ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

৩৭৩ হাওড়ে সুপেয় পানি পায়খানার ব্যবস্থা করবে সরকার

প্রকাশিত: ০৯:৩১, ৭ এপ্রিল ২০১৯

 ৩৭৩ হাওড়ে সুপেয় পানি  পায়খানার ব্যবস্থা  করবে সরকার

মশিউর রহমান খান ॥ দেশের সাতটি জেলার ৩শ’ ৭৩টি হাওড়ে বসবাসরত নাগরিকদের টেকসই পানি সরবরাহ ও উন্নতমানের পায়খানার ব্যবস্থা করে দিবে সরকার। এজন্য ৫ হাজার ৬শ’ ৬১টি গভীর নলকূপ ও ৪ হাজার ১২৬টি ইম্প্রুভ ল্যাট্রিন স্থাপন করা হবে। সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় প্রায় ৫শ’ ৮০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ব্যয়ে এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে। স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর (ডিপিএইচই) এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। সংস্থাটির ‘হাওড় অঞ্চলে টেকসই পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও হাইজিন ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন’ প্রকল্পের আওতায় এটি বাস্তবায়িত করা হবে। চলতি বছর থেকে ২০২১ সালের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করা হবে। হাওরের ৭টি জেলার ৩শ’ ৪০ ইউনিয়নের ৩শ’ ৭৩টি হাওড় অঞ্চলে বসবাসকারীদের সুবিধার্থে এটি কার্যকর করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় সাধারণ মানের ২২ হাজার ৬৪২টি নলকূপ, ৪৫৮টি পিট (স্ল্যাব কূপ) ল্যাট্রিন, দুটি গাড়ি, ২৭টি মোটরসাইকেল ও দু’টি স্পিডবোট কেনা হবে। মূলত হাওড় অঞ্চলে টেকসই পানি সরবরাহ এবং স্যানিটেশন সুবিধা দিতে ৫ হাজার ৬৬১টি গভীর নলকূপ ও ৪ হাজার ১২৬টি ইম্প্রুভ ল্যাট্রিন স্থাপন করা হবে। প্রকল্পে নলকূপ স্থাপন ব্যয় ৫৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে একটি নলকূপে এক লাখ টাকা খরচ পড়বে। অন্যদিকে ল্যাট্রিন স্থাপনে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২শ’ ৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা। ফলে প্রতিটা সাধারণ মানের ল্যাট্রিন নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ টাকা। সূত্র জানায়, উত্তরবঙ্গে দেড় শ’ থেকে ২০০ ফুট গভীরতায় সুপেয় পানি পাওয়া যায়। অপরদিকে বরিশালে এক থেকে দেড় হাজার হাজার ফুট গভীরতায় সুপেয় পানি পাওয়া যায়। কিন্তু হাওড়াঞ্চলের ৭০০ থেকে ৮০০ ফুট গভীরতায় সুপেয় পানি মিলবে। অপরদিকে হাওড় অঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বন্যাজনিত ক্ষয়ক্ষতি ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে জনস্বাস্থ্য অত্যন্ত নিম্নমানের। তাদের স্বাস্থ্যগত চলমান সমস্যার অন্যতম কারণ হিসেবে বিশুদ্ধ সুপেয় পানির অভাব এবং স্যানিটেশনের তীব্র সঙ্কট হিসেবে চিহ্নিত করেছে সরকার। পাশাপাশি সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর প্রায় ১০ ভাগ মানুষের নিরাপদ পানি সম্পর্কে কোন ধারণা রাখেন না। সরকারে করা হাওড় মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী শতকরা ৫০ ভাগ গৃহস্থলী কাজের জন্য পার্শ্ববর্তী পুকুর বা নদীর ওপর নির্ভর করতে হয়। ডিপিএইচই সূত্র জানায়, সুপেয় পানির জন্য হাওড় অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের উৎস রয়েছে। কিন্তু বন্যা অথবা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এসব উৎসের ৩০ ভাগ অকেজো হয়ে পড়ে। বর্তমানে হাওড়ে ৬০ হাজার ৪শ’ ৮২টি উৎস চালু আছে। একটি চালু পানির উৎস থেকে মাত্র ১১০ জন পানি সংগ্রহ করতে পারেন, যা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত কম। এই সমস্যা থেকে হাওড়বাসীকে সুবিধা দিতে সুপেয় পানির নলকূপ স্থাপন। অপরদিকে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় হাওড়ে স্যানিটেশন সমস্যা অত্যন্ত প্রকট। হাওড় এলাকায় বর্তমানে মাত্র ৪৪ ভাগ মানুষ স্যানিটেশন সুবিধার আওতায় রয়েছে। সেখানে সুরকি, খোয়া অথবা শুধু ইট দিয়ে তৈরি ল্যাট্রিন। এ সমস্ত ল্যাট্রিন বছরে ৬ থেকে ৭ মাস পানিতে ডুবে থাকে। ফলে দ্রুত এসব ল্যাট্রিন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এছাড়া যাদের কোন ল্যাট্রিন নেই সেই জনগোষ্ঠী পুরোপুরি স্যানিটেশন সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এছাড়া বেশকিছু হাওড় অঞ্চলে এখনও খোলা ও ঝুলন্ত ল্যাট্রিন রয়েছে, যা সম্পূর্ণ অস্বাস্থ্যকর। বাধ্য হয়েই হাওড়বাসী তা ব্যবহার করেন। তবে বেশিরভাগ অঞ্চলে দরিদ্রতার কারণে ল্যাট্রিন নির্মাণ সম্ভব হয় না। এজন্য হাওড়ের সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য ল্যাট্রিন নির্মাণ করে দেবে সরকার। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছা অনুযায়ী এ দেশের কোন মানুষই যেন নাগরিক অধিকার বঞ্চিত না হয়। সে লক্ষ্যেই বর্তমান সরকার কাজ করছে। এরই অংশ হিসেবে হাওড়ের সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে আমরা এ প্রকল্পটি হাতে নিয়েছি। বর্তমানে দেশের অন্য সকল অঞ্চলের চেয়ে তুলনামূলকভাবে হাওড়াঞ্চলে সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন সমস্যা অত্যন্ত প্রকট। হাওড়ের মানুষজন অত্যন্ত কষ্টে জীবন যাপন করেন। এ সমস্যা উত্তরণে সরকার দেশের ৭ জেলার ৩শ’ ৭৩টি হাওড়াঞ্চলে বসবাসরত নাগরিকদের টেকসই পানি সরবরাহ ও উন্নতমানের টয়লেট ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এজন্য এসব হাওড়বাসীর জন্য ৫ হাজার ৬শ’ ৬১টি গভীর নলকূপ ও ৪ হাজার ১২৬টি ইম্প্রুভ ল্যাট্রিন স্থাপন করা হবে। মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর (ডিপিএইচই) এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। সংস্থাটির ‘হাওড় অঞ্চলে টেকসই পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও হাইজিন ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন’ প্রকল্পের আওতায় এ উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করা হবে। চলতি বছর থেকে ২০২১ সালের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করা হবে। এজন্য প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫শ’ ৮০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে হাওড়ে সুপেয় পানি নিশ্চিত করতে নলকূপ স্থাপন ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা হবে। এসবের মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের জীবনমান বর্তমানের চেয়ে অনেক উন্নত হবে। এর মাধ্যমে সরকারের লক্ষ্যও বাস্তবায়ন করা সহজ হবে। এছাড়া সামাজিক প্রচারণার মাধ্যমে হাওড় অঞ্চলে নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের বিষয়ে স্থানীয় জনগণের সচেতনতা বাড়াতে কাজ করবে।
×