ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

সুন্দর সমাজের প্রত্যাশায় বদরুদ্দীন হোসাইন নাট্যোৎসব শুরু

প্রকাশিত: ১০:৩৯, ৫ এপ্রিল ২০১৯

সুন্দর সমাজের প্রত্যাশায় বদরুদ্দীন হোসাইন নাট্যোৎসব শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নাটক মানে শুধু বিনোদন নয়, হতে পারে সমাজ সংস্কারের হাতিয়ার। মানবিক ও সুন্দর সমাজ গড়ার শিল্পমাধ্যম। এমন প্রত্যাশায় শুরু হলো সৈয়দ বদরুদ্দীন হোসাইন স্মৃতি নাট্যোৎসব। ভাষাসৈনিক, শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক, রাজনীতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মী-এই বহুমাত্রিক পরিচয়ের ব্যক্তিত্বের নামাঙ্কিত উৎসবটির সূচনা হলো বৃহস্পতিবার। উৎসবে সৈয়দ বদরুদ্দীন হোসাইন স্মারক সম্মাননা প্রদান করা হয় শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী ও নাট্যজন গোলাম সারোয়ারকে। ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্য-সুন্দর’ প্রতিপাদ্যে আট দিনব্যাপী উৎসবের আয়োজক পদাতিক নাট্য সংসদ। বাংলাদেশ ও ভারতের কুড়িটি নাট্যদলের কুড়িটি মঞ্চনাটক নিয়ে সাজানো হয়েছে উৎসব। প্রতিদিন সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার তিনটি মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হবে নাটকগুলো। বর্ণিল উৎসবে নাটক মঞ্চায়নের আগে প্রতিদিন বিকেলে নাট্যশালার মুক্ত মঞ্চে থাকবে নৃত্য-গীতে সাজানো সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। চৈতালী বিকেলে পুষ্পবেষ্টিত সৈয়দ বদরুদ্দীন হোসাইনের প্রতিকৃতির সামনে জড়ো হন অতিথিসহ সংগঠনের শিল্পীরা। প্রতিকৃতির সামনে রাখা প্রদীপ প্রজ্বালনের মাধ্যমে উৎসবের উদ্বোধন হয়। যৌথভাবে উৎসব উদ্বোধন করেন নাট্যজন মামনুর রশীদ ও ম. হামিদ। তাদের সঙ্গে বক্তব্য রাখেন অভিনয়শিল্পী কেরামত মওলা। এ সময় পদাতিক নাট্য সংসদের (টিএসসি) শিল্পীরা গেয়ে শোনায় ‘আনন্দালোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্য-সুন্দর...’। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দ্বিতীয় পর্বটি অনুষ্ঠিত হয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে। এ পর্বে সভাপতিত্ব করেন নাট্যদলটির সভাপতি তাসনীন হোসাইন তানু। উদ্বোধনী বক্তব্যে মামুনুর রশীদ বলেন, সৈয়দ বদরুদ্দীন হোসাইন একজন নাট্যপ্রাণ ব্যক্তি ছিলেন। তাকে স্মরণ করে পদাতিক নাট্য সংসদ দশ বছর ধরে এ উৎসবের আয়োজন করছে। এটি সত্যিই আনন্দের বিষয়। এ আনন্দ ঘিরে থাকবে উৎসবের পুরোটা জুড়েই-এমনটা প্রত্যাশা করি। ম হামিদ বলেন, সৈয়দ বদরুদ্দীন হোসাইন বটবৃক্ষের মতো নাট্যকর্মীদের আশ্রয় দিয়েছেন। তিনি নেই, কিন্তু তার গড়ে তোলা দল তার পথ ধরে এগিয়ে চলছে। এটিই তার সার্থকতা। কেরামত মওলা বলেন, নাটক মানে নিছক বিনোদন নয়। আমরা নাট্যকর্মীরা নাটকের আশ্রয়েই সমাজ পরিবর্তনের চেষ্টা করি। কারণ মঞ্চনাটক জীবনের কথা। জাগিয়ে তোলে মানবিক বোধকে। তাই এই শিল্পমাধ্যমটি ঘিরেই সুন্দর সমাজের প্রত্যাশা করি। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় ভারতের নাট্যদল বীজপুর চতুর্থসূত্রের প্রযোজনা ‘ডাকাত হীরু’। এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে পরিবেশিত হয় নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের প্রযোজনা ‘ওপেন কাপল’। স্টুডিও থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হয় নাট্যচক্র প্রযোজিত নাটক ‘একা এক নারী’ । আজ শুক্রবার দ্বিতীয় দিনের উৎসবে নাট্যপ্রেমীরা উপভোগ করতেন পারবেন ভারতের তিনটি নাট্যদলের নাটক। নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে প্রদশিত হবে ইলমিশিকা দুনিয়ার প্রযোজনা ‘পুর্গাটরী’। এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হবে নাট্যদল কশবা অর্ঘের প্রযোজনা ‘যোনী’। স্টুডিও থিয়েটার হলে আমতা পরিচয় নামের দলটি মঞ্চস্থ করবে ‘এলা দিদি’ নামের নাটক। একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার তিনটি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিতব্য উৎসবে ঢাকার ১৪টি, ঢাকার বাইরে দুটি এবং ভারতের চারটি নাট্যদল অংশ নিচ্ছে। ঢাকার দলগুলোর মধ্যে রয়েছে পদাতিক নাট্য সংসদ, প্রাচ্যনাট, স্টেইজ ওয়ান ঢাকা, থিয়েটার বেইলি রোড, বটতলা, নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়, ওপেন স্পেস থিয়েটার, বুনন থিয়েটার, নাট্যম, দৃষ্টিপাত নাট্য সংসদ, নাট্যচক্র, ধ্রুপদী অ্যাকটিং স্পেস, শূণ্যন রেপার্টরি থিয়েটার ও বাতিঘর। ঢাকার বাইরের দলগুলোর মধ্যে রয়েছে সিলেটের বাংলা থিয়েটার ও মানিকগঞ্জের নিরাভরণ থিয়েটার। ভারতের দলগুলোর মধ্যে রয়েছে বীজপুর চতুর্থসূত্র, ইশিমিকা দুনিয়া, কশবা অর্ঘ ও আমতা পরিচয়। উৎসবে জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে সোয়া সাতটায়, এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে সাতটায় এবং স্টুডিও থিয়েটার হলে পৌনে সাতটায় নাট্য মঞ্চায়ন হবে। প্রতিদিন বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে নাট্যশালার মুক্ত মঞ্চে প্রাঙ্গণে থাকবে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। উৎসবের শেষ দিন ১১ এপ্রিল নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে সৈয়দ বদরুদ্দীন হোসাইনের জন্মদিন উপলক্ষে ‘পদকপ্রাপ্তদের চিন্তায় সৈয়দ বদরুদ্দীন হোসাইন’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। ২০০৯ সালে সৈয়দ বদরুদ্দীন হোসাইনের মৃত্যুর পরের বছর ২০১০ সাল থেকে পদাতিক নাট্য সংসদ নিয়মিতভাবে এ উৎসবের আয়োজন করছে।
×