ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় শ্রেণি : একাদশ-দ্বাদশ

প্রকাশিত: ০৯:০১, ৬ এপ্রিল ২০১৯

 বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় শ্রেণি : একাদশ-দ্বাদশ

(অধ্যায় সাত) বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থা অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর : (১) রাষ্ট্র বলতে কী বুঝ? উত্তর : রাষ্ট্র একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। সরকার রাষ্ট্র গঠনের একটি উপাদান। নির্দিষ্ট ভূখন্ড, জনসমষ্টি, সরকার ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে রাষ্ট্র গঠিত হয়। রাষ্ট্র হলো আইনানুসারে সংগঠিত নির্দিষ্ট ভূখন্ডের একটি জনসমষ্টি। ব্যাপক অর্থে যে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট ভূখন্ড, সংগঠিত সরকার, জনসমষ্টি এবং সার্বভৌম ক্ষমতা রয়েছে তাকে রাষ্ট্র বলে। সরকার রাষ্ট্রের মূল চালিকাশক্তি। রাষ্ট্রের অপরিহার্য চারটি মৌলিক উপাদানের একটি হচ্ছে সরকার। (২) গণতন্ত্র বলতে কী বুঝ? উত্তর : গণতন্ত্র বলতে জনসাধারণের শাসন ব্যবস্থাকে বোঝায়। যে শাসন ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতা জনগণের হাতে ন্যস্ত থাকে তাকে গণতন্ত্র বলে। জনগণ তাদের পছন্দের রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তিদের ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করে। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সরকার গঠন করে ও দেশ পরিচালনা করে থাকে। এটা সারা বিশ্বে বহুল প্রচলিত শাসন ব্যবস্থা। (৩) একনায়কতন্ত্রে শাসন কীভাবে পরিচালিত হয়? উত্তর : একনায়কতন্ত্র হচ্ছে এক ব্যক্তির বা একদলের শাসন। এতে জনগণের অধিকার ও মতামতের কোন স্বীকৃতি নেই। এখানে একনায়ক বা এক দলের ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় দেশ পরিচালিত হয়। দেশের নীতিনির্ধারণও এক ব্যক্তি বা দলই করে থাকে। (৪) নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র ও প্রজাতন্ত্র দুটোই গণতন্ত্রের ক্ষমতা বণ্টনের শ্রেণী বিভাগ। নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রে রাষ্ট্রপ্রধান উত্তরাধিকার সূত্রে ক্ষমতা লাভ করেন। আর জনগণের ভোটে পরোক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে বলা হয় প্রজাতন্ত্র। এতে জনগণকে রাষ্ট্রের মালিক মনে করা হয়। (৫) এককেন্দ্রিক সরকারের ধারণা ব্যাখ্যা কর। উত্তর : যে সরকার ব্যবস্থায় কেন্দ্রের হাতে ক্ষমতা ন্যস্ত থাকে তাকে এককেন্দ্রিক সরকার বলে। এ সরকারে স্থানীয় সরকারসমূহ কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে ক্ষমতা লাভ করে। বাংলাদেশে এককেন্দ্রিক সরকার বিদ্যমান। এই ব্যবস্থায় শাসনতন্ত্র কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সরকারের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টনের ব্যবস্থা করে না। এই শাসন ব্যবস্থায় সরকারের তত্ত্বাবধানে সারাদেশে একই আইন, নীতি ও শাসন পদ্ধতি প্রচলিত থাকে বলে শাসন ব্যবস্থায় বৈষম্য দূর হয় ও জাতীয় ঐক্য অধিক সংহত হয়। (৬) যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের ধারণা ব্যাখ্যা কর। উত্তর : যে শাসন ব্যবস্থায় সংবিধান কর্তৃক কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন করে দেওয়া হয় তাকে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার বলে। যেমন-ভারত, আমেরিকা, যুক্তরাষ্ট্রে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার বিদ্যমান। যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় দুই প্রকারের সরকার থাকে। একটি কেন্দ্রীয় সরকার এবং অন্যটি অঙ্গরাজ্যের সরকার। রাষ্ট্রের সংবিধানের নিয়মানুসারে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার অঙ্গরাজ্যের সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন করে