ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

গোয়েন্দা সংস্থার দাবি

আইএসআই-ই গুলি গ্রেনেডের চালান পাঠিয়েছিল

প্রকাশিত: ০৯:৪৪, ৬ এপ্রিল ২০১৯

 আইএসআই-ই গুলি গ্রেনেডের চালান পাঠিয়েছিল

শংকর কুমার দে ॥ রাজধানী ঢাকায় উদ্ধার হওয়া ‘মেড ইন পাকিস্তান’ লেখা গুলি, গ্রেনেড, অস্ত্রের চালান পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এনেছিল, এমনটাই দাবি ঢাকার গোয়েন্দা সংস্থার। গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নাশকতা ও সহিংস সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে ব্যবহারের জন্য অস্ত্রের চোরাচালান এনেছিল সরকারবিরোধী পক্ষের বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত অশুভ চক্র ও জঙ্গী গোষ্ঠী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপ, গোয়েন্দা নজরদারির কারণে অস্ত্রের গায়ের লেখা মেড ইন পাকিস্তান গুলি-গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নাশকতা ও সহিংসতা ঘটানো যায়নি বলে তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থার দাবি। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায় উদ্ধার হওয়া মেড ইন পাকিস্তান লেখা গুলি-গ্রেনেডের চালান আনয়নকারী দুর্বৃত্ত-সন্ত্রাসী চক্রের শিকড় অনেক গভীরে। কারা, কোন্পণ্ডে কিভাবে পাকিস্তান থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ ঢাকায় এনেছে তার কোন ক্লু রাখেনি অস্ত্র চোরাচালানি চক্র। এ কারণে কোন আসামিকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। তবে তদন্তে অগ্রগতি হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের উগ্রপন্থী বলে পরিচিত অশুভ চক্র নাশকতা চালানোর জন্য যে এই অস্ত্র এনেছিল, তা সন্দেহের অতীত নয়। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ ডিসেম্বর যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তার প্রায় দেড় মাস আগে রাজধানীর পল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশপাশে সহিংস সন্ত্রাসের তান্ডবলীলা চালিয়ে মহড়া দিয়েছে বিএনপি উগ্রপন্থী নেতা-কর্মী নামধারী দুর্বৃত্তরা। গত ১৪ নবেম্বর রাজধানী পল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশপাশে সহিংস সন্ত্রাসের তান্ডবলীলা চালানোর অভিযোগে বিএনপি উগ্রপন্থী নেতা-কর্মী নামধারী দুর্বৃত্তসহ মদদদাতাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে থানায়। কর্তব্যরত পুলিশের ওপর আক্রমণ করে পুলিশ সদস্যদের হত্যা করে দেশে অস্থিতিশীল ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে নির্বাচন বানচাল করাই ছিল সহিংস সন্ত্রাস চালানোর উদ্দেশ্য বা মোটিভ। রাজধানীর পল্টন থানায় দায়ের করা তিনটি মামলায় অর্ধশত লোককে গ্রেফতার করে কাউকে আবার রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীর বিজয়নগরের ডাস্টবিন থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ৮ রাউন্ড নাইন এমএম পিস্তলের গুলি, ২৮ রাউন্ড একে ফোর্ট সেভেন রাইফেলের গুলি ও ১৯ রাউন্ড শটগানের গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। গুলির গায়ে লেখা ‘মেড ইন পাকিস্তান’। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে থেকেই দেশে সহিংস সন্ত্রাস, নাশকতা চালানোসহ নানা ধরনের কর্মকান্ডের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর জন্য গুলি-গ্রেনেড আনা হতে পারে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপ ও নজরদারির কারণে যেই চক্র বা গোষ্ঠী অস্ত্রের চালান এনেছে তা দিয়ে আর সহিংসতা ও নাশকতা চালানো সম্ভব নয় ভেবেই ডাস্টবিনে গুলি ও গ্রেনেড ফেলে দেয়া হয়। একদিকে সহিংস সন্ত্রাস বা নাশকতা চালানো যেমন সম্ভব নয় তেমনি আরেকদিকে গুলি, গ্রেনেডের মতো অস্ত্র নিজেদের কাছে রাখাও নিরাপদ নয়। এ কারণেই রাজধানীর পল্টন থানাধীন ডাস্টবিনে গ্রেনেড-গুলি ফেলে দেয়া হয় বলে অনুমিত হয়। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের দল এসে গ্রেনেড নিষ্ক্রিয় করেছে। তবে কার হেফাজতে মেড ইন পাকিস্তান লেখা গুলি-গ্রেনেড ছিল তা খুঁজে বের করতে তদন্ত করা হচ্ছে বলে পল্টন থানার ওসির দাবি। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার দুই-তিন বছর আগে থেকে দেশে সহিংস সন্ত্রাস, নাশকতা, নৈরাজ্য করে আসছিল সরকারবিরোধী বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। এর মধ্যে জঙ্গী গোষ্ঠী, জামায়াত-শিবির ও বিএনপির উগ্রপন্থী পরিচিত একটি চক্র জড়িত যাদের অনেকের বিরুদ্ধেই মামলা হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের একটি অংশের সঙ্গে পাকিস্তান সরকার ও পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার গোপন যোগাযোগের বিষয়টি ওপেন সিক্রেট। দশম জাতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে সারাদেশে পেট্রোলবোমা, আগুনসন্ত্রাস চালিয়েছে বিএনপি-জামায়াত। তখন থেকেই মেড ইন পাকিস্তান লেখা গুলি-গ্রেনেডের চালান আনা হয়েছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের সন্দেহ। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশে নাশকতা-নৈরাজ্য চালাতে পারে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এমনটাই দাবি করে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল বিদেশী গণমাধ্যমে।
×