ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

টেন্ডার বাতিল করতে প্রকৌশলীর সুপারিশ

পটিয়ায় রাস্তা খুঁড়ে ঠিকাদার উধাও!

প্রকাশিত: ০৯:১৬, ৬ এপ্রিল ২০১৯

পটিয়ায় রাস্তা খুঁড়ে  ঠিকাদার উধাও!

নিজস্ব সংবাদদাতা, পটিয়া, ৫ এপ্রিল ॥ চট্টগ্রামের পটিয়ায় গ্রামীণ কয়েকটি রাস্তা খুঁড়ে ফেলে রেখেছেন ঠিকাদার। যার কারণে এলাকার মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। গত কয়েকদিন আগে কালবৈশাখী ঝড়ের পানি এখনো রাস্তায় জমে রয়েছে। কাদা মাটি নিয়েই উপজেলার বড়লিয়া ও জঙ্গলখাইন ইউনিয়নের লোকজন চলাচল করছে। গত পাঁচ মাস আগে রাস্তা দু’টি খুঁড়ে ফেলে রেখেছে এয়াকুব ব্রাদার্স ও আম্মা ট্রেডার্স নামের জেবি প্রতিষ্ঠান। দুই প্যাকেজে প্রায় ১২ কোটি টাকার কাজ ফেলে উধাও হয়ে গেছে ঠিকাদার মামুনুর রশিদ। তার বাড়ি রাউজান উপজেলায়। এদিকে, মানুষের দুর্ভোগের কথা ভেবে উপজেলা প্রকৌশলী বিশ্বজিত দত্ত টেন্ডার বাতিল করতে উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে সুপারিশ করেছেন এবং ঠিকাদারকে শোকজ করে নোটিস দিয়েছেন। তবে ঠিকাদার শোকজের কোন ধরনের উত্তর দেননি। এলজিইডি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে গ্রামীণ রাস্তা সংস্কারের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের অর্থায়নে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রায় ৫০ কোটি টাকার টেন্ডার হয়। এলজিইডির উর্ধতন কর্মকর্তা ও সরকার দলীয় শীর্ষ নেতাদের ম্যানেজ করে বিভিন্ন প্যাকেজের ৫০ কোটি টাকার কাজের মধ্যে রাউজানের ঠিকাদার মামুন ১২ কোটি টাকার কাজ ভাগিয়ে নেন। ঠিকাদার মামুন উপজেলার বড়লিয়া, জঙ্গলখাইন, খরনা, কচুয়াই ও হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নে দুইটি প্যাকেজে প্রায় ১২ কোটি টাকার কাজ নেন। বড়লিয়া ও জঙ্গলখাইন ইউনিয়নে গ্রামীণ দু’টি রাস্তা খুঁড়ে গত ৫ মাস ধরে ফেলে রেখে ঠিকাদার উধাও হয়ে গেছে। যার কারণে ওই দুই ইউনিয়নের মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। জঙ্গলখাইনের উনাইনপুরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে কর্মযুগী কৃপাশরণ মহাস্থবির সড়ক ও বড়লিয়ার সাবেক চেয়ারম্যান ইলিয়াছ সড়ক খুঁড়ে ফেলে রেখেছে। দু’টি সড়কই খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখানে হিন্দু, বৌদ্ধ ও মুসলমান সম্প্রদায়ের ঘনবসতি রয়েছে। তাছাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বৌদ্ধ বিহার, মসজিদ, শাহগদী মাজার ও বেশ কয়েকটি মন্দির ছাড়াও বাজার রয়েছে। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ ধর্মীয় গুরু ড. ধর্মসেন মহাস্থবির ওই এলাকার লঙ্কারাম বিহারের একজন অধ্যক্ষ। ওই বিহারে দেশ-বিদেশের ভক্তরা ধর্মগুরুকে দেখতে প্রায় সময় যান। রাস্তা খুঁড়ে ফেলে রাখার কারণে সকল সম্প্রদায়ের লোকজনের কষ্ট বেড়েছে। কাদা মাটি নিয়েই শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক লোকজন চলাচল করছে। উনাইনপুরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সাংবাদিক প্রণব বড়ুয়া অর্ণব জানিয়েছেন, ঠিকাদার তাদের এলাকার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা দু’টি খুঁড়ে ফেলে রাখায় মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। বিষয়টি উপজেলা প্রকৌশলীকে মৌখিকভাবে একাধিকবার জানানো হলেও কোন প্রতিকার পাননি। তাছাড়া জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এমপিকে অবহিত করা হলে তিনি ঠিকাদারের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী নির্দেশ দিয়েছেন। তবে উপজেলা প্রকৌশলী বিশ্বজিত দত্ত জানিয়েছেন, ঠিকাদার রাস্তা খুঁড়ে ফেলে রাখার বিষয়টি নোটিসের মাধ্যমে তাকে শোকজ করেছেন। টেন্ডার বাতিল করে পুনরায় টেন্ডার দেয়ার জন্য এলজিইডির উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে লিখিতভাবে সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশ কার্যকর হলেই পুনরায় টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ শুরু করা হবে। ঠিকাদার মামুনের বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
×