দেয়। এভাবে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার পরিচালিত হয়। (৭) মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার বলতে কী বুঝ? উত্তর : যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মন্ত্রিপরিষদ কর্তৃক শাসনকার্য পরিচালনা করা হয় এবং মন্ত্রিপরিষদ শাসনকার্যের জন্য আইন সভার নিকট দায়ী থাকে, তাকে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার বলা হয়। এ ধরনের শাসন ব্যবস্থায় প্রকৃত শাসক মন্ত্রিসভা সমষ্টিগতভাবে এর নীতি ও কাজের জন্য আইনসভার নিকট দায়ী থাকেন। আইনসভা যতদিন মন্ত্রিপরিষদকে সমর্থন করে ততদিন মন্ত্রিপরিষদ ক্ষমতায় থাকে। (৮) রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার বলতে কী বুঝ? উত্তর : যে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা রাষ্ট্রপতি ও তার মন্ত্রিপরিষদ কর্তৃক পরিচালিত হয় তাকে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা বলে। এখানে রাষ্ট্রপতি তার মন্ত্রিপরিষদ নিয়ে সরাসরি দেশের শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করেন। এই শাসন ব্যবস্থায় শাসন বিভাগ আইন বিভাগের নিকট দায়ী বা তার ওপর নির্ভরশীল থাকে না। (৯) বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধন পদ্ধতি ব্যাখ্যা কর। উত্তর : সংবিধান হচ্ছে রাষ্ট্র পরিচালনার দলিল। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জনগণের কাছে এটি পবিত্র দলিল। সংবিধানের নিয়মানুযায়ী রাষ্ট্রীয় কার্যাবলী পরিচালিত হয়। এটি কোন অপরির্তনশীল বিষয় নয়। সময়ের প্রয়োজনে এটি পরিবর্তিত এবং সংশোধিত হতে পারে। বাংলাদেশের সংবিধান লিখিত হলেও জরুরী ব্যবস্থা ও জনগণের প্রয়োজন অনুসারে একে পরিবর্তনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সেই অনুযায়ী বাংলাদেশের সংবিধান পরিবর্তনের জন্য প্রথমে একটি বিল আকারে এটি সংসদে উত্থাপন করা হয়। অতঃপর আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সংসদের মোট দুই-তৃতীয়াংশের ভোটে সংশোধন করা হয়। (১০) জাতীয়তাবাদ বলতে কী বুঝ? উত্তর : জাতীয়তাবাদ একটি রাজনৈতিক আদর্শ। রাষ্ট্রশক্তির মালিকানার তথা সার্বভৌমত্ব ও অধিকারবোধ থেকে এর জন্ম। এটি ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে বাঙালী জাতির মধ্যে সুদৃঢ় ঐক্য সৃষ্টি করে। এটি এমনভাবে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে যে, মানুষ মৃত্যুকে তুচ্ছ জ্ঞান করে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাই সংবিধানে বলা হয়েছে, একই ভাষা ও সংস্কৃতিতে আবদ্ধ বাঙালী জাতি যে ঐক্যবদ্ধ ও সংকল্পবদ্ধ সংগ্রাম করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে সেই ঐক্য ও সংহতি বাঙালী জাতীয়তাবাদের ভিত্তি। (১১) সমাজতন্ত্রের ধারণা ব্যাখ্যা কর। উত্তর : অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সমতা আনার মাধ্যমে সবার জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য সমাজতন্ত্রকে রাষ্ট্রপরিচালনার একটি মূলনীতি করা হয়। শোষণমুক্ত ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে সমাজতন্ত্রকে মূল ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। (১২) ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে কী বুঝ? উত্তর : স্বধর্ম ঠিকমতো পালন করতে পারা ও অন্যের ধর্ম পালনে কোনোরূপ বিঘœ সৃষ্টি না করাই হলো ধর্মনিরপেক্ষতা। ধর্মনিরপেক্ষতা বংলাদেশের রাষ্ট্রপরিচালনার একটি মূলনীতি। আমাদের দেশে বিভিন্ন জাতি ও ধর্মের মানুষ আছে। তারা যাতে স্ব স্ব ধর্ম ঠিকমতো পালন করতে পারে এ জন্য সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা আইন রাখা হয়। কেউ যাতে অন্য কারও। ধর্ম পালনে বাধা না দিতে পারে সেজন্য ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। (১৩) আইন বিভাগ সম্পর্কে কী জান? উত্তর : সরকার