ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গ্রেফতারের পর সুপ্রভাতের মালিক রিমান্ডে

প্রকাশিত: ১০:৪৬, ৬ এপ্রিল ২০১৯

 গ্রেফতারের পর  সুপ্রভাতের  মালিক রিমান্ডে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেসনাল-এর ছাত্র আবরার চৌধুরীকে প্রগতি সরণিতে বাসচাপা দিয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার সুপ্রভাত পরিবহনের মালিক ননী গোপাল সরকারের (৪২) তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। শুক্রবার বিকেলে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক বাকী বিল্লাহ এই আদেশ দেন। এদিন দুপুরের পর ননী গোপালকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্তের স্বার্থে তিনদিনের রিমান্ডের আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক কাজী শরিফুল ইসলাম। এ সময় শুনানি শেষে বিচারক তিন দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন। জানা যায়, ঢাকা মহানগর হাকিম আদালত গত ২৭ মার্চ ঘাতক বাসের কন্ডাক্টর ইয়াসিন আরাফাত ও হেলপার ইব্রাহিমকে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠান। পরে ২ এপ্রিল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন তারা। আদালত তাদের কারাগারে পাঠিয়ে দেন। এছাড়া ২০ মার্চ ঢাকা মহানগর হাকিম আদালত বাসচালক সিরাজুল ইসলামকে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠান। সপ্তাহ পর ২৮ মার্চ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন সিরাজুল। তাকেও কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। এর আগে সুপ্রভাত পরিবহনের ঘাতক বাসটির (ঢাকা মেট্রো-ব-১১-৪১৩৫) মালিক ননী গোপাল সরকারকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার পরে মুগদার একটি বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। আবরার চৌধুরীকে চাপা দেয়ার আগে আরও একটি দুর্ঘটনা ঘটিয়েছিল সুপ্রভাত পরিবহনের বাসটি। গুলশানের শাহজাদপুর বাঁশতলা এলাকায় সিনথিয়া নামে এক কলেজছাত্রীকে ধাক্কা দেয়ার পর চালক সিরাজুলকে আটক করে ট্রাফিক পুলিশের হাতে তুলে দেয় যাত্রীরা। এরপর কন্ডাক্টর ইয়াসিন আরাফাতকে বাসটি নিয়ে সরে পড়ার পরামর্শ দেন মালিক ননী গোপাল সরকার। পালানোর সময় আবরারকে চাপা দেয় বাসটি। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শুরু হলে আত্মগোপন করেন ননী গোপাল সরকার। পুলিশ জানায়, দুর্ঘটনার পর পরই বাসের কন্ডাক্টর ইয়াসিন আরাফাতকে বাসটি নিয়ে সরে পড়ার পরামর্শ দেন মালিক ননী গোপাল সরকার। এই পরামর্শ দেয়ার পর পালিয়ে যান তিনি নিজেও। শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানানো হয়। এ সময় ডিএমপির মিডিয়া এ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান আরও জানান, সুপ্রভাত পরিবহনের ওই বাসটি আড়াই বছর আগে কিনেছেন ননী গোপাল সরকার। তবে এখনও মালিকানা পরিবর্তন করেননি তিনি। বাসটির রুট পারমিট ছিল ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া। তবে সুপ্রভাত কোম্পানির সঙ্গে যোগসাজশে এই ব্যানারে সদরঘাট থেকে গাজীপুরা রোডে চলাচল করত বাসটি। আবরারকে চাপা দেয়ার আগে আরও একটি দুর্ঘটনা ঘটায় সেদিন বাসটি। প্রথম দুর্ঘটনার পর ভিকটিমের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা তাদের দায়িত্ব ছিল। কিন্তু বাসের মালিক ননী গোপাল কন্ডাক্টরের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই জানার পরও তাকে বাসটি নিয়ে পালিয়ে যেতে বলেন। এরপর বাসটি নিয়ে সরে পড়ার সময় আবরারকে চাপা দেয় কন্ডাক্টর ইয়াসিন আরাফাত। এ বিষয়ে গোয়েন্দা উত্তর বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ জুনায়েদ আলম সরকার জানান-ঘটনার পর থেকেই ননী গোপাল পলাতক ছিলেন। গুলশান থানায় দায়ের করা মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তর হওয়ার পর আমরা তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা শুরু করি। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার বিকেলে জানতে পারি, তিনি মুগদায় অবস্থায় করছেন। তখন তাকে সেখান থেকে গ্রেফতার করা হয়। উল্লেখ্য গত ১৯ মার্চ ভোর ৫টা ৪৫ মিনিটে ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকা থেকে সুপ্রভাত বাসটি ছেড়ে আসে। তখন চালক ছিলেন সিরাজুল ইসলাম। বাসটি গুলশানের শাহজাদপুর বাঁশতলা এলাকা অতিক্রম করার সময় মিরপুর আইডিয়াল গার্লস ল্যাবরেটরি কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সিনথিয়া সুলতানা মুক্তাকে চাপা দেয়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। তখন পরিবহনের যাত্রীরা চালক সিরাজুলকে ট্রাফিক পুলিশে সোপর্দ করেন। ঘটনাস্থলের কিছু দূরে বাসটি রাখা হয়। এ সময় কন্ডাক্টর ইয়াসিন আরাফাত বাসের মালিকের কাছে ফোন দিয়ে জানায়, বাসটি এখানে থাকলে জনগণ পোড়াতে বা ভাংচুর করতে পারে। তখন মালিক আরাফাতকে দ্রুত বাসটি সেখান থেকে নিয়ে সরে পড়তে বলেন। এরপর চালকের আসনে বসে কন্ডাক্টর বাসটি নিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় প্রগতি সরণিতে যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে আবরার বাসটির নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারান। ঘটনার প্রতিবাদে ঘাতক বাস সুপ্রভাত পরিবহনের রুট পারমিট বাতিল, ঘাতক চালকের ফাঁসির দাবিসহ আট দফা দাবিতে বেশ কয়েকটি সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এরপরই পুলিশ একের পর এক তাদের গ্রেফতার করে।
×