ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শুধু পহেলা বৈশাখেই ১৪-১৫ হাজার কোটি টাকা বাণিজ্যের আশা ॥ অর্থনীতি চাঙ্গা

প্রকাশিত: ১০:৪৪, ৬ এপ্রিল ২০১৯

 শুধু পহেলা বৈশাখেই ১৪-১৫ হাজার কোটি টাকা বাণিজ্যের আশা ॥ অর্থনীতি  চাঙ্গা

এম শাহজাহান ॥ তিন উৎসব সামনে রেখে চাঙ্গা দেশের অর্থনীতি। বাঙালীর সর্বজনীন প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ সামনে রেখে শো-রুম ও ফ্যাশন হাউসগুলোতে শুরু হয়েছে কেনাকাটা। শবে-বরাত ও ঈদকেন্দ্রিক অর্থনীতির বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। ঈদের পোশাক তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কেরানীগঞ্জের ৮ হাজার পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। ঢাকার পার্শ্ববর্তী গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী এবং মানিকগঞ্জের বিভিন্ন কারখানায়ও তৈরি হচ্ছে ঈদের পোশাকসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী। শুধু পহেলা বৈশাখে প্রায় ১৪-১৫ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা বাণিজ্যের আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। ইতোমধ্যে বাজারে নগদ টাকার প্রবাহ বেড়ে গেছে। পহেলা বৈশাখের উৎসব ভাতা চলতি সপ্তাহের মধ্যে পেয়ে যাবেন সরকারী-বেসরকারী চাকরিজীবীরা। উৎসবকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যের কারণে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি আরও গতিশীল হয়ে উঠার সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে, পহেলা বৈশাখে বর্ষবরণের উৎসবে নতুন পোশাকের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি থাকে। ইতোমধ্যে রাজধানীর আজিজ সুপার মার্কেট, বসুন্ধরা সিটি, নিউমার্কেট, বেইলি রোড, গুলিস্তান ও পুরান ঢাকার মার্কেটগুলো ঘুরে দেখা গেছে, বৈশাখী পোশাক কিনতে ভিড় করছেন নানা বয়সী মানুষ। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য নগরীর বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতেও বৈশাখী পোশাক বিক্রি শুরু হয়েছে। লাল সাদা আর হলুদ রঙে ছেয়ে গেছে রাজধানীর বড় বড় শোরুম, আউটলেট এবং পাড়া মহল্লার দোকানপাট। এই উৎসব ঘিরে বাহারি পোশাক নিয়ে প্রস্তুত দেশীয় ব্র্যান্ডগুলো। ব্লক, বুটিক ও হ্যান্ড পেইন্টের শাড়ি ছাড়াও মিলছে পাঞ্জাবি, ফতুয়া, সালোয়ার কামিজ থেকে শুরু করে ছোটদের পোশাক। আছে পোশাকের সঙ্গে মিল রেখে সাজ সজ্জার নানা অনুষঙ্গও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারীভাবে পহেলা বৈশাখের উৎসব ভাতা দেয়ার পর থেকে গত কয়েক বছর ধরে সারাদেশে বৈশাখকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যের আকার বড় হচ্ছে। এবার সরকারী কর্মচারীরা প্রায় সাড়ে ৭০০ কোটি টাকার বৈশাখী ভাতা তুলবেন। এছাড়া বেসরকারী অনেক প্রতিষ্ঠানে বৈশাখী উৎসব ভাতা দেয়া শুরু হয়েছে। ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের তথ্যমতে, বৈশাখী উৎসবে এবার প্রায় ১৪-১৫ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হবে। এর মধ্যে সরকারী কর্মচারীদের বেতন-বোনাস বাবদ যোগ হবে প্রায় ৭৫০ কোটি টাকা। ব্যাংক-বীমাসহ অন্যসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বৈশাখী বোনাস হিসেবে যোগ হবে প্রায় সাড়ে ৫০০ কোটি টাকা। পোশাক খাতে বিক্রির পরিমাণ হবে ৬-৭ হাজার কোটি টাকা। খাবার ও অন্যান্য কেনাকাটায় ৫-৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। এছাড়া ভোগ্যপণ্যে আরও লেনদেন হবে প্রায় ২ থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকার ওপরে। এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মোঃ সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, উৎসব কেন্দ্রিক অর্থনীতির ব্যপ্তি বড় হচ্ছে। বিশেষ করে সরকারী কর্মচারী-কর্মকর্তাদের সর্বজনীন উৎসব হিসেবে পহেলা বৈশাখের ভাতা দেয়ার পর থেকে এখন বেসরকারীখাতে ও ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। ফলে নগদ টাকার প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় বেচাবিক্রি আগের যেকোন সময়ের চেয়ে এখন ভাল। তিনি বলেন, বৈশাখকেন্দ্রিক পণ্য সামগ্রী বিশেষ করে পোশাক-আশাকের একটি বড় বেচাকেনা হয় এই সময়ে। এছাড়া অন্যান্য সামগ্রীর বেচাবিক্রিও বাড়ে। ফলে অর্থনীতির জন্য এটি একটি ইতিবাচক দিক। এদিকে, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির তথ্যমতে, সারাদেশে বিভিন্ন পণ্যের ছোট-বড় প্রায় ২৬ লাখ দোকান রয়েছে। বৈশাখ উপলক্ষে এসব দোকানিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। একইসঙ্গে বকেয়া আদায়ে নতুনভাবে হালখাতার আয়োজন করা হয়েছে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। সংগঠনটির এক উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, পহেলা বৈশাখে সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হয় দেশীয় তৈরি পোশাক। ইতোমধ্যে মার্কেটগুলোতে বৈশাখী কেনাকাটা শুরু হয়েছে। তথ্যমতে, বছরে যেসব কেনাকাটা হয় তার ১০ শতাংশ হয়ে থাকে পহেলা বৈশাখে। দুই ঈদে মিলে ৫০ শতাংশ হয়। বাকিটা সারাবছর। বৈশাখে শাড়ি, পাঞ্জাবি এবং ফতুয়া বেশি বিক্রি হয়। ব্যবসায়ীরা বিক্রি বাড়াতে ইতোমধ্যে বিভিন্ন পণ্যের ওপর ছাড় দিচ্ছেন। রাজধানীর শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন রং ও বাহারি ডিজাইনের পোশাকের পসরা সাজিয়েছেন দোকানিরা। রয়েছে মেয়েদের বাঙালিয়ানা সাজের গলার মালা, দুল ব্রেসলেট, চুড়ি ও কারুকাজের হাতব্যাগও। ছেলেদের পোশাকে রয়েছে বিভিন্ন রঙের পাঞ্জাবি, লুঙ্গি ও গামছা। ওয়ারীর গ্রামীণ ইউনো ক্লো’র বিক্রয়কর্মী ফয়সাল মাহমুদ জনকণ্ঠকে জানান, বৈশাখ সামনে রেখে তাদের বিক্রি বেড়েছে। এছাড়া শো-রুমের বেশিরভাগ পোশাক বৈশাখকেন্দ্রিক হওয়ায় ক্রেতারা কেনাকাটা বেশি করে করছেন। তিনি বলেন, তাদের ঈদের প্রস্তুতিও রয়েছে। এ কারণে দম ফেলার সময় নেই তাদের। এছাড়া পহেলা বৈশাখে হালখাতা করবেন ব্যবসায়ীরা। হালখাতায় ক্রেতাদের মিষ্টি-নিমকি খাওয়ান তারা। বর্তমানে হালখাতা উৎসব রং হারালেও মিষ্টি খাওয়ানোর প্রচলন আছে। ফলে বৈশাখে মিষ্টির দোকানের ব্যবসা চার থেকে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ঢাকার বেইলি রোড, আজিজ মার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট, বসুন্ধরা ও যমুনা ফিউচার পার্কসহ সর্বত্র বৈশাখী পোশাকের ছড়াছড়ি। পোশাকের পাশাপাশি এই উৎসবে বিক্রি হবে মাটির বাসন, মাটির গহনা থেকে সোনার গহনা। মুরালি, চিরা, দই ও পোলাওয়ের চাল ও মাংসের চাহিদা রয়েছে। গেঞ্জি ফতুয়া থেকে শাড়ি এবং বাঁশের বাঁশি থেকে স্টিল আলমারি, খাট বিছানার চাদর থেকে পর্দা ও ফ্লোর কার্পেট সব বিক্রি হবে এই উৎসবে। বিক্রি হবে টিভি ও ফ্রিজ। তাই সব পণ্যের দোকানে এখন ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই ভিড় সার্বজনীন। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সব শ্রেণীর ক্রেতা দোকানে দোকানে নতুন পণ্যের খোঁজ করছেন। বিক্রি বাড়াতে ফার্নিচার, ইলেক্ট্রনিক্স ও পোশাকের দোকানে বিশেষ লোভনীয় ছাড় দেয়া হয়েছে। বাড়ছে কেনাকাটা।
×