ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

উপকূলে সূর্যমুখী চাষ ॥ কৃষকদের সাফল্য

প্রকাশিত: ০৯:৩১, ৬ এপ্রিল ২০১৯

 উপকূলে সূর্যমুখী চাষ ॥ কৃষকদের সাফল্য

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় প্রত্যন্ত অঞ্চলে তীব্র লবণাক্তার কারণে বছরে শুধু আমন মৌসুমে ধান চাষ করা সম্ভব হয়। রোপা আমন ধান উপকূলীয় অঞ্চলের একমাত্র ফসল। এ এলাকার কৃষকরা সাধারণত স্থানীয় জাতের রোপা আমন ধানের চাষ করে থাকেন। এ ধান দেরিতে পরিপক্ব এবং কর্তন করা হয়। এ ধানের ফলন অন্যান্য উচ্চফলনশীল জাতের তুলনায় অনেক কম। আমনধান কাটার পর এ এলাকার অধিকাংশ জমি পতিত থাকে। দেরিতে আমন ধান ওঠায় কৃষকরা উপযুক্ত সময়ে রবি ফসলের বীজ বপন করতে পারেন না। এছাড়াও ধানকাটার পর জমিতে অতিরিক্ত রস থাকায় সঠিক সময়ের মধ্যে বীজ বপন করতে পারে না। ফলে এ অঞ্চলের কৃষকরা এক ফসলের ওপর নির্ভর করে থাকেন। রবি মৌসুমে লবণাক্তপ্রবণ এলাকার পতিত জমিতে অন্য কি কি ফসল ফলানো যায় এ নিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) গবেষকরা খুলনার দাকোপ উপজেলায় দুটি প্রকল্পের কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এতে তারা সফলতা পেয়েছেন। বিনা চাষেই গম ও সূর্যমুখী চাষ করে কৃষকরা পতিত জমিতে বিঘাপ্রতি ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা লাভ করতে পারবেন বলে খুবির গবেষকরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবন মান উন্নয়নের লক্ষ্যে লবণাক্ত জমিকে চাষাবাদের আওতায় আনতে গবেষণা করে চলেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিন। তারই ধারাবাহিকতায় দাকোপের পানখালিতে রোপা আমন ধান কাটার পর রবি মৌসুমে সূর্যমুখী ও গম চাষে সফল হয়েছেন এই ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. মোঃ এনামুল কবীর এবং উপ-গবেষক সহকারী অধ্যাপক বিধান চন্দ্র সরকার। খুলনার দাকোপ উপজেলার পানখালিতে ১০ বিঘা (প্রায় ১.৫ হেক্টর) জমিতে দুটি গবেষণা প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার একটি সরকারী সংস্থা (অস্ট্রেলিয়া সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল রিচার্স)-এসিআইএআর এবং বাংলাদেশের কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের যৌথ অর্থায়নে খুবিসহ বাংলদেশ, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান দুটি সমন্বিত গবেষণা প্রকল্পে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ বিষয়ে উপ-গবেষক খুবির সহকারী অধ্যাপক বিধান চন্দ্র সরকার বলেন, প্রথম প্রকল্পে আমরা নির্বাচন করার চেষ্টা করেছি যে, এখানে রবি মৌসুমের কোন কোন ফসল চাষাবাদের জন্য উপযুক্ত এবং এ পরিবেশে টিকে থাকবে কি না। আমরা গম, সরিষা, সূর্যমুখী, ভুট্টা, মটর ইত্যাদি ফসল নিয়ে কাজ করেছি। এর মধ্যে সূর্যমুখী ও গম (তিন বছর) সফলভাবে চাষ করা সম্ভব হয়েছে। মুখ্য গবেষক অধ্যাপক ড. মোঃ এনামুল কবীর জানান, সূর্যমুখী ও গম যে এখানে হয় এবং হবে তা বিগত কয়েক বছরের গবেষণায় আমরা সুনিশ্চিত হতে পেরেছি। রোপা আমন ধান কাটার পর মাটিতে যে অতিরিক্ত আর্দ্রতা থাকে এই অবস্থায় মাটিতে বিনা চাষে সূর্যমুখী ও গম দিলে সেটা গজাচ্ছে। কিন্তু অন্য ফসল সেটা সহ্য করতে পারে না। রবি মৌসুমে সূর্যমুখী ও গমচাষের নতুন প্রযুক্তি (সার, পানি, লবণাক্ততা ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনা) কৃষকদের দিতে পারলে এই এলাকায় রোপা আমনের সঙ্গে তারা অতিরিক্ত একটি ফসল পাবে এবং আর্থিকভাবে লাভবান হবে। তা ছাড়া সূর্যমুখী চাষে ভোজ্যতেলের ঘাটতি পূরণে সহায়তা করবে এবং কৃষকরা নিজেরাও সূর্যমুখীর তেল ব্যবহার করতে পারবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খুলনার উপ-পরিচালক পঙ্কজ কান্তি মজুমদার জানান, সূর্যমুখী এমন একটি ফসল যা এই লবণাক্ত অঞ্চলে হচ্ছে, এর ফুল ধারণের ওপর দিনের দৈর্ঘ্যরে কোন প্রভাব নেই, মৌসুমের কোন প্রভাব নেই, দেরিতে লাগালেও হচ্ছে। এর মূল মাটির গভীর থেকে খাদ্য গ্রহণ করে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে না লাগালে ফুল ফুটবে না এমন কোন বিষয় নেই। এজন্য এটি বরি, খরিফ-১ এবং খরিফ-২ এই তিন মৌসুমেই করা যাবে, তবে বরি মৌসুমে এর ফলন বেশি। এতে কৃষক এবং সর্বোপরি সরকার লাভবান হবে। কাজেই সূর্যমুখী এ অঞ্চলের জন্য একটি কার্যকরী ফসল বলে তিনি মনে করেন। দাকোপ উপজেলার পানখালির কৃষক শংকর প্রসাদ বলেন, সূর্যমুখী ও গম চাষের ফলে আমরা রোপা ধানের সঙ্গেও অতিরিক্ত একটি ফসল পাচ্ছি এবং ভবিষ্যতেও পাব। এই সূর্যমুখী এবং গম চাষের ফলে আমরা লাভবান হব এবং তাতে আমরা অনেক খুশি। -অমল সাহা, খুলনা থেকে
×