ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইবতেদায়ি শিক্ষকদের লাগাতার কর্মসূচী

প্রকাশিত: ১০:৫২, ৬ এপ্রিল ২০১৯

 ইবতেদায়ি  শিক্ষকদের  লাগাতার  কর্মসূচী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চাকরি জাতীয়করণসহ ৯ দফা দাবিতে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচী পালন করছেন বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকরা। শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সামনে পঞ্চম দিনের মতো কর্মসূচী পালন করেন তারা। দাবি পূরণ না হলে এবার ক্লাসে ফিরবেন না বলে তারা ঘোষণা দিয়েছেন। স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সভাপতি কাজী রুহুল আমিন চৌধুরী বলেছন, ১৯৯৪ সালে একই পরিপত্রে রেজিস্ট্রার বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকদের বেতন ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ২০১৩ সালে বর্তমান সরকার ২৬ হাজার ১৯৩ বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করে। প্রাথমিকের মতো স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলো শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ হয়নি। ফলে হাজার হাজার শিক্ষক মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কর্মসূচীতে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির মহাসচিব কাজী মোখলেছুর রহমান, সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি নজরুল ইসলাম, যুগ্ম মহাসচিব আবু মুছা ভূঁইয়া, দফতর সম্পাদক ইনতাজ বিন হাকিম প্রমুখ। শিক্ষকরা বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো ইবতেদায়ি পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেয়। অথচ মাস শেষে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ২২ থেকে ৩০ হাজার টাকা বেতন পেলেও ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকরা বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত। ৩৪ বছর ধরেই তারা বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। এই দ্রব্যমূল্যের বাজারে এটা অমানবিক, শিক্ষকদের অবমাননা করা হচ্ছে। তাদের দাবি মেনে না নেয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে জানান তারা। অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান ধর্মঘট চলবে। এর আগে রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত সব স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণসহ বিভিন্ন দাবিতে কয়েকবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচী পালন করেছেন এই শিক্ষকরা। প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছেন। এবার আবারও আন্দোলনে নেমেছেন তারা। এবার দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার অবস্থান কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে জানিয়ে সমিতির মহাসচিব কাজী মোখলেছুর রহমান বলেন, পঞ্চম দিনের মতো অবস্থান ধর্মঘটেও কোন সরকারী প্রতিনিধি আসেননি। বেতনবিহীন স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা নীতিমালা ২০১৮ সালে যে সমস্ত শর্ত লিপিবদ্ধ করা হয়েছে তা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বেতনভুক্ত সংযুক্ত ইবতেদায়ি মাদ্রাসার জন্য প্রযোজ্য নয়। এ ধরনের কঠিন শর্ত প্রত্যাহার করে সহজ শর্তে বাংলাদেশ মাদ্রাসা বোর্ড কর্তৃক রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত সব স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা সরকারীকরণের দাবি জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত সব স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা সরকারীকরণে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব। এ সময় শিক্ষা সচিবের দেয়া প্রতিশ্রুতি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান তিনি। জানা গেছে, সারাদেশে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা প্রায় ১৫ হাজার। প্রতিটিতে শিক্ষক রয়েছেন পাঁচজন করে। ৭৫ হাজার শিক্ষক রয়েছেন। কিন্তু মাত্র ১ হাজার ৫১৯ মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক দুই হাজার ৫০০ ও সহকারী শিক্ষকরা ২ হাজার ৩০০ টাকা করে ভাতা পাচ্ছেন। বাকি শিক্ষকরা ভাতা বঞ্চিত। অবস্থান কর্মসূচীতে ৯ দফা দাবি তুলে ধরেন শিক্ষকরা। দাবির মধ্যে আছে- স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রসা নীতিমালা ২০১৮ সংশোধন করে সহজ শর্তে সরকারীকরণ করা, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক স্বীকৃতি নবায়নের সহজ আইন প্রণয়ন করা। পূর্বের নিয়ম অনুযায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত সকল শিক্ষককে বহাল রাখা, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার স্থায়ী রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করা, দুজন আলিম শিক্ষকের মধ্যে একজন এইচএসসি (সমমান) শিক্ষক অন্তর্ভুক্তিকরণ। আরও আছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো প্রতিটি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার অফিস সহায়ক নিয়োগ প্রদান, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকদের পিটিআই ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, ইবতেদায়ি মাদ্রাসার আসবাবপত্রসহ ভবন নির্মাণ, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের কোডপ্রাপ্ত ৬ হাজার ৯৯৮ ও মন্ত্রণালয়ের আবেদন করা মাদ্রাসাগুলোকে কোড প্রদান করে সব মাদ্রাসাকে সরকারীকরণ করা।
×