ্বের ইতিহাস তাই বলে। ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ নেতারা প্রায়ই বলেন, বিএনপি নাকি চক্রান্ত করে ক্ষমতায় আসে। কিন্তু বিএনপি কোনদিন চক্রান্ত করে ক্ষমতায় আসেনি। বিএনপি প্রতিবার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় এসেছে। কখনও পেছনের দরজা দিয়ে বা অসুস্থভাবে ক্ষমতায় আসেনি। কাউন্সিলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, যেই গণতন্ত্রের জন্য আমরা লড়াই করেছিলাম সেই গণতন্ত্র আজ আর নেই। কারণ, গণতন্ত্রের বাহন হলো নির্বাচন। কিন্তু দেশের কোন নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারে না। আমরা জানি, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২৯ ডিসেম্বর দিবাগত রাতেই। এই নির্বাচনে জনগণ ভোট দেয়নি। ভোট দিয়েছে কিছু সরকারী কর্মচারী আর আওয়ামী লীগের কর্মীরা। আর তাদের পাহারা দিয়েছে পুলিশ, বিজিবি এবং র‌্যাব। ফলে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নন। আর যারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত না হয়ে ক্ষমতায় থাকেন, তাদের বৈধ সরকার বলার কোন যুক্তিগত কারণ নেই। এদিকে ত্রিবার্ষিক কাউন্সিলের পর মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম আবারও কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান এবং এমএম আমিনুর রহমান মহাসচিব নির্বাচিত হন। নির্বাচনের পর সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, আমাকে চতুর্থবারের মতো দলের চেয়ারম্যান নির্বাচিত করায় সকল কাউন্সিলরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তিনি নতুন মহাসচিব ও যুগ্ম মহাসচিবের নাম ঘোষণা করে বলেন, ৯৬ ঘণ্টার মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে। কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের সভাপতিত্বে কাউন্সিল অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমান প্রমুখ। ওলামা দলের নতুন আহ্বায়ক কমিটি ॥ বিএনপির অঙ্গ সংগঠন ওলামা দলের বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত করে মাওলানা শাহ মোঃ নেছারুল হককে আহ্বায়ক এবং মাওলানা মোঃ নজরুল ইসলাম তালুকদারকে সদস্য সচিব করে ১৭১ সদস্যবিশিষ্ট নতুন আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে। শনিবার বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এ কমিটিতে ৩৩ যুগ্ম আহ্বায়ক ও ১৩৬ সদস্য রাখা হয়েছে। আহ্বায়ক কমিটি ৩ মাসের মধ্যে কাউন্সিল করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করবে বলে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
×