ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ছাদবাগানের ফেরিওয়ালা যশোরের ফারহানা

প্রকাশিত: ০৯:৩২, ৬ এপ্রিল ২০১৯

 ছাদবাগানের ফেরিওয়ালা যশোরের ফারহানা

বাতাবি লেবুর সুবাসে ছাদটা ভরে উঠেছে। আবার বাতাবী লেবুও ধরে আছে ডালে ডালে। প্রকৃতির এমন বিচিত্র সমাহার প্রকৃতিপ্রেমী যে কোন মানুষকে মাতোয়ারা করে তোলে। উদাসী করে দেয়। বাতাবি লেবুর সঙ্গে যেন মিতালী থাই কাঁচামিঠা আম, গৌরমতি আম কিংবা আমলকী আর মেওয়া ফলের। সবারই সহবস্থান। তবে তা ছাদে। ছাদবাগানের এমন অদ্ভুত সুন্দর ব্যঞ্জনা সৃষ্টি হয়েছে যশোর শহরতলীর বকচর মসজিদপাড়া এলাকার ফারহানা ইয়াসমীনের বাড়ির ছাদে। তার কথায় ‘মনের সবটুকু রং হৃদয়ের সবটুকু অনুভূতি আর হাতের আলতো ছোঁয়ায় আমি সাজিয়েছি আমার বাগান।’ একান্ত শখের বাগানটা শুধু নিজের থাকলেই চলত। কিন্তু ফারহানা তা চাননি। হৃদয় দিয়ে চেয়েছেন ভালবাসার সব রং সবখানে ছড়িয়ে দিতে। আর তাই তিনি দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন, স্কুলে স্কুলে গিয়ে ছেলেমেয়েদের কাছে ধর্না দিচ্ছেন ‘তোমরাও একটা বাগান করো। নিজের হাতে লাগানো গাছের ফল খেয়ে দেখ কত মধুর। কত তৃপ্তির। আর বিষমুক্ত তো বটেই।’ এভাবেই তিনি স্বপ্ন বিলিয়ে চলছেন তার চারপাশে। যেন স্বপ্নের এক ফেরিওয়ালা হয়ে উঠেছেন ফারহানা। ২০১২ সালে নিজের বাড়ির একচিলতে ছাদে তিনি শুরু করেন এ ছাদবাগান। তার বাগানে শোভা পাচ্ছে ২৪০টি ফুল-ফল-ভেষজ ও সৌন্দর্যের গাছের চারা। সন্তানদের ভেজালমুক্ত খাবার খাওয়ানো, প্রতিবেশিদের মধ্যে বিলানো এবং সংসারে সহযোগিতা করার উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি গড়ে তোলেন এ বাগান। দুই মেয়ে ও স্বামীর সহযোগিতায় তিনি বাগানকে সাজিয়েছেন অনুপম নৈসর্গিক সাজে। প্রতিদানও পেয়েছেন তিনি। ১৪২৩ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার লাভ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে। বিষমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তিনি সবজি ও ফল উৎপাদনের জন্য ২০ জন মহিলাকে নিয়ে গড়েছেন দল। মাছচাষের জন্য লিজ নিয়েছেন পুকুর। তার দেখাদেখি আশপাশের বাড়িতেও গড়ে উঠেছে ছাদবাগান। জানালেন, নির্ভেজাল ফল ও সবজি উৎপাদনে সারা বাংলাদেশের স্কুল-কলেজ-মাদরাসায় গিয়ে ছেলেমেয়েদের উদ্বুদ্ধ করতে চাই। এজন্য প্রয়োজন সরকারী সহায়তা। বললেন, একটা বাড়ি একটা খামারের সমান। বছরের সম্পূর্ণ ফল ও সবজি এখান থেকে পাওয়া সম্ভব। দরকার শুধু আগ্রহ। তিনি জানান, গাছে পোকামাকড় হলে নিমের রসসহ প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করেন। রাসায়নিকের পরিবর্তে মাছের আষ্টে, ভাতের মাড় ও চাল ধোঁয়া পানি কাজে লাগান। -সাজেদ রহমান, যশোর থেকে
×