ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচারে নেমে বামদের বিরুদ্ধে কথা নেই রাহুলের

সশস্ত্রবাহিনীকে মোদির সেনা বলে তোপের মুখে আদিত্য

প্রকাশিত: ১০:৩৮, ৫ এপ্রিল ২০১৯

সশস্ত্রবাহিনীকে মোদির সেনা বলে তোপের মুখে আদিত্য

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ভারতের সশস্ত্রবাহিনীকে নরেন্দ্র মোদির সেনা বলে তোপের মুখে পড়েছেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। লোকসভা ভোট শুরুর দিনকয়েক আগে তিনি এ মন্তব্য করেছেন। তার এ কথার ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছে দেশটির নির্বাচন কমিশন। খবর এনডিটিভি ও আনন্দবাজার পত্রিকার। কট্টরপন্থী বিজেপি নেতা আদিত্যনাথের মন্তব্যটি নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত হতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। রবিবার দলের এক প্রার্থীর পক্ষে অনুষ্ঠিত নির্বাচনী সমাবেশে যোগী সশস্ত্রবাহিনীকে মোদির সেনাবাহিনী হিসেবে উল্লেখ করেন। বিরোধী কংগ্রেসকে আক্রমণ করতে গিয়ে তিনি একথা বলেন। রবিবারের সমাবেশে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীও একই ভাষা ব্যবহার করে কংগ্রেসের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, মোদির সেনাবাহিনী তাদের (সন্ত্রাসী) কেবল গুলি আর গোলা দেবে। কংগ্রেসসহ বিরোধী দলগুলো আদিত্যনাথের কড়া সমালোচনা করে বলেছে, এর মাধ্যমে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ‘সশস্ত্র বাহিনীকে অপমান করেছেন’ তাকে ক্ষমা চাইতে হবে। যার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে এ কথা বলেছিলেন সেই বিজেপি প্রার্থী ভিকে সিংয়ের কাছ থেকেও আদিত্যনাথের মন্তব্যের সমালোচনা এসেছে। অবসরপ্রাপ্ত সেনাপ্রধান ও মন্ত্রী জেনারেল ভিকে সিং বিবিসিকে বলেছেন, যদি কেউ ভারতের সেনাবাহিনীকে মোদির বাহিনী বলে থাকেন, তাহলে তিনি কেবল ভুলই নন, একজন বিশ্বাসঘাতকও বটে। তিনি মনে করেন আদিত্যনাথ এমন কথা ‘স্বজ্ঞানে’ বলেননি। তিনি বলেন, এটা মুখ থেকে হঠাৎ বেরিয়ে গেছে। আমার মনে হয় না, তিনি তখন কি বলছেন, তা বুঝতে পেরেছিলেন। ভারতের এবারের লোকসভা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন বিজেপি জাতীয় নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিয়ে তাদের প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। বিরোধীদল কংগ্রেস ‘সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে দুর্বল’ বলে আক্রমণ শানাচ্ছে তারা। ভোটের প্রচারে সেনাবাহিনীর প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলতে আগে থেকেই সতর্ক করেছিল ভারতের নির্বাচন কমিশন। গোমাংস খেয়েছে সন্দেহে উত্তর প্রদেশের যে গ্রামে এক মুসলিমকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল নির্বাচনী প্রচারে সে গ্রামে গিয়ে শীঘ্রই সব কসাইখানা বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন আদিত্যনাথ। এদিকে নির্বাচনী প্রচারাভিযানে নেমে বাম বিরোধী বক্তব্য দেয়া থেকে বিরত আছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। দেশজুড়ে চলছে বিজেপি বিরোধী জোট গঠনের চেষ্টা। দিল্লীতে বিরোধী জোটের সভায় হাজির ছিলেন বাম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি, ডি রাজা। কিন্তু কেরলে বাম-কংগ্রেস হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। সেই কেরলেরই ওয়েনাদ শহরে আবার প্রার্থী হয়েছেন রাহুল গাঁধি। সারা দেশে বিজেপি বিরোধী জোটের কথা মাথায় রেখেই বামেদের বিরুদ্ধে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি রাহুল। বৃহস্পতিবারই ওয়েনাদে নিজের মনোনয়নপত্র জমা দেন রাহুল। তারপর প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর সঙ্গে মিলে রোডশো শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াই হলেও ‘একটি শব্দও বলব না’। রাহুল আবার আমেথিতেও প্রার্থী হয়েছেন। সেখানকার বিজেপি প্রার্থী তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি তার মনোনয়নের আগেই কটাক্ষ করেছিলেন, মেথিতে গত পাঁচ বছরে কিছুই করেননি রাহুল। উত্তর প্রদেশের আমেথিতে এবারও প্রার্থী হচ্ছেন রাহুল গাঁধি। সেই সঙ্গে রবিবার কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়, দ্বিতীয় কেন্দ্র হিসেবে দক্ষিণের রাজ্য কেরলের ওয়েনাদ কেন্দ্র থেকেও ভোটে লড়বেন কংগ্রেস সভাপতি। তার পর থেকেই কেরল, তামিলনাড়ুসহ দক্ষিণের রাজ্যগুলোতে কংগ্রেস কর্মীরা উজ্জীবিত। বিজেপি অবশ্য রাহুলের ওয়েনাদ কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণার পর থেকেই আক্রমণ করে চলেছে। স্মৃতির ওই মন্তব্যকে ‘বালখিল্য’ বলে উড়িয়ে দিয়ে কংগ্রেসের পাল্টা যুক্তি ছিল, মোদি তথা বিজেপি বরাবরই দক্ষিণী রাজ্যগুলোকে অবহেলা করেছে, সেখানকার মানুষের দাবিদাওয়াকে গুরুত্ব দেয়নি। অন্যদিকে দক্ষিণের কংগ্রেস নেতাকর্মীরাও বারবার দাবি জানাচ্ছিলেন, রাহুল দক্ষিণের কোন কেন্দ্রে প্রার্থী হন। সেই দাবিকে মান্যতা দিয়ে এবং উত্তর- দক্ষিণের সমন্বয় বজায় রাখতেই রাহুল ওয়েনাদে প্রার্থী হচ্ছেন বলে যুক্তি ছিল কংগ্রেসের।
×