স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য বিদেশী কূটনীতিকদের সহযোগিতা চেয়েছে বিএনপি। রবিবার বিকেলে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে ঢাকায় ২১ দেশের দূতাবাসে কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠককালে বিএনপি প্রতিনিধিদল এ সহযোগিতা কামনা করেন। এ সময় তারা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে কারাগারে সুচিকিৎসা দেয়া হয়নি বলেও কূটনীতিকদের কাছে অভিযোগ করেন।
বিকেল ৪টা থেকে শুরু হয়ে প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে প্রথমেই বিএনপি মহাসচিব কূটনীতিকদের কাছে একটি লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এতে খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দেয়া, তার সুচিকিৎসা না হওয়ায় গুরুতর অসুস্থ হওয়া, একাদশ জাতীয় সংসদ ও চলমান উপজেলা নির্বাচনে ভোট কারচুপি এবং দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ সার্বিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ সময় কূটনীতিকরাও বিভিন্ন বিষয়ে বিএনপির অবস্থানের কথা জানতে চান। এক পর্যায়ে মির্জা ফখরুল বলেন, অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে তার সুবিধা অনুসারে কোন বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া প্রয়োজন। কিন্তু সরকার এখন পর্যন্ত সে সুযোগ দিচ্ছে না।
বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সাংবাদিকদের জানান, কূটনীতিকদের কাছে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা জানানো হয়েছে। তারা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। কূটনীতিকদের সঙ্গে আমাদের খোলামেলা কথা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গতবছর ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া মামলায় সাজা নিয়ে কারাবন্দী হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত বেশ ক’বার বিদেশী কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। প্রায় প্রতিমাসেই তাদের সঙ্গে একবার বৈঠক করে বিএনপি।
কূটনীতিকদের মধ্যে জাপান, নরওয়ে ও ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, তুরস্ক, জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও মরক্কোর উপ-রাষ্ট্রদূত, সুইজারল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত, পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার ও ভারতের সহকারী হাইকমিশনার উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ইইউ ও যুক্তরাজ্যসহ আরও ক’টি দেশের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের প্রতিনিধি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, নির্বাহী কমিটির সদস্য জেবা খান, মীর হেলাল, ইসরাক হোসেন প্রমুখ।
খালেদার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একে মাহবুবুল হক। বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এ কথা জানান। কারাগার থেকে সেখানে আসার পর খালেদার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে ভাল বলে তিনি জানন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া নিয়মিত ওষুধ খাচ্ছেন,অবস্থার উন্নতি হচ্ছে।
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে এসেছে কিনা জানতে মাহবুবুল হক বলেন, উনাকে মেডিক্যাল বোর্ড যেসব ওষুধ দিয়েছেন, তা উনি খাচ্ছেন। তবে ডায়াবেটিস পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসতে সময় লাগে, একদিনেই হয় না। তবে কোন সমস্যা নেই, এটা কন্ট্র্রোল হয়ে যাবে। উনার এখন ঘুমও ভাল হচ্ছে।
খালেদার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে- রিজভী ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে শীঘ্রই আন্দোলন শুরু হবে জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত খালেদা জিয়ার মুক্তি না হয়, গণতন্ত্রের মুক্তি না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নীচতলায় খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে মহিলা দল আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।