রাষ্ট্রের কাজগুলো তিনটি বিভাগের সমন্বয়ে করে থাকে। আইন বিভাগ তার মধ্যে একটি। বাংলাদেশের আইনসভা এককক্ষ বিশিষ্ট। এর নাম জাতীয় সংসদ। ৩৫০ সদস্য নিয়ে ৫০টি আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। ৩০০ আসনের সদস্যগণ জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে ও ৫০ জন পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হন। জাতীয় সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর। জাতীয় সংসদের অধিবেশন সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একজন স্পিকার ও তাকে সহায়তা করার জন্য একজন ডেপুটি স্পীকার থাকেন। স্পীকারের অবর্তমানে ডেপুটি স্পীকার দায়িত্ব পালন করেন। তারা দু’জনই সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে তাদের ভোটে নির্বাচিত হন। আইন বিভাগ বিল পাস করে আইন প্রণয়ন, সংশোধন বা বাতিল করেন। (১৪) শাসন বিভাগ বলতে কী বোঝায়? উত্তর : রাষ্ট্রীয় শাসন সংক্রান্ত কার্যাবলী পরিচালনার দায়িত্ব যে বিভাগ পালন করে তাকে শাসন বিভাগ বলে। ব্যাপক অর্থে শাসন বিভাগ বলতে রাষ্ট্রের শাসন কাজে নিযোজিত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বুঝায়। এ অর্থে রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে গ্রামের একজন চৌকিদার পর্যন্ত সকলেই বিচার বিভাগের অংশ। তবে প্রকৃত অর্থে রাষ্ট্র প্রধান, সরকার প্রধান, মন্ত্রিপরিষদ ও সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়েই শাসন বিভাগ গঠিত। (১৫) বিচার বিভাগ বলতে কী বুঝ? উত্তর : সরকারের যে অঙ্গ বা বিভাগ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আইন অনুযায়ী বিচারকার্য পরিচালনা করে থাকে তাকে বলা হয় বিচার বিভাগ। বাংলাদেশের বিভিন্ন বিচারালয়ের বিচারকদের নিয়ে এ বিভাগ গঠিত। বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ স্তর হলো সুপ্রিম কোর্ট। এর প্রধানকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি বলা হয়। রাষ্ট্রপতি তাকে নিয়োগ দেন। সুপ্রিম কোর্টের রয়েছে দুটি বিভাগ। আপীল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ। এ দুটি বিভাগের বিচারপতিগণ ও রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হন। (১৬) গণতন্ত্রে জনগণকে সকল ক্ষমতার উৎস বলা হয় কেন? উত্তর : গণতন্ত্রের সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক সকল জনগণ। সার্বভৌমত্ব জনগণের হাতে ব্যস্ত থাকে। জনগণ তাদের পছন্দের রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তিদেরকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করে। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সরকার গঠন করে ও দেশ পরিচালনা করে। জনগণের দ্বারাই শাসক নির্বাচিত হয়ে থাকে এবং জনকল্যাণে কাজ করে। আবার কোনো কারণে জনগণের অনাস্থার ফলে নির্বাচিত সরকারও ক্ষমতা ছেড়ে দেন। তাই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণকে সকল ক্ষমতার উৎস বলা হয়। (১৭) স্থানীয় সরকারের ধারণা ব্যাখ্যা কর। উত্তর : সাধারণভাবে স্থানীয় সরকার হলো স্থানীয় পর্যায়ে শাসন ও উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনার উন্নয়নের জন্য জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার ব্যবস্থা। বর্তমানকালে রাষ্ট্রের আয়তন বৃদ্ধি ও জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় কেন্দ্রে বসে সরকারের পক্ষে আঞ্চলিক সকল সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হয় না। তাই স্থানীয় পর্যায়ে সমস্যা সমাধানের জন্য এ ধরনের শাসন ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। এতে কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর চাপ কমে এবং স্থানীয় সমস্যার সমাধানও দ্রুত এবং সহজে হয়। এটি বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। চলবে...
×