ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুও ফুটবল খেলতেন ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১০:৩৯, ৫ এপ্রিল ২০১৯

বঙ্গবন্ধুও ফুটবল খেলতেন ॥ প্রধানমন্ত্রী

বাংলা ট্রিবিউন ॥ বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতার ফাইনাল বৃহস্পতিবার গ্যালারিতে বসে দেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকেই পুরস্কার নিয়েছে চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দল। তার আগে বাংলাদেশের ফুটবলের উন্নয়ন ও এগিয়ে চলার অনেকদিক তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায়। যেখানে ফুটবলের প্রতি তার ভালবাসা ভাগাভাগি করতে গিয়ে তিনি জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও ফুটবল খেলতেন। খেলাধুলার প্রতি, বিশেষ করে ফুটবলের প্রতি নিজের ভালবাসা শেখ হাসিনা প্রকাশ করেছেন এভাবে, ‘ফুটবল আমাদের দেশে অত্যন্ত জনপ্রিয় খেলা। মাঠে-ঘাটে, একেবারে গ্রাম পর্যায়ে খেলা চলে। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়েও ফুটবল দল গঠিত হয়। আর বিশেষ করে আমি এমন একটি পরিবার থেকে এসেছি, আমার দাদা ফুটবল প্লেয়ার ছিলেন, আবার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, তিনিও ফুটবল খেলতেন। আমার ভাই শেখ কামাল, শেখ জামাল সবাই ফুটবল খেলত।’ বঙ্গবন্ধু পরিবারের ফুটবলপ্রীতির সেই ধারা এখনও সচল। প্রধানমন্ত্রীর পরের কথাতেই তা স্পষ্ট, ‘এখন আমার নাতি-নাতনিরাও ফুটবল খেলে। জয়ের মেয়ে ফুটবল খেলে, পুতুলের ছেলেমেয়েরা ফুটবল খেলে, এমনকি রেহানার ছেলে ববি, তার ছেলেমেয়েও ফুটবল খেলে। মোটামুটি আমাদের পরিবারের সবাই ফুটবল খেলার সঙ্গে জড়িত। কাজেই এই খেলাটির প্রতি আমাদের আলাদা আন্তরিকতা আছে।’ এর আগে বক্তব্যের শুরুতে শেখ হাসিনা মহান স্বাধীনতা যুদ্ধকে গভীরভাবে স্মরণ করেন, ‘আজকের এই অনুষ্ঠানে আমার সহকর্মীবৃন্দ, সম্মানিত শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ, খুদে ফুটবল প্লেয়াররা, উপস্থিত সুধীম-লী, ছাত্রছাত্রীবৃন্দ- সবাইকে আমার শুভেচ্ছা। আমি আজকের দিনে গভীরভাবে স্মরণ করছি আমাদের মহান নেতা, যিনি আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, বাংলাদেশ দিয়েছেন, জাতি হিসেবে বিশ্বে আমাদের পরিচিতি দিয়েছেন, আমাদের সেই মহান নেতা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। আমি শ্রদ্ধা জানাই ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২ লক্ষ মা-বোনকে।’ বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের ফাইনালে নীলফামারী সদরের দক্ষিণ কানিয়ালখাতা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়কে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সিলেটের জৈন্তাপুরের হরিপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। আর বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনালে লালমনিরহাটের পাটগ্রামের টেপুরগাড়ী বি কে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়কে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে ময়মনসিংহের নান্দাইলের পাঁচরুখী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। চ্যাম্পিয়ন, রানার্সআপদের পাশাপাশি অংশ নেয়া সবাইকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, ‘আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে আজ এগিয়ে যাচ্ছি। আজকে আমি এখানে উপস্থিত হয়েছি বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট ২০১৮ এবং বঙ্গামাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট ২০১৮-তে। চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দলের খেলা আমি দেখেছি এবং সকলকে অভিনন্দন জানাই। যারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তাদের অভিনন্দন জানাই, রানার্সআপ হয়েছে যারা, তাদেরও অভিনন্দন জানাই। খেলায় অংশগ্রহণ করেছে যারা, তাদেরও আমি অভিনন্দন জানাই।’ প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যায়ের এই প্রতিযোগিতা দুটি বিশ্বে ইতিহাস তৈরি করেছে বলেও মন্তব্য শেখ হাসিনার, ‘বাংলাদেশ বিশ্বে একটি ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। আমার মনে হয় পৃথিবীর আর কোন দেশে এই ইতিহাস নেই। এবারের এই টুর্নামেন্টে, অর্থাৎ ২০১৮ সালের টুর্নামেন্টে বেগম ফজিলাতুন্নেসা গোল্ডকাপে অংশগ্রহণ করেছে ৬৫ হাজার ৭০০ প্রাথমিক বিদ্যালয়। আর খেলোয়াড়ের সংখ্যা ১১ লাখ ১৬ হাজার ৯০০। আর বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেছে ৬৫ হাজার ৭৯০টি বিদ্যালয়। খেলোয়াড় সংখ্যা ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫১৫। এত বিশাল সংখ্যার খেলোয়াড় আমার মনে হয় পৃথিবীর আর কোন দেশ আয়োজন করতে পারে নাই। সেই জন্য আমি সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই, যারা এই আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।’ এই প্রতিযোগিতার সাফল্যের চিত্রও তুলে ধরেছেন তিনি, ‘আমরা ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর থেকে, অর্থাৎ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে আমরা এই টুর্নামেন্টের আয়োজন করি। যার ফলে আজ খেলাধুলায় আমাদের ছেলেমেয়েরা পারদর্শিতা দেখাচ্ছে। আমাদের নারী অনুর্ধ-১৪, অনুর্ধ-১৬, অনুর্ধ-১৮ এবং জাতীয় দলের ৫০ জন খেলোয়াড়ের মধ্যে ৩৬ জন খেলোয়াড়ই বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এসেছে। ধীরে ধীরে তারা জাতীয় পর্যায়ে খেলোয়াড় হিসেবে অবস্থান করে নিচ্ছে।’ প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘এছাড়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে। সম্প্রতি ভুটানে অনুর্ধ-১৮ দল এএফসি কাপে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। অনুর্ধ-১৫ দল হংকংয়ে অনুষ্ঠিত জকি কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে যে খেলাধুলা শুরু করেছি, তার ফলাফল এটা।’ দেশের এগিয়ে যাওয়ার পথে খেলাধুলার ভূমিকা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী পরের কথায়, ‘তাছাড়া আমরা চাই আমাদের ছেলেমেয়েরা ফুটবল, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা এবং সকল ক্ষেত্রে অংশ নেবে, যাতে শরীর-স্বাস্থ্য ভাল থাকবে, মন ভাল থাকবে, তারা ডিসিপ্লিন শিখবে এবং আগামীতে বাংলাদেশকে তারা নেতৃত্ব দেবে, সেটাই আমি চাই। সেজন্যই আমরা এ ধরনের প্রতিযোগিতা আয়োজন করি। কাজেই আজকে যারা খেলাধুলায় অত্যন্ত পারদর্শিতা দেখাচ্ছে, আগামী দিনে আন্তর্জাতিকভাবে আরও সম্মান তারা আমাদের দেশের জন্য বয়ে আনবে, সেটাই আমরা আশা করি।’
×