ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

চৈত্রের শেষভাগে ফুটেছে কদম, প্রকৃতি ভুলে যাচ্ছে ঋতু

প্রকাশিত: ০৯:২৯, ৭ এপ্রিল ২০১৯

  চৈত্রের শেষভাগে ফুটেছে কদম, প্রকৃতি ভুলে  যাচ্ছে ঋতু

সমুদ্র হক ॥ বিস্মিত লোকজন অবাক হয়ে কৌতূহলী প্রশ্ন নিয়ে তাকিয়ে আছে উর্ধপানে। যেখানে চৈত্রের শেষ ভাগে বিশাল বৃক্ষের শাখা-প্রশাখায় ফুটেছে কদম ফুল। পাতাগুলোও হলদেটে সজীব। কেউ কালের মতিভ্রমের ফেরে পড়ে বলছে ‘এখন আ-ষা-ঢ় মাস! নাহ! এখন তো চৈত্র! তবে কি এগিয়ে এসেছে আষাঢ়। প্রকৃতি কি ঋতু ভুলে গিয়ে টাইম মেশিনে ফিরে আনল বর্ষা!’ এমন ভ্রমই হওয়ার কথা। দিনাকয়েক আগে উত্তরাঞ্চলের আবহাওয়ায় ছিল গরম! হঠাৎ পাল্টে গেল। শুরু হলো ঝড় বৃষ্টি। সঙ্গে বজ্রপাতের গগনবিদারি ভীতিকর শব্দ। এখন বগুড়ার আকাশে প্রতিদিন কখনও কালো মেঘ, কখনও ছাই রঙা মেঘ। কখনও বৃষ্টি। দিনে শীত শেষের মতো অনুভব। রাতে শীতই বলা যায়। গায়ে কাঁথা চরাতে হয়। মনেই হয় না চৈত্র মাস। এরই মধ্যে বগুড়ার বিভিন্ন স্থানে কদম (নীপবন) বৃক্ষে ফুল ফুটেছে। বাংলার ষড়ঋতুর পরিচিতিতে কদম বর্ষার ফুল। নীপবনে ফুল ফুটে আষাঢ়ের আগমন ঘটে। রূপসী তরুর মধ্যে অন্যতম কদম। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন ‘এসো নীপবনে ছায়াবীথি তলে, এসো করো স্নান নব ধারা জলে...’। বাস্তবতা হলো, ঋতু বৈচিত্র্যে প্রকৃতির নিয়মে কদম ফুটবে আষাঢ়ে। শীতে পাতা ঝরবে। বসন্তে কচি পাতা (কিশলয়) গজাবে। সেই কদম এখন কিশলয়ের মধ্যেই ফুটেছে। শেরপুর রোডের ধারে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের সামনে গাছ ভর্তি কদম ফুল ফুটেছে। লোকজন চৈত্রে কদম ফুল দেখে অবাক হয়ে যান। বগুড়া সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুন জানালেন, তার স্কুলের ভিতরের কদম গাছে জ্যৈষ্ঠের শেষের দিকে ফুল ফোটে। এরপর ভাদ্র আশি^নে কমে যায়। ফের কার্তিকে ফোটে। এরপর ফুল কমে যায়। ফের ফোটে। এভাবে থেমে থেমে কদম ফুটছে। এই কদম বৃক্ষটি অনেক পুরনো। ছাল বাকর পুরু ও ফাটল। উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের একজন অধ্যাপক জানান, প্রকৃতি, ভূগঠন, আবহাওয়াগত ও জলবায়ুর পরিবর্তন ও অন্য কোন কারণে এমনটি হতে পারে। কদমের বিজ্ঞান নাম, এ্যানথোসিফালাস ইন্ডিকাস। ইংরেজী নাম লারান লিচহার্ডন্টপাইন। বাংলা নাম অনেক। যেমন, নীপ, বৃত্তপুষ্প, মেঘামপ্রিয়, কর্ণপূরক, ভৃঙ্গবল্লভ, মঞ্জুকেশিনী, পুলকি, সর্ষপ, প্রকৃষ্য, ললনপ্রিয়, সিন্ধুপুষ্প। কদমের আদি নিবাস বাংলাদেশ, ভারত, চীন, মালয়। কদম সমান্তরাল বহু শাখা বিশিষ্ট বিশাল বৃক্ষ। পাতা বড় ডিম্বাকৃতির। পরিণত পাতার চেয়ে কচি পাতা বড়। এই ফুল গোলাকৃতির ও এক পূর্ণ মঞ্জুরীর। পুষ্পাধারে অজ¯্র সরু বিকর্ণ। হলুদ ও সাদার আধিক্য বেশি। কদম ফুলের পুষ্পাধারে ফুলের বিকীর্ণ বিন্যাসে হলুদের আধিক্য বেশি অংশ পেকে গেলে পাখিরা খেতে থাকে। কদম বেশি প্রিয় বাদুরের। পাখি ও বাদুর ফল খেয়ে উড়ে যাওয়ার সময় ছোট্ট বীজ মাটিতে ফেলে দেয়। সেখানই প্রকৃতির পরিচর্যায় বেড়ে ওঠে কদম বৃক্ষ। নীপবনের শাখা-প্রশাখায় কাঠ বেড়ালি লাফিয়ে বেড়ায়। কদমের মিষ্টি ঘ্রাণ পেলেই লেজ নাড়িয়ে গাপুস গুপুস করে খেতে থাকে। ফুলের মঞ্জরীর স্বাদ কাঠ বিড়ালির প্রিয়। যেমনটি তারা পেয়ারায় পায়। পাখিকুল আর প্রাণীকুলের এমন ভোজন দেখে কদমের গুণাগুণ নিয়ে গবেষণা চলছে। বর্তমানে এই ফুল কৌতূহলী করে তুলেছে। বাংলাদেশে অসময়ে কদম ফুটতে দেখা যায়নি। বগুড়ায় হেমন্ত কালে কদম ফুটেছিল। প্রকৃতির সঙ্গে বৃক্ষ ও প্রাণীকুলের অসাধারণ যোগাযোগ এনে দিয়েছে এই কদম ফুল।
×