ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ব্রেক্সিট বিলম্বে সম্মতি

প্রকাশিত: ১০:৪৬, ৫ এপ্রিল ২০১৯

ব্রেক্সিট বিলম্বে সম্মতি

ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া আরও কিছুদিন পিছিয়ে দেয়া নিয়ে আনা একটি প্রস্তাবে সমর্থন দিয়েছেন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্যরা। বুধবার তোলা প্রস্তাবটি পাস হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ প্রক্রিয়া যেন কোন চুক্তি ছাড়াই সম্পন্ন না হয় তা নিশ্চিত করতেই ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া ফের পেছানোর উদ্যোগ নিয়েছে ব্রিটেন। খবর বিবিসি ও গার্ডিয়ান অনলাইনের। লেবার এমপি ইভেট কুপার আলোচিত প্রস্তাবটি তোলেন। পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ কমন্স তা একদিনেই পাস করে দেয়। প্রস্তাবের পক্ষে ৩১৩ ভোট ও বিপক্ষে ৩১২ ভোট পড়ে। প্রস্তাবটি আইনে পরিণত হতে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ লর্ড সভার অনুমোদন লাগবে। খসড়া আইনে পরিণত হওয়া প্রস্তাবটি বৃহস্পতিবার লর্ড সভায় তোলার কথা রয়েছে। তবে ব্রেক্সিট আর পেছানোর অনুমোদন দেয়া হবে কি না সে সিদ্ধান্ত নেবে ইইউ। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে ব্রেক্সিট নিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা জেরেমি করবিনের সঙ্গে বৈঠক করার পর পার্লামেন্টে প্রস্তাবটি তোলা হয়। দুই নেতার মধ্যে আলোচনাকে ‘গঠনমূলক’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে এবং বৃহস্পতিবারও তাদের মধ্যে আলোচনা অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। লেবার দলীয় সাবেক মন্ত্রী কুপারের প্রস্তাবিত খসড়া আইনটি প্রধানমন্ত্রী মেকে আর্টিকেল ৫০ এর প্রক্রিয়া ১২ এপ্রিল থেকে আরও পিছিয়ে দিতে ইইউকে অনুরোধ জানানোর অনুমতি দেবে এবং ব্রেক্সিটের সময়সীমা কতদিন পেছানো হবে পার্লামেন্টকে সে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা দেবে। ব্রিটেনের সাবেক শ্রমমন্ত্রী ইভেন্ট কুপারের এই খসড়া আইনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীকে চাপ দেয়া হবে ইইউর কাছে সময় চাওয়ার জন্য। এই বিলম্বের দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করার ক্ষমতা পাবেন সংসদ সদস্যরা। গত ২৯ মার্চ বিচ্ছেদ কার্যকরের কথা ছিল। ব্রিটিশ রাজনীতিকদের অনৈক্যের কারণে তা হয়নি। দিনটি পিছিয়ে এখন ১২ এপ্রিল নির্ধারিত রয়েছে। সরকারের এক মুখপাত্র জানান, এমপিদের এই বিলে সমর্থন হতাশাজনক। মঙ্গলবার ব্রেক্সিট নিয়ে করণীয় ঠিক করতে মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী মে। সাত ঘণ্টাব্যাপী চলে সেই বৈঠক। কিন্তু অন্তর্কলহের কারণে তা ছিল ফলশূন্য। ওই বৈঠক শেষে আকস্মিক বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী মে বিরোধীদলীয় নেতা জেরেমি করবিনের সাহায্য কামনা করেন। তিনি বলেন, বর্তমানে ১২ এপ্রিল নির্ধারিত বিচ্ছেদের দিনক্ষণ সম্ভাব্য স্বল্পতম সময়ের জন্য পেছাতে হবে। তার আগে লেবার নেতা জেরেমি করবিনের সঙ্গে আলোচনা করে তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে ভবিষ্যত সম্পর্ক বিষয়ে একটি ঐকমত্যে পৌঁছাতে চান, যাতে চুক্তিটি সংসদে পাস হয়। মে বলেন, ভবিষ্যত সম্পর্ক বিষয়ে যে ভিন্নমত, সেটি বিচ্ছেদ চুক্তি (উইথড্রয়াল এ্যাগ্রিমেন্ট) থেকে আলাদা। ইইউ বিচ্ছেদ চুক্তির পরিবর্তন করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। তাই ভবিষ্যত সম্পর্ক নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ থাকলেও সম্পাদিত বিচ্ছেদ চুক্তির বিকল্প নেই। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানায়, করবিনের সঙ্গে সমঝোতা না হলেও বিচ্ছেদের দিনক্ষণ পেছানোর আবেদন করা হবে। সে ক্ষেত্রে ব্রেক্সিট নিয়ে করণীয় ঠিক করতে পার্লামেন্টে বিভিন্ন বিকল্প নিয়ে ভোটাভুটির আয়োজন করবে সরকার। অর্থমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড বলেন, তিনি আশা করছেন, ব্রাসেলসকে ব্রেক্সিট দীর্ঘ বিলম্বের করার জন্য জোর করা হবে। তিনি মনে করেন কোন চূডান্ত চুক্তিতে জনসমর্থন থাকলে তা পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য প্রস্তাব হিসেবে অনুমোদন হবে। ইইউর সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে বিচ্ছেদ কার্যকরে দীর্ঘ ১৮ মাসের চেষ্টায় একটি চুক্তি সম্পাদন করেন প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে। কিন্তু তিনবার চেষ্টা করেও তিনি সেই চুক্তি সংসদে পাস করাতে পারেননি। গত ২৯ মার্চ বিচ্ছেদ কার্যকরের কথা ছিল। ব্রিটিশ রাজনীতিকদের অনৈক্যের কারণে তা হয়নি। অন্যদিকে, সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত যাচাইয়ে পার্লামেন্টে বিভিন্ন বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটির আয়োজন করা হয়। কিন্তু দুই দফা ভোটাভুটির পরও বিকল্প কোন প্রস্তাবে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত পায়নি। যুক্তরাজ্য আবেদন জানালে এবং ইইউ তাতে সম্মতি দিলে বিচ্ছেদের দিনক্ষণ আবারও পেছাবে। অন্যথায় চুক্তি ছাড়াই ১২ এপ্রিল বিচ্ছেদ ঘটবে।
×