ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ই-কমার্সে বৈশ্বিক হারের চেয়ে দ্বিগুণ এগিয়ে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৯:৪৪, ৭ এপ্রিল ২০১৯

ই-কমার্সে বৈশ্বিক হারের চেয়ে দ্বিগুণ এগিয়ে বাংলাদেশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাজারে গিয়ে দোকানে দোকানে ঘুরে ঘুরে শাড়ি, গহনা, জুতা, প্রসাধনী, নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনাকাটার অভ্যাস দিন দিন পাল্টাচ্ছে মানুষের। ব্যস্ততা বাড়ায় এখন মোবাইল কিংবা কম্পিউটারে বসে পণ্য বেছে নিয়ে এক ক্লিকেই দিয়ে দেয়া যায় অর্ডার। পণ্য চলে আসে ঘরে বিক্রেতার দেয়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই। খাবার থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজার তো আছেই, চাইলে কিনে ফেলা যায় বাড়ি, গাড়ি, বিমান বা ট্রেনের টিকিটসহ যা দরকার সব কিছু। অনলাইনে কেনাকাটার এই বিষয়টিকেই বলা হয় ইলেকট্রনিক কমার্স বা ই-কমার্স। বিশ্বজুড়ে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর এই সেবা গ্রহণের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। এদেশে ও দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে অনলাইনে কেনাকাটা। সম্প্রতি আঙ্কটাড (বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংক্রান্ত জাতিসংঘ সম্মেলন) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিশ্বব্যাপী ই-কমার্সের বিক্রি বেড়েছে ১৩ শতাংশ। এই হিসাবের মধ্যে বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্ত থাকলেও দেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ও উদ্যোক্তাদের সংগঠন ই-ক্যাব বলছে বাংলাদেশে এই বিক্রির পরিমাণ আরও বেশি। আঙ্কটাডের দেয়া তথ্যের প্রায় দ্বিগুণ, ২৫ শতাংশ। প্রসঙ্গত, ১-৫ এপ্রিল বৈশ্বিকভাবে ই-কমার্স সপ্তাহ পালন করা হয়। আর বাংলাদেশে পালিত হয় ৭-১৪ এপ্রিল। আর ই-কমার্স দিবস পালন করা হয় ৭ এপ্রিল। আঙ্কটাড বৈশ্বিক ই-কমার্স সপ্তাহ পালনকালে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ২০১৭ সালে ‘গ্লোবাল ই-কমার্স সেল’ ১৩ শতাংশ বেড়েছে যার আর্থিক মূল্য দাঁড়িয়েছে ২৯ ট্রিলিয়ন ডলার। যদিও ইন্টারনেটের বেশিরভাগ ক্রেতাই দেশীয় উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে পণ্য কিনে থাকে। তবে ২০১৫ সালে ই-কমার্সের মাধ্যমে বিদেশ থেকে পণ্য কেনার পরিমাণ বেড়েছে ১৫ এবং ২০১৭ সালে ২১ শতাংশ। এই প্রবৃদ্ধি হিসাব করা হয়েছে মূলত যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের ওপর ভিত্তি করে। ফলে দেশের গন্ডি পার হয়ে বিজনেস টু কনজিউমার বা বি-টু-সি সেল পৌঁছে গেছে ৪১২ বিলিয়ন ডলারে। এক্ষেত্রে আগের বছরের চেয়ে বিক্রি বেড়েছে ৪ শতাংশ। এ সম্পর্কে ইউএনসিটিএডি (বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংক্রান্ত জাতিসংঘ সম্মেলন)-এর মহাসচিব মুখিসা কিতুইয়ি বলেন, ‘এসব সংখ্যা দেখেই বোঝা যায় যে রফতানির সুযোগ তৈরি করছে ই-কমার্স।’ তিনি প্রশ্ন করেন, ‘কিন্তু প্রশ্ন হলো উন্নয়নশীল দেশগুলো কী এই সুযোগ লুফে নিতে তৈরি আছে?’ তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অবস্থিত জাতিসংঘের স্থায়ী সদর সফতরে ১ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া ‘ই-কমার্স সপ্তাহে’ আলোচনা করা হবে। এবারের ই-কমার্স সপ্তাহে অংশগ্রহণকারী হিসেবে থাকছে ১২০টি দেশের এক হাজারেরও বেশি ব্যবসায়ী। ‘ফ্রম ডিজিটালাইজেশন টু ডেভেলপমেন্ট’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে পঞ্চমবারের মতো এই বৈশ্বিক আসর বসেছে। যা শেষ হয়েছে ৫ এপ্রিল। ই-কমার্সের বিষয়ে জানতে চাইলে দেশের সফটওয়্যার ও সেবা সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বেসিস’র সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, ‘দেশে ই-কমার্সের আরও প্রসার হওয়া উচিত, বিক্রি বাড়া উচিত। আমাদের সেই ধরনের পোটেনশিয়াল আছে। তবে তিনটি সমস্যা রয়েছে এই খাতে। সমস্যা তিনটির সমাধান করা গেলে এই খাতের বাজার আরও বাড়বে।’ তিনি জানান, সমস্যা তিনটির একটি হলো ইন্টারনেটের অপ্রতুলতা। দেশের সব জায়গায় ইন্টারনেট পৌঁছানো গেলে ই-কমার্সের আকার বড় হবে। ব্যাংকগুলোর অতি সতর্ক অবস্থান ই-কমার্সের প্রসারে বড় বাধা। দেশের ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা কম উল্লেখ করে আলমাস কবীর বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর আরও নমনীয় হওয়া দরকার। চাইলে ব্যাংকগুলো প্রি-পেইড কার্ড বাজারে ছাড়তে পারে। এতে ব্যাংকগুলোর ঝুঁকি কমবে। পণ্য ও সেবা ডেলিভারির সিস্টেম আরও উন্নত করতে হবে। সম্প্রতি ই-কমার্সের সঙ্গে ডাকঘর যুক্ত হয়েছে। ফলে আগামীতে পণ্য পৌঁছানোর বিষয়টি আরও দ্রুত হবে। ফলে ই-কমার্স বাড়বে দেশে।’ এদিকে ই-ক্যাবের (ই-কমার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, ‘২০১৭-২০১৮ সালে দেশে ই-কমার্সের বিক্রি বেড়েছে ২৫ শতাংশ। বৈশ্বিক ই-কমার্স সপ্তাহ উপলক্ষে ই-ক্যাব কী করছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা দেশব্যাপী ডাকঘরগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে ই-কমার্স মেলা করছি। আমাদের বিশেষ দুটি আয়োজন থাকবে। ৭ এপ্রিল রাজশাহীতে এবং ১৩ এপ্রিল সিলেটে ই-কমার্স মেলায় বিশেষ আয়োজন থাকবে দর্শনার্থীদের জন্য।’ মেলায় ভাল সাড়া পাওয়া যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সারাদেশে মেলা হওয়ায় গ্রামীণ এবং প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের কাছে পৌঁছানো যাচ্ছে। এরই মধ্যে কিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তারা দেশীয় বাজার নষ্ট করতে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। বাজারদরের চেয়ে কম দামে ই-কমার্স সাইটে পণ্য বিক্রি করছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশীয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো টিকতে পারবে না। এরই মধ্যে এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে বাজারে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে দেশীয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান বাগডুম ডট কমের নির্বাহী চেয়ারম্যান শামীম আহসান বলেন, ‘দেশে ই-কমার্সের বাজার আকার আরও বড় হওয়া উচিত। বছরে বছরে দেশের ই-কমার্স খাতের প্রবৃদ্ধি হলেও এক ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলো বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগ করে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করতে উঠে পড়ে লেগেছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য বাজার থেকে দেশীয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিতাড়িত করা। এটা করতে পারলে বিদেশী ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো এ দেশে জাকিয়ে ব্যবসা করতে পারবে। ই-কমার্স নীতিমালা পুরোপুরিভাবে না মানায় এই সমস্যা হচ্ছে।’ এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
×