ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ১০:৩৬, ৫ এপ্রিল ২০১৯

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ বাঙালী সংস্কৃতির সেবক অহর্নিশ সংগ্রামী সন্জীদা খাতুন। ব্যক্তি আর বলা যায় না তাঁকে। প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছেন। ভাবতে ভাললাগে, এভাবে ৮৬ পেরিয়ে ৮৭তে পা রেখেছেন তিনি। ৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ছিল তাঁর জন্মদিন। ১৯৩৩ সালের এই দিনে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। জীবনের একেবারে শুরু থেকেই বেছে নিয়েছিলেন প্রগতির পথ। সারা জীবন এই পথে হেঁটে মুক্তির সন্ধান করেছেন। কবিগুরুর গানের বরেণ্য শিল্পী গবেষক। সংগঠক হিসেবেও পেয়েছেন ঈর্ষণীয় সাফল্য। আর এখন বাঙালীর প্রেমে গড়া প্রতিষ্ঠান ছায়ানটের সভাপতি। বার্ধক্যের কারণে বাসায় বেশি সময় কাটান। তবে কাজের মধ্যেই কাটে। সন্জীদা খাতুনের জন্মদিন তাঁর নিজেকে যতটা আলোড়িত করে তারও বেশি উদ্বেলিত করে ভক্ত অনুরাগীদের। বিকেলে তাই নিজের প্রাণপ্রিয় প্রতিষ্ঠান ছায়ানটে আসতে হয় তাঁকে। সেখানে অপেক্ষা করে ছিলেন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী শিক্ষক ও সুহৃদরা। ফুল দিয়ে সবাই তাঁকে স্বাগত জানান। অভিনন্দিত করেন। এদিন গেরুয়া রঙের ইস্ত্রি করা শাড়ি পরে ছায়ানটে এসেছিলেন সন্জীদা খাতুন। সুন্দর আঁচড়ানো চুল। কপালে চির চেনা টিপ। এক হাতে ছড়িটি ধরা। অন্য হাত স্বজনের হাতে। প্রিয়জনদের দ্বারা বেষ্টিত হয়েই নিজের কক্ষে প্রবেশ করেন। সেখানেও ভিড়। ফুল দেয়া নেয়া। ছবি তোলা। সবশেষে গানের ভাষায় নাচের ভাষায় তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান ছায়ানটের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। সব মিলিয়ে দারুণ কাটে জন্মদিনটি। বাংলা নববর্ষ প্রসঙ্গে আসা যাক। চৈত্রের ২২তম দিন আজ। তার মানে, পুরনো বছরকে বিদায় জানানোর সময়টি চলে এসেছে। একইসঙ্গে বাঙালী স্বাগত জানাবে ১৪২৬ বঙ্গাব্দকে। পহেলা বৈশাখে সারা দেশজুড়ে উৎসব হবে। অনুষ্ঠান আর অনুষ্ঠান। এখন চলছে জোর প্রস্তুতি। রাজধানী শহরের ব্যস্ততা ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। ঢাকায় বর্ষবরণ উৎসবের শুরুটা ছায়ানটের সঙ্গে হয়। বাঙালীর গর্বের এই প্রতিষ্ঠান গত কয়েক মাস ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছে। এবার ১০৫ জনের মতো শিল্পী সম্মেলক গানে অংশ নেবেন। সমবেত কণ্ঠে হবে ১২টি গান। একক শিল্পী থাকছেন ১৬ জন। বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে অপেক্ষাকৃত কম গাওয়া গানগুলোকে প্রাধান্য দেয়া হবে। রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের অপ্রচলিত গানগুলো বেছে নিয়েছেন আয়োজকরা। গাওয়া হবে সলিল চৌধুরী মুকুন্দ দাসের গানও। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের রিহার্সাল। এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে চলছে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি। কয়েকশ শিক্ষার্থী শিক্ষক নিয়মিত কাজ করছেন এখানে। কেউ ছবি আঁকছেন। কারও হাতে মাটির সরা। সেখানে তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে লোকায়তম জীবনের ছবি। মুখোশ তৈরি হচ্ছে। কাগজ কেটে বানানো হচ্ছে চমৎকার সব পাখি। এসব বিক্রি করে পাওয়া অর্থে আয়োজন করা হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রার প্রধান অনুষঙ্গ স্ট্রাকচারাল ফর্ম তৈরির কাজ চলছে সবুজ চত্বরে। বাঁশ দিয়ে কাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। পরে এগুলোকে কাগজ দিয়ে মুড়িয়ে রং করা হবে। তখনই বিভিন্ন প্রাণীর চেহারা পাবে। প্রস্তুতি নিয়ে নিয়মিতই কথা হচ্ছে অনুষদের ডিন নিসার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলছেন, বৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। ঝড়েরও আভাস আছে। সব আমলে নিয়েই কাজ করা হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সব কাজ শেষ হবে বলে জানান তিনি। বর্ষবরণ উৎসবের প্রাণ সাধারণ মানুষ। তারা এখন সময় দিচ্ছেন কেনাকাটায়। পহেলা বৈশাখে নতুন জামা কাপড় চাই। খোঁজ চলছে। ঢাকার দেশীয় পোশাকের দোকানগুলোতে ভিড় চোখে পড়ার মতো। আরও নানা প্রস্তুতি এখন চলছে। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর ‘নির্দেশ’ শুনে মারাত্মক হতাশ হয়েছে উৎসবপ্রিয় বাঙালী। এবারও বিকেল ৫টার মধ্যে সব অনুষ্ঠান শেষ করার ‘নির্দেশ’ দিয়েছেন আসাদুজ্জামান খান কামাল। ঢাকার সংস্কৃতিকর্মীরা বলছেন, আমরা তো কারও নির্দেশ মেনে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান করি না। এটি সার্বজনীন উৎসব। গোটা শহরের মানুষ উৎসবে যোগ দেয়। সবাই মিলে উদ্যাপন করে। এটির লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা মেনে নেয়া যায় না। এ প্রসঙ্গে কথা হচ্ছিল সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছের সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তা দেবে। এটা তাদের দায়িত্ব। কিন্তু ৫টার মধ্যে মানুষজনকে ঘরে ঢুকিয়ে তারা কি অর্জন করতে চায় আমরা বুঝি না। রবীন্দ্র সরোবরে জোটের অনুষ্ঠানের বেলায় এই নির্দেশনা মানা হবে না বলে জানান তিনি। একই রকম বিরক্তি প্রকাশ করেছেন দেশের বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা। তাদের মতে, এভাবে সরকার নিজের ক্ষতি করছে। পহেলা বৈশাখের জন¯্রােত আটকাতে চায় মৌলবাদীরা। একই কাজ সরকার কেন করবে? তাদের মতে, নিরাপত্তার দিক থেকে দেখলে এখন যথেষ্ট ভাল সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এর পরও কেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়াবাড়ি, কেন নির্দেশ দিতে আসেন? এটা অপমানজনক বলেও মন্তব্য করেন কেউ কেউ।
×