ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিলুপ্তির পথে পাতকুয়া

প্রকাশিত: ০৯:৩১, ৬ এপ্রিল ২০১৯

 বিলুপ্তির পথে পাতকুয়া

মৃৎসামগ্রী বা মাটির তৈরি জিনিসপত্র ফিরে আসছে। দূর অতীতে গ্রামে মাটির রিং (স্থানীয় কথায় মাটির পাত) দিয়ে নির্মিত হতো সুপেয় পানির আধার। বলা হতো ‘কুয়া’। অর্থাৎ কূপ। মাটির নিচে নির্দিষ্ট মাপে মাটি খুঁড়ে মাটির পাত বসানো হতো। ভূগর্ভের পানিতে ভরে উঠতো কূপ। কুয়ার পানি ব্যবহার হতো খাবার পানি, রান্নার কাজসহ সকল কাজে। কুয়ার পানিতে গোসল করা হতো। লম্বা দড়িতে ছোট বালতি বেঁধে কুয়ায় নাামিয়ে পানি উত্তোলন করা হতো। যত পানি দরকার ততবার বালতি নামিয়ে পানি তোলা হতো। কুয়ার চারদিকে বাঁশের শক্ত কাঠামোতে (বেড়ার মতো) ঘিরে রোখা হতো। যাতে কেউ পড়ে না যায়। কুয়ার স্থান নির্ধারিত হতো আঙিনার এক ধারে। বলা হতো কুয়ার পাড়। কাছেই থাকতো মেয়েদের গোসল করার জন্য বেড়ায় ঘেরা জায়গা। রাতে কুয়ার ওপর ঢেকে রাখা হতো। কালের আবর্তে গ্রামীণ জীবনে পানির আধার কুয়ার স্থানে এসেছে হস্তচালিত নলকূপ। এখন আর কুয়া নেই। গ্রামীণ জীবনমান উন্নত হওয়ায় স্যানিটেশন এখন শতভাগ। স্যানিটেশনের সেফটি ট্যাঙ্কে ব্যবহার হতো সিমেন্টে রিং ও স্লাব। দেখা যাচ্ছে মাটির নিচে স্থাপিত সেফটি ট্যাঙ্ক বেশিদিন টিকছে না। মাটি খেয়ে ফেলছে। মাটির পাটে (রং) নির্মিত সেফটি ট্যাঙ্ক দীর্ঘ সময় টিকছে। মাটির পাত নির্মাতা বগুড়ার মহিষাবান পালপাড়ার সন্তোষ চন্দ্র পাল বললেন, মৃৎ সামগ্রী যুগ যুগ ধরে টিকে থাকে। আজও অনেক গ্রামে কুয়া ভরাট করার পরও মাটি খুঁড়লে কুয়ার পাত পাওয়া যাচ্ছে। মৃৎ পাত্র বেশি পুড়ে পাকা করে নির্মাণ করা হলে তা কয়েকশ’ বছর টেকে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের খনন কাজে প্রথমে মিলছে মৃৎপাত্র। বর্তমানে অনেকে সুপেয় পানির জন্য মাটির বড় কলসে পানি রাখছে। অনেক গৃহস্থ ঘরে মাটির পাতিলে রান্না শুরু হয়েছে। মাটির পাতিলের রান্নার স্বাদ আলাদা। গৃহস্থালি কাজে বর্তমানে মাটির হাঁড়ির স্থলে এ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়ি পাতিল আসন করে নিয়েছে। মৃৎ শিল্পী সম্প্রদায়ের নির্মাণ কমে গেছে। সন্তোষ চন্দ্র পাল বললেন তারা বংশ পরম্পরায় মৃৎ শিল্পী। বাবা নারায়ণ চন্দ্র পাল, ঠাকুরদাদা সাধু চন্দ্র পালের হাত ধরে এই পেশায় এসেছেন। বর্তমানে মাটির পাটের পাশাপাশি কলসি, হাঁড়ি পাতিল বৈশাখী মেলার জন্য শিশুদের খেলনাপাতি বানাচ্ছেন। বেশি নির্মিত হচ্ছে মাটির পাত। গ্রামের অনেক স্যানিটেশন কাজে সিমেন্টের রিং পাল্টে মাটির রিং বা পাত বসিয়ে নিচ্ছে। প্রতিটি পাত ৫ থেকে ৭ ইঞ্চি উচ্চতার। সেফটি ট্যাঙ্কে কেউ ২০টি কেউ ২৫টি পাত ব্যবহার করে। প্রতিটি পাত পাইকারি ৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়। হাটে এই পাত বিক্রি হয় প্রতিটি ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে। পাত তৈরিতে প্রয়োজন হয় আঠাল মাটির। পলি ও দোঁয়াশ মাটিতে মৃৎপাত্র হয় না। আঠাল মাটি ছেনে দলা করে ডাইসে নিয়ে পাত বানিয়ে চরা রোদে শুকানোর পর আগুনে পুড়ে শক্ত করা হয়। তারপর তা ব্যবহার উপযোগী হয়। তার বাড়িতে তিনজন শ্রমিক প্রতিদিন গড়ে ৫০টি করে পাত বানাতে পারে। বর্ষা মৌসুমে প্রতিদিন রোদ না ওঠায় এবং এই রোদ এই বৃষ্টির কারণে পাত বানানো বন্ধ রাখতে হয়। -সমুদ্র হক, বগুড়া থেকে
×